পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
কিন্তু এই পথ যে কুসুমাস্তীর্ণ নয়, বরং পদে পদে কণ্ঠকাকীর্ণ হবে—তা শুরুতেই টের পাচ্ছেন ৫৬ ইঞ্চি ছাতি। তাঁর এনডিএ জোটের শরিক নীতীশ কুমারের জেডিইউ, চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি, একনাথ সিন্ধের শিবসেনা, চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি দল গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকসহ একাধিক মন্ত্রিত্বের দাবি তুলে মোদির উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র, অর্থ, প্রতিরক্ষা ও বিদেশমন্ত্রকের মতো ‘বিগ-ফোর’ মন্ত্রকের দাবিও রয়েছে। সরকার গঠন করতে শরিকদের এই চাপ জোড়াতালি দিয়ে মিটিয়ে ফেলতে পারলেও সহজে রেহাই পাবেন না মোদি। কারণ এই শরিকরা ইতিমধ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, সেনায় নিয়োগে অগ্নিবীর প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছে। দাবি উঠেছে বিহারের মতো গোটা দেশে জাতিগণনারও। চন্দ্রবাবু এবং নীতীশ তাঁদের নিজেদের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহারের জন্য ‘বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের’ও দাবি তুলেছেন। ঘটনা হল, বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার কথা বলা হয়েছে। অগ্নিবীর প্রকল্প চালু হয়ে গিয়েছে বিগত মোদি সরকারের আমলে। পাশাপাশি জাতিগণনারও প্রবল বিরোধী গেরুয়া শিবির। অতএব শুরুতেই শরিকদের এই দাবি মেনে নেওয়া যেমন মোদি-অমিত শাহদের পক্ষে কঠিন, তেমনই দাবিগুলি উপেক্ষা করলে জোটে ফাটল ধরার আশঙ্কা থেকে যাবে। এমনিতেই নীতীশ ও নাইডুর দলের ঘনঘন জোটবদলের রেকর্ড রয়েছে। সুতরাং আপাতত এনডিএ জোটের স্বার্থে মোদির উপর পূর্ণ আস্থার কথা জানালেও নিকট বা অদূর ভবিষ্যতে দুর্বল বিজেপিকে পথে বসিয়ে এই শরিকরা সমর্থন তুলে নেবে না—এই মুচলেকা দিতে পারবেন না নীতীশ, চন্দ্রবাবুরা। তাই বলা যায়, একটা সরু দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করে কোনওসময় ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়বেন না মোদি, বা তাতে পতন ঘটবে না সরকারের—এমন কোনও গ্যারান্টি নেই। সেক্ষেত্রে পরমাত্মার ‘দূত’কে মাঝপথে বানপ্রস্থে যেতে হতে পারে।
এটা যদি ঘরের চাপ হয় তবে ‘বাইরে’ ইন্ডিয়া মঞ্চ নামক বাঘের মুখে যে পড়তে হবে মোদিকে—তার ইঙ্গিত মিলেছে ইতিমধ্যে। এখনও নতুন সরকার তৈরি হয়নি, তার মধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে সামান্য দূরে থাকা ‘ইন্ডিয়া’ হুঙ্কার ছাড়তে শুরু করেছে। দ্বিতীয় মোদি সরকারের শেষবেলায় নির্বাচনী বন্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। এবার বৃহত্তর শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী জোট। গত ১ জুন বুথফেরত সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশের পর দেখা যায় শেয়ার বাজারের সূচক কার্যত শিখর স্পর্শ করেছে। কিন্তু ৪ জুন ফল প্রকাশের পরেই সেই শেয়ার বাজারে মারাত্মক ধস নামে। এতে প্রায় পাঁচ কোটি সাধারণ লগ্নিকারীর ৩০ লক্ষ কোটি টাকা লোকসান হয়। উল্টোদিকে মোদির আশীর্বাদধন্য কয়েকজন বড় শিল্পপতি লাভ করে নেন। ঘটনা হল, ভোটের মধ্যে মোদি-শাহরা শেয়ার বাজারে লগ্নি করতে সাধারণ মানুষকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বিপুল আসনে জিতে ফের ক্ষমতায় আসছে মোদি সরকার। অতএব লগ্নি করলে তার সুফল মিলবে। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদির দল যে এককভাবে ফিরছে না সেই রিপোর্ট দিয়েছিল গোয়েন্দারা। তবু সাধারণ মানুষকে শেয়ার বাজারে লগ্নির পরামর্শ দিয়ে অথৈ জলে ফেলেছেন মোদিরা। এটা একটা কেলেঙ্কারি এবং জুমলা। এই ঘটনায় যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) তদন্তের দাবি তুলেছেন রাহুল গান্ধী। এটা অবশ্য শুরু। নতুন সরকারকে পদে পদে নাজেহাল করারও নাকি পরিকল্পনা করছে ‘ইন্ডিয়া’ জোট। ফলে ঘর ও বাহির মিলে সাঁড়াশি চাপে পড়েছেন মোদি। তাই বলা যায়, খেলা হবে নয়, খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে।