উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। উচ্চতর বিদ্যার ক্ষেত্রে শুভ ফল পাবে। কর্মপ্রার্থীদের ... বিশদ
সংসারীদের অনেক সুবিধা। ঠাকুর জানেন, বিশ মণ বোঝা ঠেলে তাকে ডাকতে হচ্ছে, তাই অল্পতেই সন্তুষ্ট। তিনি সকলের দরজায় কাঙাল হয়ে ঘুরছেন কিন্তু আমরা তাঁকে সেটুকুও দিতে পারি না। ঈশ্বরকে ডাকার কথা বললেই বলবে— দাঁড়াও, সময় হোক, তিনি না ইচ্ছা করলে তো হয় না, তিনি যেদিন ডাকবেন সেদিন হবে। কিন্তু আসলে সে-ই চায় না। তিনি ঠিকই দিয়ে যাচ্ছেন। সকলকেই সমানভাবে দিয়ে যাচ্ছেন। যে চাচ্ছে, যে চাচ্ছে না, সবাই একই আকাশের নীচে একই আলো, একই বাতাস পাচ্ছে। কার্পণ্য তাঁর নয়, কার্পণ্য আমাদের দিক থেকে, এটা বুঝতে হবে।
সংসারজীবনে কিভাবে চললে সিদ্ধি লাভ সম্ভব? যন সাধন তন সিদ্ধি— সাধনা করলে তবে তোসিদ্ধি লাভ হবে! এখন আমরা সংসারের জন্য চোখের জল সমস্ত খরচ করে ফেলি। ছোটবেলা পড়াশুনো, তারপর চাকরী, বিবাহ, ছেলেমেয়ে, এইভাবে বাড়তে বাড়তে জীবনের অর্ধেক সময় চোখের জল বেকার চলে যায়। আকুলআগ্রহ যদি হয় তাহলে উপায়ও মিলে যায়। সংসার করছো কর কিন্তু তার মোড় ফিরিয়ে আনতে হবে ভগবানের দিকে বা ইষ্টের দিকে। মনটাকে রাখতে হবে ঈষ্টমুখী ক’রে।যে তারামায়ের ভক্ত সে তারামায়ের প্রতি, যে বৈষ্ণব তার শ্রীকৃষ্ণের প্রতি, অথবা যার ইষ্ট নির্দিষ্ট ক’রে দিয়েছেন গুরু, তার ইষ্টের প্রতি মনটাকে রাখতে হবে।
যেমন সাধনা তেমন সিদ্ধি। মনকে ইষ্টমুখী করাই সাধনা। তাই প্রথম দরকার মোড় ফিরিয়ে দেওয়া। কথামৃতে যেটি আছে। সংসারের দিকে মন ছুটছে, চাহিদা জাগছে নানান রকমের। কিন্তু কেন? সব চাহিদা সব আকুলতা সংসারকে দেবে কেন? এটা তো ঠিক যে, আমরা কিছুটা অংশ অন্ততঃ ভগবানের দিকে দিতে পারি। কাজেই সেটা দিয়েই শুরু করতে হবে। “তোমায় আমি পাইনি যেন সে কথা রয় মনে।” সংসার ভগবানই দিয়েছেন, কাজেই করতে হবে। সংসার করতে গেলে কিছুটা মনের খরচ হবেই কিন্তু কিছুটা অংশ রাখতে হবে তাঁর জন্য। অন্ততঃ চার আনা তো রাখতে পার। ঠাকুর বারো আনা মন ভগবানকে দিতে বলেছেন, কিন্তু বারো আনা না পার, চার আনা তো পার। না হয় এদিকটা কমই দিলে, কিন্তু দিতে হবে।
মনের ভেতর— ‘তোমায় যে পাইনি’ এই একটা বেদনা কাঁটার মত যেন খচখচ করে। প্রত্যেকটি কাজের ফাঁকে ফাঁকে ভাবতে হবে— সময়টা চলে গেল, তাঁকে ডাকতে পারলাম না। এই যে পারছিনা, এই যে ইচ্ছা তাঁকে ডাকার, অথচ পারলাম না,—এটাতেই ভগবৎ চিন্তা সব সময় এসে যাচ্ছে। কাকে ডাকতে পারছি না? ভগবানকে! এখানে স্বাভাবিক ভাবেই ভগবানের কথা চলে এল। সেটাও স্মরণ মননের পর্যায়ে পড়ে গেল। চেষ্টা করবে কাঁদবার। ইচ্ছা ক’রে, চেষ্টা ক’রে চোখের জল আনবে। যেমন চিমটি কেটে বেদনা সৃষ্টি করা হয়, তেমনি চেষ্টা ক’রে কাঁদবে। হয়তো এতে হাসি ঠাট্টা হবে। কিন্তু উদ্দেশ্যটা তো সৎ— মনের ভেতরে জোর ক’রে বেদনা জাগানোর চেষ্টা। প্রার্থনা করা দরকার। ঠাকুর শিখিয়েছেন এই প্রার্থনা— “হে ঠাকুর, তুমি তেষ্টাও জাগাও, সব জোগাড় করেও দাও, তোমার যত আছে সব কর।” যা যুগ, চারপাশের সমস্যায় চেষ্টাও জাগে না, তেষ্টাও জাগে না। তাই সেটির জন্যও প্রার্থনা করতে হবে। মন বসুক আর না বসুক, জোর ক’রে চেষ্টা করে যেতে হবে। নামসংকীর্তনের সময় খুব উচ্ছ্বাস দেখা যায়। হয়তো সাময়িক কিংবা লোক দেখানোই। ঐ সাময়িক উত্তেজনা, উদ্দাম নৃত্য তারও লাভ আছে। এমনি না এলেও বসে ভেতর থেকে আকুলতা জাগানোর চেষ্টা। সেই চেষ্টাটাই সাধনা। দিনের পর দিন এটা করতে করতে শুভ সংস্কারের সৃষ্টি হবে। মানুষই তো শুভ অশুভ সংস্কারের সৃষ্টি করে তার আচরণের দ্বারা, তার কর্মের দ্বারা। তাই চেষ্টা করতে করতে শুভ চেতনা শুভ সংস্কারের সৃষ্টি হয়ে যায়। সেটাই এগিয়ে নিয়ে যাবে।