আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
তাই বিশেষ সতর্ক পদক্ষেপই করতে হবে ভারতকে। গুরুত্ব দিতে হবে দেশের বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শকে। বিদেশি মিডিয়ার হুঁশিয়ারিকেও উপেক্ষা করা হবে মূর্খামি। বিশেষ করে ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল জার্নাল এবং সায়েন্স ম্যাগাজিনগুলির প্রতিপাদ্যকে গ্রহণ করতে হবে খোলা মনে। সংক্রমণের প্রথম পর্বে আমরা যখন আত্মতুষ্ট—ভাবছি, করোনার বিপদ ভারতের জন্য অন্যদের মতো বড় নয়—তাঁরা কিন্তু সতর্কই করেছিলেন। বলেছিলেন, অচিরেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে ভারতকে। এবার বিশেষভাবে সতর্ক করেছে ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের এই ইন্ডিপেন্ডেন্ট গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষায় প্রকাশ, আগামী ১ আগস্ট নাগাদ ভারতে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াবে অন্তত ১০ লক্ষ। অন্য একাধিক দায়িত্বশীল সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞ আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ভারত এখনই সতর্ক না-হলে করোনার তৃতীয়, এমনকী চতুর্থ বা পঞ্চম ঢেউ আছড়ে পড়াও রোধ করা সম্ভব হবে না।
সেক্ষেত্রে দেশজুড়ে দ্রুত টিকাকরণের বিকল্প নেই। ভারতে টিকাকরণের সূচনা হয় ১৬ জুন। ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যাপারে শুরুতে অনেকের মধ্যে দ্বিধা, অনীহা, সর্বোপরি ভয়ও ছিল। এই দলে ডাক্তারসহ মেডিক্যাল প্রফেশনের কিছু মানুষও ছিলেন। ফলে, প্রথম দিকে ভ্যাকসিনের চাহিদা বেশি ছিল না। এমনকী, বেশকিছু জায়গায় ভ্যাকসিনের ডোজ অস্বাভাবিক হারে নষ্ট হয়েছে। কোথাও ৪ শতাংশ তো কোথায় ৯ শতাংশ, ১৮ শতাংশ, এমনকী ২৪ শতাংশ! এর দায় সরকারও অস্বীকার করতে পারে না। ভারতের একটা বড় অংশের মানুষ এখনও নিরক্ষর। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ যাঁদের হয়েছে তাঁদেরও একটা বড় অংশের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনা দুর্বল। এছাড়া আছে সঙ্কীর্ণ রাজনীতির নষ্টামি। সব মিলিয়ে কুসংস্কারের শিকড় ভারতে এখনও বেশ গভীরে। এমন পরিবেশে টিকাকরণের আবশ্যকতা নিয়ে যে-ধরনের প্রচারাভিযান প্রয়োজন ছিল, তাতে ছিল বিরাট ঘাটতি। কিন্তু মৃত্যুভয় বড় জিনিস। বিরামহীন মৃত্যুর মিছিল দেখে অল্পদিনেই মানুষের সংবিৎ ফিরেছে। টিকা নিতে এখন প্রায় সকলেই রাজি। শুধু রাজিই নয়, মানুষ হন্যে হয়েই ঘুরছেন হাসপাতালে হাসপাতালে। রাত জেগে লাইন দিচ্ছেন। অতি বৃদ্ধরাও রয়েছেন ওই দলে। দুর্ভাগ্য এই যে, তার পরেও অনেকে বাড়ি ফিরছেন টিকা না পেয়েই। সেকেন্ড ডোজ পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে সারা দেশে। টিকার জোগান নিয়ে তুমুল বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি। শুরু করেও অনেক জায়গায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে ১৮-৪৪ বর্ষীয়দের টিকাদান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা রুখতে হার্ড ইমিউিনিটি তৈরি জরুরি। আর সেটা করতে হবে দ্রুত টিকাকরণের মাধ্যমে। ভারতের জনসংখ্যা ১৩৫ কোটি ধরলে ৯৪-৯৫ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দিতেই হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সাড়ে ১৭ কোটি ডোজও দেওয়া সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ প্রত্যেকের দু’টি ডোজ হিসেবে ৯ কোটি নাগরিকের টিকাকরণও এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তাই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা, এই গতিতে চললে হার্ড ইমিউনিটিতে পৌঁছতে ভারতের লাগবে সাড়ে তিনবছর! ভোল বদলাচ্ছে, ভাইরাস। প্রতি ১০০ জন ভারতীয়ের মধ্যে ২১ জন সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে টিকাকরণের লজ্জার বাস্তবটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বলতেই হবে, ভ্যাকসিনের সর্ববৃহৎ উৎপাদক দেশ ভারতের মানুষের এই হেনস্তা, এই দুর্ভাগ্য প্রাপ্য নয়। বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের কথা এখনও শুনুন, শোনা প্র্যাকটিস করুন ভারতেশ্বর নরেন্দ্র মোদি। এটা আপনাকে শুনতেই হবে। কার্যকরী পদক্ষেপ করতে হবে। ভারতবাসীকে আপনি করুণা করবেন এমনটা নয়, এটা ভারতবাসীর অর্জিত অধিকার।