সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
(চামোরো সালভা, সুহের-২) (ক্রিজো)
সোমনাথ বসু : গোকুলাম এফসি’র কাছে হেরে এমনিতেই মন খারাপের মেঘ দানা বেঁধেছিল ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকদের হৃদয়ে। বাড়ি ফেরার পথে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো তাঁদের দিকে ধেয়ে এসেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহন বাগান অনুরাগীদের টিপ্পনি। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের এক নম্বর গেটের সামনে অপেক্ষারত সবুজ-মেরুন জনতার চিৎকারে বেশ অস্বস্তিতেই পড়তে দেখা গেল ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকদের। আসলে ঐতিহ্যমণ্ডিত ডুরান্ড কাপের সেমি-ফাইনালে লাল-হলুদের বিদায় নিজেদের ম্যাচের আগে বাড়তি উদ্দীপনা জুগিয়েছে মোহন বাগানকেও। বুধবার দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ৩-১ গোলে পাহাড়ি দলটিকে হারিয়ে প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠল মোহন বাগান। জোড়া গোল করে ম্যাচের নায়ক অবশ্যই ভিপি সুহের। ৬৯ মিনিটে রোমারিওর পরিবর্তে তাঁকে নামানোটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। আগামী শনিবার যুবভারতীতেই মোহন বাগান চ্যালেঞ্জ সামলাবে গোকুলাম এফসি’র। বলাই বাহুল্য, বাংলার সম্মান এখন পালতোলা নৌকার কাছেই।
রিয়াল কাশ্মীরের বিরুদ্ধে ৪-৪-২ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন মোহন বাগান কোচ কিবু ভিকুনা। তিন ডিফেন্ডারে দলকে খেলাতে তিনি পছন্দ করেন। কিন্তু কর্তাদের পরামর্শেই নিজের পছন্দের ছক বদলাতে বাধ্য হন স্প্যানিশ কোচ। পক্ষান্তরে রিয়াল কাশ্মীর প্রথম একাদশে রেখেছিল কোচের ছেলে ম্যাসন রবার্টসনকে। কিন্তু তাঁর নাম ডুরান্ড কাপের জন্য নথিভুক্ত করেনি তারা। তাই মোহন বাগানের আপত্তিতে ম্যাসনকে বাদ দিতে হয়।
পাসিং ফুটবল খেলেই রিয়াল কাশ্মীরের রক্ষণে চিড় ধরানো ছিল মোহন বাগানের লক্ষ্য। মিডফিল্ড জেনারেল হোসেবা বেইতিয়ার বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল মাঠে উপস্থিত হাজার পাঁচেক সমর্থককে আনন্দ দিয়েছে। পাসিং সেন্স, ছোট জায়গার মধ্যে বুদ্ধিদীপ্ত টার্নিং, চমৎকার বল কন্ট্রোল এই স্প্যানিশ মিডিওটির সম্পদ। আদর্শ ফুটবলার আন্দ্রে ইনিয়েস্তার মতো তিনিও পছন্দ করেন খেলা তৈরি করতে। কিন্তু সুরাবুদ্দিন-শেখ সাহিলদের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। শেষ কুড়ি গজে ভিকুনা-ব্রিগেড ভুল পাস খেলায় রক্ষণ সামলাতে সুবিধা হয় লাভডে-হামাদদের। ১৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া বেইতিয়ার অনবদ্য শট ম্যাচের প্রথম উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তবে বাঁ দিকে শরীর ছুঁড়ে তা রুখে দেন রিয়াল কাশ্মীরের দুর্গপ্রহরী লাচেনপা। এই পর্বে রিয়াল কাশ্মীর রক্ষণ জমাট রেখে প্রতি-আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছে। তবে ডেভিড রবার্টসনের দলের পারফরম্যান্সে ফিটনেস ও বোঝাপড়ার অভাব ছিল