আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে গবেষক বিশেষজ্ঞদের সর্তকতা ছিলই। অক্সিজেন ও শয্যা নিয়ে গত নভেম্বরেই সংসদীয় কমিটি কেন্দ্রকে সতর্ক করেছিল। বাংলা দখলের নেশায় মত্ত মোদি-অমিত শাহ বাহিনীর করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতিতে যে ঘাটতি ছিল তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল দেশজুড়ে আজকের এই মৃত্যুমিছিল। ভ্যাকসিন তৈরিতে দেশের গবেষকদের সাফল্যকেও এই সরকার নিজের সাফল্যের ঝুলিতে ভরতে আত্মনির্ভর ভারতের জয়গান গেয়েছে। তাই যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সুনামির আকারে দেশে আছড়ে পড়ল তখনই স্পষ্ট হল অক্সিজেন ও হাসপাতালে শয্যার করুণ অবস্থাটি। সরকারি তরফে ব্যবস্থাপনার মাত্রাহীন এই গাফিলতি বহু মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল। এমন নিষ্ঠুর নির্মম সরকার দেশের মানুষ অতীতে দেখেনি। তাদের ব্যর্থতায় করোনা সংক্রমণে বিশ্বরেকর্ড করে ফেলল ভারত। এই তাহলে মোদির উন্নত ভারত? এমন সঙ্কট যে আসতে পারে তা অজানা ছিল না। তাহলে কেন অক্সিজেন, জীবনদায়ী ওষুধ ভেন্টিলেটর-সহ অন্যান্য অত্যাবশ্যক সামগ্রীর জোগানে নজর দেওয়া হল না? কেন ছিল না আগাম প্রস্তুতি? পরিকাঠামো তৈরি থাকলে আজকের এই বিভীষিকা, বিনাচিকিৎসায় গণহারে মৃত্যু হয়তো দেখতে হতো না। ক্ষমতার লোভে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে দেশের শাসক। এই ক্ষমাহীন অপরাধের দায় তাদের বহন করতেই হবে। শুধু অক্সিজেন উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেই দায় এড়ানো যাবে না। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনির এই নষ্টামি এবার বন্ধ হওয়া দরকার। অক্সিজেন প্লান্ট তৈরির বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। খুব তড়িঘড়ি এর ফল পাওয়া যাবে না। প্লান্ট বসাতেই হয়তো কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে। তারপর হবে উৎপাদন। ফলে অক্সিজেন উৎপাদন শুরু হতে কয়েক মাস গড়ালে অবাক হওয়ার নয়। ততদিন কীভাবে পরিস্থিতি সামলাবে কেন্দ্র? তা স্পষ্ট করা দরকার। এনিয়ে দিশা দেননি প্রধানমন্ত্রী। তাই মোদির অক্সিজেন প্লান্টের বার্তা তাঁর অন্যান্য প্রতিশ্রুতির মতোই দৃষ্টি ঘোরানোর আরও একটি প্রচেষ্টা কি না বলা শক্ত। তবে পিএম কেয়ার্সকে মানুষের ‘কেয়ারের’ জন্য প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। কারণ ভ্যাকসিন আর অক্সিজেন ইস্যুতে ইতিমধ্যেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। জনস্বার্থরক্ষার ব্যর্থতাকে আড়াল করে তিনি ভাষণ দিয়ে গেলেন এতকাল। আর মোদি-সহ তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা ব্যস্ত থাকলেন বঙ্গ-সফরে। অক্সিজেন উৎপাদনের প্রয়োজনকে গুরুত্ব না দেওয়ার ফল এখন ভুগতে হচ্ছে। তথ্য বলছে, গত জানুয়ারিতে ২৬২টি অক্সিজেন প্লান্ট গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র? তার জন্য বরাদ্দও হয়েছিল অর্থ। অথচ ২৬২টির মধ্যে এ-পর্যন্ত তৈরি হয়েছে মাত্র ৩৩টি। কেন এত কম অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি হল তার জবাবদিহি কেন্দ্রকেই করতে হবে। এত হাহাকার দেখার পর নতুন ৫৫১টি প্লান্ট তৈরির কথা জানালেন তিনি। এরও যে কী ভবিষ্যৎ তা লাখ টাকার প্রশ্ন।
তাই প্রতিশ্রুতি ছেড়ে এবার অন্তত চাহিদার কথা ভেবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক কেন্দ্র। বাগাড়ম্বরে বিভ্রান্তি বাড়াচ্ছে। আত্মনির্ভর ভারতের গলাবাজি দেশের দুঃসময়ে মানায় না। তা ছেড়ে মানুষকে বাঁচানোর লড়াইয়ে নামুক দেশের সরকার। গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচিত সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ হল বিপদের দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সেই দায়িত্বটি ভুলে গেলে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়েই বিদায় নিতে হবে। সেই দিনটি সুখকর হবে না।