শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
করাপশান পারসেপশন ইনডেক্সে (সিপিআই) ভারতের স্কোর ৪০/১০০ এবং র্যাঙ্ক ৮৬/১৮০। ভারত সরকার বিভিন্ন সময়ে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইতে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো পারফর্ম্যান্স মালদ্বীপের। মায়ানমার, আফগানিস্তান, পূর্ব তিমোর এবং চীন, নেপাল ও দক্ষিণ কোরিয়ার অগ্রগতিও আন্তর্জাতিক মহলের নজর কেড়েছে। সেখানে ভারতের জন্য কোনও সুখবর নেই। ১৯৮৫। খরা কবলিত কালাহান্ডি পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী মন্তব্য করেছিলেন, ‘সরকার যে টাকাটা খরচ করে তার মাত্র ১৫ পয়সা সত্যিকার বেনিফিসিয়ারির কাছে পৌঁছয়।’ পরবর্তীকালে আধার সম্পর্কিত এক রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর এই ঐতিহাসিক মন্তব্যটি উদ্ধৃত করে। বেঙ্গল ল্যাম্প, ভুসি, ট্রেজারি, পিএল অ্যাকাউন্ট, স্ট্যাম্প থেকে ফ্লাইওভার প্রভৃতি অজস্র দুর্নীতির সাক্ষী পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে এই উক্তি কখনওই অতিরঞ্জিত মনে হয়নি। বরং তার পরেও রেশন, একশো দিনের কাজ, চাকরি থেকে বাঁধনির্মাণ অবধি আরও কিছু দুর্নীতি চলতে থাকে প্রায় ধারাবাহিকভাবে। যশ পর্বে সামনে এসেছে দীঘা-শঙ্করপুর অঞ্চলে বাঁধনির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি। একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিবারের ছত্রছায়ায় সংঘটিত এই কেলেঙ্কারি সরকারের ভাবমূর্তিতে কালি লেপে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অবশ্য মুখ বুজে নেই। তাঁর প্রশাসন এর একটা হেস্তনেস্ত করার জন্যই উদ্যোগী হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে দুর্নীতি-মুক্ত ভারত নির্মাণের জন্য কেন্দ্র এবং সমস্ত রাজ্য সরকারকেই আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে। দেখতে হবে কোনও জায়গায় কোনও শাঁসালো পদে যেন ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়-বন্ধু/ পরিচিত-পছন্দের লোকেরাই অন্যায়ভাবে বসে না পড়ে। যদি কেউ ইতিমধ্যেই বসে থাকে তবে পত্রপাঠ তাদের বিদায় করে দিতে হবে। স্বজনদের সৌজন্যে সরকারের যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা তাদের কাছ থেকেই আদায় করার ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর স্বজন এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক—উভয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হওয়াটাও জরুরি। একইসঙ্গে চিরতরের জন্য দূর করতে হবে লাল ফিতের দৌরাত্ম্য, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সরকারি নিয়ম-নীতির যাবতীয় অস্বচ্ছতা। তার জায়গায় আনতে হবে ইউজার ফ্রেন্ডলি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখান থেকে নাগরিকরা সমস্ত কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং দ্রুত পেতে পারেন। সরকারি কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়ার ১০০ শতাংশই এই নিয়মে হওয়া দরকার। ‘ছোট ছোট কাজ’ অজুহাতে কোনও ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া ভুলই হবে। কাজের বরাত নিয়মমাফিক দেওয়াটাকেই যথেষ্ট গণ্য করলে হবে না। নির্মিত কাজের দায়বদ্ধতাও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বা নির্মাণ সংস্থাকে স্বীকার করতে হবে। কাজ অনুযায়ী, তিন থেকে দশ বছরের সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে। তার মধ্যে অস্বাভাবিক কোনও ক্ষতি চিহ্নিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থা সেই কাজ নিজ খরচে অবিলম্বে করে দিতে বাধ্য থাকবে। সব কাজ এরকম কঠিন শর্তেই করাতে হবে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিরপেক্ষভাবে সেই কাজের মান যাচাই করে যেতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় এই রোগ সারানো যাবে না। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তকমা নিয়ে দশক, শতক পেরতে থাকবে—‘সকল দেশের রানি’ হয়ে ওঠার স্বপ্ন থেকে যাবে অধরাই।