সুস্পষ্ট। প্রথমার্ধে তারা একটি মাত্র হাফ চান্স পেয়েছে। ২৩ মিনিটে সুভাষ সিংয়ের দূরপাল্লার শট ক্রসপিসের উপর দিয়ে উড়ে যায়। মোহন বাগানের প্রাণভোমরা হোসেবা বেইতিয়াকে নিষ্প্রভ রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বাজি আর্মান্দকে। কিন্তু তিনি ডাহা ফেল। রেফারির বদান্যতায় বাজি লাল কার্ড দেখেননি। ৩৫ মিনিটে নাওরেমের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে দুরন্ত টার্নিংয়ে গোলমুখ খুলে নিয়েছিলেন বেইতিয়া। কিন্তু তাঁর শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে বিরতির মিনিট চারেক আগে কাঙ্ক্ষিত গোল পায় সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। বাঁ দিক থেকে তোলা গুরজিন্দর কুমারের সেন্টার ভেসে আসে বক্সে। তাতে মাথা ছোঁয়াতে লাফান ফ্রান মোরান্তে ও রিয়াল কাশ্মীরের ডিফেন্ডার ফারহান গনি। বল মোরান্তের মাথা ছুঁয়ে চলে আসে অরক্ষিত চামোরো সালভার কাছে। ডান পায়ের জোরালো ভলিতে জাল কাঁপাতে ভুল হয়নি মোহন বাগানের স্প্যানিশ স্ট্রাইকারটির (১-০)।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ৫১ মিনিটে দ্বিতীয় গোল পেতে পারত মোহন বাগান। ডানদিক থেকে সুরাবুদ্দিনের পাস থেকে নেওয়া রোমারিওর শট বাইরে যায়। এই পর্বের প্রারম্ভিক পর্বেও খেলার নিয়ন্ত্রণ ছিল মোহন বাগানের কাছেই। পাসিং ফুটবল খেলে রক্ষণাত্মক প্রতিপক্ষকে তারা তেমন আক্রমণ গড়ার সুযোগ দেয়নি। তবে আধা ফিট বেইতিয়াকে ৭৩ মিনিটে তুলে নিয়ে মুনোজকে নামানোর পর রিয়াল কাশ্মীর চাপ বাড়ানোর সুযোগ পায়। সংযোজিত সময়ের তৃতীয় মিনিটে গোলশোধ করে রিয়াল কাশ্মীর। লাভডের ক্রস থেকে হেডে দলকে সমতায় ফেরান ক্রিজো (১-১)। তাঁর মার্কার ছিলেন গুরজিন্দর কুমার। গোলরক্ষক শঙ্কর রায় অযথা কেন বেরিয়ে এলেন তা’ও বোঝা গেল না। অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই অবশ্য দ্বিতীয় গোল মোহন বাগানের। ফ্রান গঞ্জালেজ মুনোজের বাড়ানো কুড়ি গজের ‘জেম অব আ থ্রু’ খুঁজে নেয় সুহেরকে। তারপর ডান পায়ের কোনাকুনি শটে বিপক্ষ গোলরক্ষককে হার মানান তিনি (২-১)। উল্লেখ্য, এই মরশুমে তিনিই মোহন বাগানের প্রথম স্বদেশি স্কোরার। এর মিনিট তিনেক পরে দিনের সেরা সুযোগটি হারান চামোরো সালভা। সুহেরের পাস পেয়ে একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে তিনি হার মানাতে পারেননি বিপক্ষ গোলরক্ষককে। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের শেষ দিকে শঙ্কর রায়ের ভুলে গোল হজম করতে হত বাগানকে। রিয়াল কাশ্মীরের ভিকি মিতেইয়ের পুশ গোলে ঢোকার আগে ফিরিয়ে দেন ফ্রান মোরান্তে। দ্বিতীয়ার্ধে সুহেরের শট পোস্টে ধাক্কা খায়। তবে ১১২ মিনিটে দলের তৃতীয় গোলটিও তাঁর। মুনোজের পাস থেকে মাপা শটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন সুহের (৩-১)।
মোহন বাগান: শঙ্কর রায়, আশুতোষ মেহতা, ফ্রান মোরান্তে, কিমকিমা, সুরাবুদ্দিন, হোসেবা বেইতিয়া (মুনোজ, ৭৩ মিনিট), শেখ সাহিল, নাওরেম (ইমরান ১০৬ মিনিট), রোমারিও (সুহের, ৬৯ মিনিট) ও চামোরো সিলভা।