আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
ভ্যাকসিন দিতে প্রথম ধাপে এক কোটি ডোজ কোভ্যাকসিন ও কোভিশিল্ডের বরাত দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সোমবার পর্যন্ত এসেছে সামান্য কয়েক লক্ষ। প্রায় প্রতিদিন এ রাজ্যে অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছে। অভিযোগ, তা মোকাবিলায় কেন্দ্রের তরফে প্রয়োজনীয় সাহায্য তো মিলছেই না, উল্টে রাজ্যের প্লান্ট থেকে অক্সিজেন চলে যাচ্ছে বিজেপি শাসিত রাজ্যে। অপ্রতুলতা রয়েছে জীবনদায়ী ওষুধের ক্ষেত্রেও। তাই চাহিদার কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার চিঠি দিলেও তা এখনও অধরা মাধুরী হয়ে রয়েছে। প্রতিদিনের এই অসম ও কঠিন লড়াইয়ে অন্তত কিছুটা হলেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও বেসরকারি সংস্থা। কিন্তু করোনা মোকাবিলায় সমস্তরকম চিকিৎসা সরঞ্জামের উপর থেকে কর তুলে নিলে সাহায্যের পরিমাণটা অনেকটাই বাড়ে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে করমুক্তির আবেদন করেছে সেইসব স্বেচ্ছাসেবী বেসরকারি সংস্থা। দাবির যৌক্তিকতা বিচার করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে তাদের জন্য সেই আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ভাবনায় যৌক্তিকতা পরিষ্কার। করোনা মোকাবিলার যাবতীয় চাহিদা মেটানোর কথা কেন্দ্রীয় সরকারের। তারা সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে কারও সাহায্যের বিশেষ প্রয়োজন হয় না। কিন্তু মোদি সরকার তা করছে না। ফলে বিভিন্ন রাজ্যে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করতে বেসরকারি উদ্যোগের উপর কিছুটা হলেও ভরসা করতে হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য সরঞ্জামকে কর ছাড় দিয়ে এই সঙ্কটের দিনে তাদের একটু সুবিধা করে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এ হল অন্যরকম কেন্দ্রীয় সরকার! এরা নিজেরা পারবে না, তাদের কাজ অন্য কেউ করলেও তাকে সাহায্য করবে না। রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির জবাব দিয়েছেন মোদির অনুগত পারিষদ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তাও আবার চিঠির জবাব চিঠি দিয়ে নয়, এল ট্যুইটারে। প্রধানমন্ত্রী ভোটের প্রচারে দফায় দফায় বঙ্গ সফরে আসতে পারেন, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির জবাব নিজে দেওয়ার সময় পান না। এরই নাম সৌজন্য? দীর্ঘ ফিরিস্তি দিয়ে অর্থমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, জিএসটি থেকে আদায়ের অর্ধেক পায় রাজ্য। অর্থাৎ সব মিলিয়ে প্রতিষেধকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য জিএসটি বাবদ আয়ের ১০০ টাকার মধ্যে ৭০ টাকার বেশি নাকি পায় রাজ্য। তর্কের খাতিরে তাঁর এই হিসাব সত্য ধরে নিলেও একটি বিষয় পরিষ্কার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সরকারের আর্থিক দুরবস্থার মধ্যেও নানাক্ষেত্রে ক্ষতি মেনে নিতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু ১০০ টাকার মধ্যে এক টাকা ছাড়তেও নারাজ কেন্দ্র। দুঃসময়ে এই হল তাদের ভূমিকা! একটা দুটো নয়, ১৫টি ট্যুইট করে নির্মলা বুঝিয়ে দিয়েছেন টিকা ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামে জিএসটি বজায় থাকবে। তাঁর যুক্তি, অভ্যন্তরীণ সরবরাহ এবং বাণিজ্যিক আমদানির ক্ষেত্রে টিকার ৫ শতাংশ এবং ওষুধ অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের ১২ শতাংশ জিএসটি তুলে দিলে এগুলির দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব কার? কেন কেন্দ্রীয় সরকার টিকা ওষুধের দাম বেঁধে দিচ্ছে না? বাজেটে তো কেন্দ্র টিকাকরণের জন্য বরাদ্দ করেছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তাহলে কেন বাজেটে বরাদ্দ সেই টাকা থেকে দেশীয় উৎপাদকদের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে না? বোঝাই যাচ্ছে, এই বিষয়গুলি কেন্দ্রীয় সরকারের ভাবনা চিন্তার মধ্যেই নেই। সমগ্র দেশবাসীকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা এখনও পর্যন্ত তারা ঘোষণাই করে উঠতে পারল না! এমনকী করোনা মোকাবিলায় বাজেট বরাদ্দ টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত ঠিক কত শতাংশ টাকা খরচ করেছে তাতেও ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছে।
আসলে মুখে এই সরকার সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষার কথা বলে থাকে। কাজে তার উল্টো। মানুষ কীভাবে একটু সুরাহা পাবেন তার দিশা দেখাতেও ব্যর্থ মোদি সরকার। তাই ভ্যাকসিনের উপর কেন আমদানি শুল্ক বসানো হচ্ছে—সেই গুরুতর প্রশ্নটি তুলেছেন তৃণমূলের এক সাংসদ। অতিমারী রুখতে কর ছাড়ের পাশাপাশি সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে সকলের জন্য বিনামূল্যে টিকাকরণ। একটু মানবিক হোক সরকার। ইতিমধ্যেই কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতার দরুন আন্তর্জাতিক মহলে তাদের মুখ পুড়েছে। তাই শুধু সাফাই দিয়ে কি আর মুখ রক্ষা হবে?