শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
কিন্তু সাতবছর পর আজ দেশবাসীর ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে, মোদির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন কি একথা এখনও অন্তর থেকে বিশ্বাস করেন? আজকের নির্মম বাস্তবটা এই: আর্থিক বৃদ্ধির হার ভয়ঙ্করভাবে মুখ থবুড়ে পড়েছে। লেবার পার্টিসিপেশন রেট নিম্নমুখী। সাম্প্রতিক অতীতের অধিকাংশ ত্রৈমাসিকে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার কমে গিয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গিয়েছে বেকারত্বের হার। বিরাট ধাক্কা খেয়েছে রাজস্ব সংগ্রহ। রাজকোষ ঘাটতি সাম্প্রতিক বছরগুলির মধ্যে সর্বাধিক। তার ফলে রাজ্যগুলির অনেক ন্যায্য প্রাপ্য মেটাতে পারছে না মোদি সরকার। বিশেষ করে জিএসটির ক্ষতিপূরণ মেটাতে একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা হয়ে গিয়েছে নির্মলার কোষাগারের। বিপুল পরিমাণ ধারদেনা করেও থই মিলছে না। যেমন শুধু পশ্চিমবঙ্গই জানিয়েছে, তাদের দশমাসের পাওনা আটকে রেখেছেন নির্মলা, যার পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এরপর আরও যে বড় মানবিক দিকটা অবহেলিত হচ্ছে তা হল, দেশবাসীর সকলকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার সংগতি কেন্দ্রের নেই। এমনকী, করোনা ভ্যাকসিনকেও করমুক্ত করার অবস্থায় নেই এই সরকার। যেখানে কেন্দ্রের খয়রাতি পৌঁছবে না সেখানে রাজ্যগুলোকে চড়া দামে এই ভ্যাকসিন কিনতে হবে। আবার যাঁরা কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারেরই কৃপালাভে ব্যর্থ হবেন, তাঁদের এই ভ্যাকসিন গাঁটের কড়ি খরচা করেই কিনে নিতে হবে। দেশের বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক এখনও একটা ডোজ পাননি। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ৫ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত হিসেব: ২২ কোটি ৭৮ লক্ষ ৬০ হাজার ৩১৭ ডোজ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ জন প্রতি দু’টো ডোজের হিসেবে সাড়ে ১১ কোটি মানুষেরও টিকাকরণ শনিবার পর্যন্ত সম্পূর্ণ হয়নি। সরকারের হিসেবে, ১৮ ঊর্ধ্ব নাগরিকের মোট সংখ্যা ১০১ কোটি ৭০ লক্ষ।
এর থেকেই অনুমান করা যায় যে ভারতে টিকাকরণ কর্মসূচি এখনও অথৈ জলে। সমস্ত বাস্তববাদী এবং বিবেকসম্পন্ন দেশ করোনা টিকাকরণকে ন্যাশনাল প্রোগ্রাম হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাদের দেশের সকলের টিকাকরণই এই মুহূর্তে সব দেশের এক নম্বর অগ্রাধিকার। সেখানে ভারত ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে, এমনকী ছোট ছোট প্রতিবেশীদের থেকেও, দু’টো কারণে: অদূরদর্শী নেতৃত্ব এবং মানবিকতার ভয়ানক অভাব। এই সরকারের বাস্তববোধ এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী কত ন্যূন তা টের পাওয়া গেল, আরও একটি পদক্ষেপে। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা মেগা সাবমেরিন প্রকল্প অনুমোদন করল মোদি সরকার। একঝাঁক ডুবো জাহাজ নির্মাণ খাতে শুক্রবার ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল! ওইদিন ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিলের বৈঠকের পর নৌবাহিনীর প্রস্তাবে ছাড়পত্র দিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সরকারের দাবি, স্বাধীন ভারতের সামরিক ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে আধুনিক একটি প্রকল্প। দূর ভবিষ্যতে জলপথে বহিঃশত্রুর সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিহত করার মতো সামরিক প্রস্তুতি নিশ্চয় থাকবে। কিন্তু সেটা কখনওই নাগরিকদের এই মুহূর্তের চরম বিপদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। উপযুক্ত চিকিৎসা এবং সামান্য ভ্যাকসিনের অভাবে যখন দেশে প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে নিরীহ নিরপরাধ মানুষের প্রাণ চলে যাচ্ছে, যাঁদের মধ্যে আছে কত সম্ভাবনাময় প্রতিভাও, তখন এই সামরিক প্রকল্পের জন্য সরকারের অতি তৎপরতা আমাদের দুঃখিত করে। সব মিলিয়ে দেশকে বিরাট আতান্তরেই ঠেলে দিয়েছেন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ তথা ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর উদ্গাতা নরেন্দ্র মোদি।