আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
সবটা অবশ্য শান্তিতে হয়নি। ভোটের ঢাকে কাঠিপড়া থেকেই আন্দোলিত হয়েছে বাংলা। দলবদলের নোংরামি। প্রার্থী হওয়া, না-হওয়া নিয়ে হুমকি। পাল্টা হুমকি। ভোটারদের প্রভাবিত করার অন্যায় চেষ্টা। রেকর্ড পরিমাণ বেআইনি টাকার লেনদেন। ঘুষ প্রদান। অস্ত্র আমদানি। অস্ত্রের ঝনঝনানি। জাতপাতের লড়াই। সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির নষ্টামি। কুবাক্যের স্রোত। চমকাচমকি থেকে মারামারি। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। নির্বাচন কমিশনের অতি সক্রিয়তা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বাড়াবাড়ি। পুলিস-প্রশাসনের একাংশের দুর্বলতা, ব্যর্থতা। গুলিতে অথবা সংঘর্ষের কিছু নিরীহ ভোটারের মৃত্যু। ভোট করার দায়িত্বকর্তব্য পালন করতে গিয়েও নানাভাবে মারা গিয়েছেন কিছু ভোটকর্মী, রাজনৈতিক কর্মী। এমনকী একাধিক প্রার্থীও মারা গিয়েছেন করোনায়। আর একটা সত্যও স্বীকার করে নিতে হবে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত বাংলার বুকে এতটা তীব্র হওয়ার কারণ এই ভোট। ভোটের প্রচার এবং ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে কমিশন তার ভূমিকা পালনে ভীষণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। করোনাকালের স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগের ব্যাপারে কমিশনের প্রচেষ্টা মোটেই সন্তোষজনক ছিল না। উদাসীন ছিল কেন্দ্রীয় সরকারও। সবচেয়ে হতাশ ছিল চরম আগ্রাসী প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা। তার মূল্য বাংলার মানুষকেই দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে খুব মসৃণ পথে এই উত্তরণ ঘটেনি। এই যে ক্ষয়ক্ষতি হল, তা কোনও একপক্ষের নয়। দল মত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব ধরনের মানুষকেই এর দাম দিতে হয়েছে। গণতন্ত্রের এটাও একটা দিক। কিন্তু এর জন্য মুষড়ে পড়ার কোনও সুযোগ নেই। গণতন্ত্র শুধু সামনে এগনোরই শিক্ষা দেয়।
এবার যে সরকার বসতে চলেছে সেটা কোনও দলের বা রঙের হবে না। হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বাংলার সব মানুষের। যাঁরা পক্ষে ভোট দিয়েছেন। যাঁরা বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। ভোট দিয়েছেন নোটায়। এমনকী যাঁরা ভোটদানের লাইনে দাঁড়াননি অথবা দাঁড়াতে পারেননি। সরকারকে সবার জন্য কাজ করতে হবে। অগ্রাধিকার দিতে হবে করোনা মোকাবিলায়। কাজটি করতে হবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। সবার আগে থামাতে হবে মৃত্যুমিছিল। দ্রুত লাগাম পরাতে হবে করোনা সংক্রমণে। ভোট অবশ্যই একটা যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে জয়-পরাজয় ইতিমধ্যেই নির্ধারিত। এবার একমাত্র যুদ্ধ চিহ্নিত হোক করোনা। এই যুদ্ধে তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস, বাম, অতি বাম, ধনী, দরিদ্র, শিক্ষিত, হিন্দু, মুসলমান, দলিত নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে লড়তে হবে। লড়াইটা করতে হবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। এখানে সামান্যতম ফাঁকির সুযোগ নেই। বুকের ভেতরে জমুক আনন্দ উল্লাস। আমরা সবাই জানি, মানুষ আজ বড় অসহায়। জয়ের আবির হাতেই থাক আপাতত। এই হাত প্রসারিত হোক দুর্গতের সেবায়। অন্যথায় ভোটের জন্য এত শ্রম, এত এত ত্যাগের মূল্য বিফলে চলে যাবে। সুখের কথা এই যে, এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঘোষণা করেছেন, তাঁর নতুন সরকারের প্রথম ও প্রধান কাজ হবে করোনা মোকাবিলা। তাঁর দলের বিপুল জয় সত্ত্বেও আপাতত বিজয় মিছিল নয়। মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি সকলকেই আহ্বান জানিয়েছেন।