আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
এবারের বাংলার ভোট সব অর্থেই ছিল অভূতপূর্ব। জমি ধরে রাখা আর জমি দখলের লড়াইয়ে শুরু থেকেই আছড়ে পড়েছে হেভিওয়েটদের মেগা শো। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, যোগী আদিত্যনাথ, স্মৃতি ইরানি ... পদ্ম ফোটাতে তালিকা শেষ হওয়ার নয়। অন্যদিকে, কার্যত একা দুর্গ রক্ষায় ছিলেন ‘দিদি’। তাও আবার প্রচারের মাঝপথেই প্রায় অচল পা নিয়েই রাজ্যের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এমন প্রায় দেড়মাস ধরে আটপর্বের ভোট কখনও দেখেনি বাংলা। দেখেনি এরকম মেরুকরণের রাজনীতি, অবিরত কুৎসাচর্চা, বঙ্গসংস্কৃতির অবমাননা, নির্বাচন কমিশনের লাগামছাড়া ‘দাদাগিরি’, কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাপাদাপি। এত করেও প্রথম থেকে শেষদফা পর্যন্ত রক্তপাত ঠেকানো যায়নি। তবে শেষ তিনদফায় করোনা সংক্রমণই সব আলো শুষে নিয়েছে। এমন এক নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে বুথ ফেরত সমীক্ষা অন্তত কিছুটা হলেও চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। বহু আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও সমীক্ষায় এগিয়ে মমতাই। কিন্তু মমতার শত আপত্তি সত্ত্বেও ৩৪ দিন ধরে আট দফার নির্বাচনের জেরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কাবু করে ফেলল বাংলাকে। কোভিড পর্বে রেকর্ড সংখ্যক প্রাণহানি ঘটল। আদালতের তোপের মুখে পড়ে ষষ্ঠদফা থেকে কোভিড বিধি কার্যকর করতে শেষে নড়েচড়ে বসল নির্বাচন কমিশন! যখন সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। কার্যত সংক্রমণ সুপার স্প্রেডার হয়ে উঠল এই আটদফার ভোটে। যার জেরে বঙ্গবাসীর রাতের ঘুম ছুটেছে আশঙ্কায়, আতঙ্কে। ভোটের পর স্বাভাবিক নিয়মেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেড় লক্ষাধিক জওয়ান ফিরে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোটপর্বে আসা ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করা নেতা-নেত্রী ভোটপাখিদের আনাগোনাও বন্ধ হবে। কিন্তু বঙ্গে থেকে যাচ্ছে করোনার ভয়াবহ আতঙ্ক। করোনা মোকাবিলা করাই এখন বাংলার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অধিকাংশ সমীক্ষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হ্যাটট্রিকের ইঙ্গিত, দু’-তিনটি সমীক্ষায় অবশ্য ভিন্ন মত। তা নিয়ে চর্চার অন্ত নেই।
জোড়াফুল বা সিঙ্গলফুল যে-ই ক্ষমতায় আসুক, নিঃসন্দেহে সেটা অনেকের কাছে খুশির খবর হবে। নির্বাচনে হারজিত আছে। কারও মুখে হাসি ফুটবে, কারও বা স্বপ্ন অধরা থাকবে। যেই জিতুক, ভোট রাজনীতির উত্তাপ এবার অন্তত কমা দরকার। শান্তিপ্রিয় বঙ্গবাসী আর কোনও অশান্তি চায় না। তাই ভোটে জিতে উচ্ছ্বাসের বাঁধভাঙা আনন্দের জেরে এমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় যার জেরে সংক্রমণ আরও বাড়ার সুযোগ পায়। সেদিকেও নজর রাখাটা জরুরি। সব অর্থেই একেবারে অন্যরকম পরিস্থিতিতে এবার বাংলার বিধানসভা ভোট হল। ভোটগ্রহণ পর্বে ব্যাপক মাত্রায় লঙ্ঘিত হল কোভিড বিধি। কোভিড বিধি মেনে নির্বাচন করার যে চ্যালেঞ্জ কমিশনের সামনে ছিল তাতে কি তারা সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে পারল? প্রশ্ন উঠছে দিকে দিকে। প্রশ্ন উঠছে, অন্য রাজ্য থেকে নেতা কর্মীদের বঙ্গে আনাগোনা নিয়েও। এবার অন্তত দেশের প্রথম সারির নেতারা একটু দায়িত্ববোধেরও পরিচয় রাখুন। বিপর্যয়ের সময়ে রাজনীতির কূটকচালি ছেড়ে রাজ্যকে সহযোগিতা করুন। প্রত্যাবর্তন বা পরিবর্তন যাই হোক না কেন সংযত থাকতে হবে সব পক্ষকে। গণতন্ত্রকে সম্মান জানিয়ে মানুষের রায়কে মেনে নিতে হবে। মাথায় রাখতে হবে ভোটে জয় পরাজয়ের চেয়ে মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি।