শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
সেখানে যে ধরনের আন্তরিকতা এবং স্বচ্ছতা দেখা যায়, সরকারি উদ্যোগের ভিতরে অনেক সময়ই তার অনুপস্থিতি আমাদের বেদনাহত করে। অথচ সরকারি কাজের দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা ওই কাজের জন্যই দায়বদ্ধ ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাঁরা কোনওভাবেই স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন বা বেগার খাটছেন না। তাঁরা এর জন্য সরকারের কাছ থেকে মোটা টাকা বেতন এবং নানাবিধ ভাতাও পেয়ে থাকেন। এঁদের মধ্যে একদল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারি পদাধিকারী। সরকারি প্রকল্প বা দায়িত্ব রূপায়ণে আর থাকেন সরকারি কর্মী-অফিসারগণ, যাঁরা প্রতক্ষ্যভাবে সরকারি প্রশাসনের অঙ্গ। গরিবের জন্য সরকারি কাজে গাফিলতি এবং অস্বচ্ছতার দায় এই দু’পক্ষের। এঁদের মধ্যে কাউকেই আইন আলাদাভাবে রেয়াত করতে পারে না। এই যে দু’পক্ষের কথা বলা হল, তাঁদের মধ্যে একটা ‘চেকস আন্ড ব্যালান্সেস’ সম্পর্ক রয়েছে। একপক্ষ ক্ষমতার অপব্যবহার করলে অন্যপক্ষের দায়িত্ব তা রুখে দেওয়া। কিন্তু তার পরেও সরকারি কাজের বহু ক্ষেত্রে লাগাতার এই অন্যায় ঘটে চলেছে। আইনের চোখে তাই দু’পক্ষই অপরাধী। আইনের দরবারে দু’পক্ষই জবাবদিহি করতে বাধ্য। বিচারে সাজা হলে সেটা ভোগ করাই দোষীদের নিয়তি।
প্রতিটা প্রাকৃতিক বিপর্যের পর লাখো লাখো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন। বাড়ি, অমূল্য নথিপত্র, টাকা, গয়না, খাবারদাবার প্রভৃতি এক লহমায় নষ্ট হয়ে যায়। বেশি দূরের কথা নয়—একবছর আগে উম-পুনের সময় হয়েছে, এবার হয়েছে যশের ধাক্কায়। আর্ত অসহায় মানুষগুলোর কান্নায় বাংলার আকাশ-বাতাস এখনও ভীষণ ভারী হয়ে রয়েছে। তার মধ্যেই দুঃসংবাদ, কাঁথি পুরসভার গুদাম থেকে লক্ষাধিক টাকার ত্রিপল লোপাট হয়ে গিয়েছে! ওই অঞ্চলের গোটা দশেক ওয়ার্ডের নিরাশ্রয় মানুষকে সাময়িক মাথাগোঁজার ঠাই করে দেওয়ার জন্যই সেগুলো রাখা ছিল। অভিযোগ উঠেছে, প্রাক্তন এক মন্ত্রী এবং প্রাক্তন এক পুর চেয়ারম্যানের নির্দেশে এই হাপিস কাণ্ডটি ঘটেছে। বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন পুরসভারই দুই কর্মী। আরও অবাক ব্যাপার, লোপাটের সময় ঘটনাস্থলে দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন একটি কেন্দ্রীয় বাহিনীর দুই জওয়ান! ত্রিপল পাচারে অভিযুক্ত প্রাক্তন মন্ত্রী মশায় যখন ক্ষমতার কুর্সিতে তখন তাঁর সেচ ও জলসম্পদ দপ্তর জড়িয়েছিল আর এক কেলেঙ্কারিতে। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক কীর্তিমান পুরুষ ‘দাদার দপ্তরে’ চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে দেদার টাকা তুলেছেন। বেকার যুবকদের কাছ থেকে ওই বাবদ লুটপাটের অঙ্কটা নাকি ১০ কোটির কাছাকাছি! সমুদ্র ও সন্নিহিত অঞ্চলগুলো সবসময় যেন বিপদকে সঙ্গে নিয়েই চলে। সেই বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষার মূল দায়িত্ব এই দপ্তরটার। আর ভূত যদি সেই সর্ষের মধ্যেই নিরুপদ্রব যাপনের বন্দোবস্ত করে ফেলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্য কী হতে পারে? এই বাঁকা পথে ক’জন চাকরি পেয়েছেন আমরা জানি না। তবে, গভীর প্রশ্ন রয়ে যায়, অসততাই যাঁদের চাকরির ভিত্তি তাঁরা দীর্ঘ জীবন সততার সঙ্গে চাকরি করবেন? এটা বিশ্বাসযোগ্য কিংবা কোনওভাবে যুক্তিগ্রাহ্য মনে হয় কি? বাঁধের ধারে যাঁদের বসতি তাঁদের ফি বছর যন্ত্রণার কারণটা এর মধ্যেই নিহিত বোধহয়। কাঁথিতে ত্রিপল লোপাট এবং সেচ ও জলসম্পদ দপ্তরে চাকরি কেলেঙ্কারিতে দোষীদের চিহ্নিত করার কাজ রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই শুরু করেছে। সেটা যেন নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে এগয় এবং প্রকৃত দোষীদের পাকড়ে বিচারের জন্য আইনের দরবারে হাজির করতে সফল হয় প্রশাসন। নিকৃষ্ট মানুষগুলোর দৃষ্টান্তমূলক সাজা না-হলে এই ধরনের অপরাধে কোনওদিন লাগাম পড়বে না।