পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
মেডিক্যাল কলেজ এবং ছাত্রভর্তির আসন সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। তবু দেশের প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। এজন্য বহু পড়ুয়া ঝুঁকি নিয়েও নিকটবর্তী একাধিক দেশের নিতান্তই সাধারণ মানের মেডিক্যাল কলেজে পড়তে চলে যাচ্ছেন। ভারতজুড়ে যে শতাধিক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ চলছে, সেগুলিতে সরকারি কোটার বাইরে এমবিবিএস ডিগ্রি নিতে বিপুল অর্থ খরচের চাপ নিতে হয়। পড়ুয়া এবং পরিববারগুলির এই অসহায়তার সুযোগ নিতে মুখিয়ে থাকে রকমারি অসাধু চক্র। বেনামে পরীক্ষায় বসা, প্রশ্ন ফাঁস, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, এমনকী কাউন্সেলিংয়ের মতো শেষ ধাপেও জালিয়াতির অভিযোগ বার বার উঠেছে। সবার চোখ খুলে দিয়েছিল ‘ব্যাপম’ নামক প্রবেশিকা কেলেঙ্কারি, যার মধ্যে সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় ছিল প্রি-মেডিক্যাল টেস্ট (পিএমটি)। মধ্যপ্রদেশের এই স্ক্যাম ২০১৩ সালে সামনে এলেও, তদন্তে প্রকাশ, সেটা চলেছিল গত শতকের শেষ দশক জুড়ে! সারা দেশ জানে, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কত ঝড় বয়ে গিয়েছে এবং উথাল-পাথাল হয়েছে। তবু দেশ শোধরায়নি, সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, বরং মেডিক্যালে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই যেন বিপদটি বহুবর্ধিত এবং বিকেন্দ্রিত হয়েছে!
ভোটের বছর ২০২৪-এও বাদ গেল না মেডিক্যাল ভর্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ। সর্বভারতীয় অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা ‘নিট’-এর রেজাল্টে এবার বড়সড় বেনিয়ম বা দুর্নীতি হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন পরীক্ষার্থীদের অনেকে। তার প্রধান কারণ, প্রথম স্থানাধিকারীর সংখ্যাতেই ‘বিশ্ব রেকর্ড’—৬৭! সাম্প্রতিক অতীতে একের বদলে দুই বা তিনজন পর্যন্ত ফার্স্ট হয়েছেন দেখা গিয়েছে, তাই বলে ৬৭ জন! এছাড়া কিছু পরীক্ষার্থীকে ঢালাও ‘গ্রেস মার্কস’ প্রদানের মতোও গুরুতর অভিযোগ আছে। সংগত প্রশ্ন উঠেছে, হরিয়ানার বাহাদুরগড় সেন্টারের ছ’জন পরীক্ষার্থী ১০০ শতাংশ নম্বর পেলেন কোনও জাদুতে? অন্যদিকে, ভালো পরীক্ষা দিয়েও খারাপ রেজাল্টের ধাক্কা নিতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন কেউ কেউ। ৪ জুন ফল প্রকাশের পর একাধিক পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যার রিপোর্টও সামনে এসেছে। অনেকের বক্তব্য, এরপর এনটিএ’র মতো জাতীয় সংস্থাকে দিয়ে মেধা যাচাইয়ের আর কী অর্থ, মাহাত্ম্য রইল? স্বভাবতই দেশজুড়ে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। সত্য উদ্ঘাটনে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তও দাবি করেছে একাধিক সংগঠন। ডিএমকে, কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিভিন্ন দলের জাতীয় নেতৃত্বও এই অনাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। বঞ্চনার শিকার পরীক্ষার্থীদের পাশে থাকার বার্তাও দেওয়া হয়েছে তাঁদের তরফে। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নস্যাৎ করেও, ছয়টি পরীক্ষা কেন্দ্রে অনিয়ম ঘটে থাকার সম্ভাবনা মেনে নিয়েছে এনটিএ। সংস্থাটি জানিয়েছে, গ্রেস মার্কস প্রদান এবং ২৪ লক্ষের মধ্যে হাজার দেড়েক ‘সন্দেহভাজন’ পরীক্ষার্থীর রেজাল্ট খতিয়ে দেখবে তারা। এজন্য একটি কমিটিও গঠিত হয়েছে। নিট-এর পবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও শুরু করেছে শীর্ষ আদালত। গোটা ঘটনার দায় স্বীকারসহ এই গুরুতর সমস্যার সুরাহা মোদি সরকারকেই করতে হবে। একজনও মেধাবী পরীক্ষার্থী যেন বঞ্চনা, প্রতারণার শিকার না হন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও চাই, প্রয়োজনে এনটিএ’কেও সমঝে দেওয়া দরকার। কারণ এ কোনও মামুলি মামলা নয়, এর সঙ্গে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা এবং জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্নটিই ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।