পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
এনসিইআরটি কেন্দ্রের অধীন একটি স্বশাসিত সংস্থা। দেশজুড়ে প্রায় ২৭ হাজার স্কুলের কয়েক লক্ষ সিবিএসই পড়ুয়া তাদের সিলেবাস মেনে পড়াশোনা করেন। অনেক ক্ষেত্রে আইসিএসই এবং কোনও কোনও রাজ্যবোর্ডও এই পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে। সংশোধিত অযোধ্যায় ইতিহাস পড়ে এরা যে এক অর্ধসত্য জানবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যবইতে অযোধ্যা নিয়ে আগে চার পাতা বরাদ্দ ছিল। এখন তা কমে দু’ পাতা হয়েছে। এই সংশোধিত পাঠ্যপুস্তকে অযোধ্যার ইতিহাস বলতে গিয়ে লালকৃষ্ণ আদবানিদের রথযাত্রা, ১৯৯২ সালে ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসে করসেবকদের ভূমিকা, সাম্প্রদায়িক অশান্তি, তৎকালীন উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়া, বিজেপি সরকারকে আদালতের ভর্ৎসনা, বিজেপি সরকারের অনুশোচনা মূলক বিবৃতি বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়েছে দুটি খবরের কাগজের ছবি। যার একটির শিরোনাম ছিল, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য কল্যাণ সিং সরকারকে বরখাস্ত করা হল। অপরটি ছিল, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ি বলেছেন, অযোধ্যা হল বিজেপির সবচেয়ে বড় ভুল। এসব কিছুই বাদ দিয়ে নতুন বইতে শুধু লেখা হয়েছে, ১৯৮৬ সালে ওই তিন গম্বুজের সৌধের তালা খোলার পর হিন্দুরা মনে করেছিল, রামকে নিয়ে তাঁদের আবেগকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, মুসলিমরা চেয়েছিল, ওই স্থাপত্যের ওপর তাদের অধিকার কায়েম করতে। শেষমেশ ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ ওইস্থানে রামমন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেন। তার ভিত্তিতেই অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ হয়েছে। মসজিদ তৈরির জন্য আলাদা জমিও দেওয়া হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, অযোধ্যাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ইতিহাসের ভাষ্যকেও বদলে ফেলা হয়েছে! এই বই পড়ে জানা যাবে না যে, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা কীভাবে ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত একটি স্থাপত্যকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল।
ইতিহাস বলে, যে কোনও দেশের স্বৈরাচারী শাসকের প্রধান টার্গেট থাকে ‘ইতিহাস’। বিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ বহুত্ববাদের এই দেশকে ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ বানাতে চায়। সেই লক্ষ্যেই প্রধানত ইতিহাসের নির্মম কাটাছেঁড়া চলছে। এর আগে স্কুলপাঠ্য থেকে মুঘল যুগের ইতিহাস বাতিল করা হয়েছে। দশম শ্রেণির বিজ্ঞান থেকে বাদ গিয়েছে ডারউইনের বিবর্তনবাদ, পিরিয়ডিক টেবিল। বাদ দেওয়া হয়েছে মুসলিম কবি ফৈয়জ আহমেদ সৈয়জের দুটি কবিতা। একাদশের সমাজতত্ত্বের সিলেবাস থেকে বাদ পড়েছে গুজরাত দাঙ্গার কথা (বলা বাহুল্য, গুজরাত দাঙ্গার সময়ে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি)। দ্বাদশের ইতিহাস থেকে বাদ গিয়েছে মহাত্মা গান্ধী হত্যা বিষয়ক একাধিক অধ্যায়। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সিলেবাস থেকে বাদ দিয়েছে সারে যাঁহা সে আচ্ছা-র রচয়িতা মহম্মদ ইকবালের জীবনী, মহাশ্বেতাদেবীর গল্প। মোদি সরকার শিক্ষায় গৈরিকীকরণের অভিযোগে বিদ্ধ। তা নতুন কিছু নয়। প্রকৃত ইতিহাস বদলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে নাম বদলের হিড়িক। এইভাবেই হয়তো একদিন ‘ইন্ডিয়া’ নামটিও বদলে দেবে শাসকপক্ষ! সেই আশঙ্কাও দেখা দিচ্ছে। মোদিবাহিনীর কাছে কোনও কিছুই অপ্রত্যাশিত নয়।