শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
এখন তারা নেমে গিয়েছে অতি গরিবের পংক্তিতে। আরও সহজ করে বলা যায়, ভারতে অতি গরিবের সংখ্যাটা ২৩ কোটি বেড়ে গেল।
মোদি সরকার কী বলবে, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ, কিন্তু পাথুরে বাস্তবটা হল—সব মিলিয়ে ভারতে দারিদ্রসীমার নীচের মানুষের সংখ্যাটা ৪৫-৫০ কোটির মতো হয়ে গেল। একটা বিষয় ভেবে দেখার এই যে, রাশিয়াসহ গোটা ইউরোপের ৪৪টি দেশের মোট জনসংখ্যা ৭৫ কোটিরও কম। ভারতে গত কয়েক বছরে মধ্যবিত্ত শ্রেণি প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। নিম্ন মধ্যবিত্তরা নেমে এসেছে গরিবের স্তরে। তাই গরিব ও অতি গরিব মিলিয়ে আজ ভারতের যে জনসংখ্যা, অনুমান করা যায়, তা গোটা ইউরোপের মোট জনসংখ্যার অধিক।
এই লজ্জা ভারত কবে কাটিয়ে উঠবে তা কারও জানা নেই। এটা ভুবনায়নের যুগ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য একান্তভাবেই বাজারের উপর নির্ভরশীল। ভারতের মতো অন্যতম বৃহৎ বাজার বসে যাওয়ার অর্থ, সারা পৃথিবীর বাণিজ্যে মন্দা চিহ্নিত হয়ে যাওয়া। তাই হাজার কমিপিটিশন থাকা সত্ত্বেও কোনও দেশই আজ ভারতের অর্থনীতির পতন চায় না।
যদি কেউ চায় সেটা নিতান্তই এক আত্মঘাতী কামনা। তাই ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলকেও উদ্বেগে রেখেছে। বেশিরভাগ দেশ চায়, ভারত দ্রুত এই দুর্দিন কাটিয়ে উঠুক। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে
মান্য অর্থনীতিবিদরা বৎসরাধিক কাল যাবৎ ভারত সরকারকে একটাই পরামর্শ দিয়ে চলেছেন, সাধারণ মানুষের হাতে পয়সার জোগান
বাড়াও। তাদের উপর থেকে কিছু খরচের বোঝা কমাও। তাহলে তাদের খরচ করার ক্ষমতা বাড়বে। সাধারণ মানুষ যত বেশি খরচ করবে, উৎপাদন ও পরিষেবা ক্ষেত্রে চাহিদা বাড়বে তত বেশি। চাষিরাও কৃষিপণ্যের বেশি দাম পাবে। তাহলে সার্বিকভাবে উৎপাদন এবং কর্মসংস্থানে গতি আসবে। এই চেইন সিস্টেমে ভর করে অর্থনীতিও দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবার জন্য শক্তি সঞ্চয় করবে।
প্রসঙ্গটা নরেন্দ্র মোদি কিংবা নির্মলা সীতারামনের সামনে বারবার রেখে একটাই জবাব পাওয়া গিয়েছে, বিষয়টি সম্পর্কে তাঁরা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। ‘নিন্দুকদের’ পরামর্শের প্রতীক্ষা করা তাঁদের কাজ নয়। মোদি সরকার তার অনেক আগেই প্রয়োজনীয় ‘প্যাকেজ’ নিয়ে অর্থনীতির পুনর্গঠনের কাজ সাফল্যের সঙ্গে করে চলেছে। কিন্তু বাস্তবটা কী তাই? মোদি সরকারের প্যাকেজ মানেই এমএসএমই-র জন্য কিছু ‘অবাস্তব’ লোন স্কিম। কৃষক এবং অন্যান্য গরিবদের অর্থ সাহায্যের জন্য একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করা হলেও বেশিরভাগ রাজ্যে সেসব সঙ্কীর্ণ রাজনীতির বলি হয়েছে। বিশেষ করে বিরোধী পার্টির সরকারকে টাইট দিতে গিয়ে গরিবদের সঙ্গেই চরম বঞ্চনা করেছেন মোদিরা। এমনকী, যে ভ্যাকসিন না নিলে করোনার সঙ্গে যুঝে ওঠা অসম্ভব, সেটাও বিনামূল্যে পাওয়ার নিশ্চয়তা কেন্দ্র রাখেনি। ওইসঙ্গে সমানে চলেছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। আন্তর্জাতিক বাজারের তোয়াক্কা না করে খেয়ালখুশি মতো বাড়ানো হচ্ছে তেলের দাম। বেশিরভাগ শহরে এক লিটার পেট্রলের দাম আজ ১০০ টাকার বেশি। পেট্রলের দাম গত একমাসে ‘মাত্র’ ১৭ বার বাড়ানো হয়েছে! মোদি সরকারের সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক বইকি। ডিজিলের দামও সাধারণের পকেট ফাঁঁকা করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। সরকার মনে রাখেনি, যখন বেশিরভাগ জায়গায় লোকাল ট্রেন বন্ধ তখন তেলের দামে এই তেজিভাবের পরিণাম কী। সব্জি, মাছ, মাংস থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম চড় চড় করে বাড়বেই। একইসঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে রান্নার গ্যাসেরও দাম, কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ফর্মুলা ছাড়াই। রেশন মারফত কেরোসিন বণ্টন বন্ধ করে দিতে পারলেই খুশি হয় মোদি সরকার। তবু যা যৎসামান্য দিচ্ছে তার দামেও অগ্নিসংযোগ করেছেন নির্মলা। কেরোসিনের স্টোভে রান্না করার সুযোগটাও থাকছে না। নির্মম বাস্তবটা হল, উজ্জ্বলা যোজনার ক্রেডিট কুড়নো হয়ে গিয়েছে, মোদি এবার গরিব মানুষকে শুকনো লতাপাতা, কাঠ-ঘুঁটের মান্ধাতার যুগে ফেরত পাঠানোর আয়োজন সম্পূর্ণ করতে চলেছেন।