সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
বুধবার ম্যাচের শেষে সল্টলেক স্টেডিয়ামের ভিআইপি গেট দিয়ে পাশাপাশি বাড়ির পথে হাঁটছিলেন ইস্ট বেঙ্গলের কিছু আধা কর্তা, কোয়েসের কর্মীরা। কোয়েস কর্তাদের দিকে ইঙ্গিত করে সেই কর্তারা এমন টিপ্পনি কাটছিলেন, যাতে কান পাতা দায়! শতবর্ষ পেরিয়ে যাওয়া এই প্রাচীন টুর্নামেন্ট থেকে ১৬ বারের বিজয়ীরা ছিটকে যাওয়ার পর লাল-হলুদ সদস্য-সমর্থকরা ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন। স্পর্ধার শতবর্ষ, সাহসের শতবর্ষ লেখা লাল-হলুদ জার্সিগুলো ক্ষোভে ফুঁসতে ফুঁসতে ক্রমেই দূরে মিলিয়ে গেল। যদিও এদিন সল্টলেক স্টেডিয়ামে ইস্ট বেঙ্গলপ্রেমীদের উপস্থিতি হাতে গোনা যায়। তাঁদের যত বিপ্লব ফেসবুকের ওয়ালে! দলটা দর্শনে রাজকীয় হলেও মাঠের খেলার সেই তিমিরেই রয়েছে। ডুরান্ড কাপের গ্রুপ লিগে তেমন চ্যালেঞ্জ সামলাতে হয়নি ইস্ট বেঙ্গলকে। সেমি-ফাইনালে তুলনায় বিদেশি ফুটবলার সমৃদ্ধ গোকুলামের মতো শক্ত প্রতিপক্ষ পড়তেই ইস্ট বেঙ্গলের যাবতীয় জারিজুরি শেষ। অথচ দক্ষিণের দলটি ধারে-ভারে তেমন আহামরি নয়। স্রেফ গোকুলামকে জয় উপহার দিয়ে গেলেন মেহতাব সিংরা। সঙ্গে তাঁর মুকুটে যুক্ত হল একটি লাল কার্ড। কোচ আলেজান্দ্রোর ব্যাকফোর নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষার মাসুল দিতে হল দলকে। বোরহাকে রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রেখে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে ক্রেসপি ও মেহতাব সিং খেলানোর মানে কী?
নির্ধারিত সময়ে খেলা গড়িয়ে তখন ৯৪ মিনিট। বক্সে গোকুলামের হেনরি কিসেকাকে হাত ধরে টেনে মাটিতে ফেলে দিলেন মেহতাব। যার কোনও প্রয়োজন ছিল না। ম্যাচ যত শেষের দিকে এগোয়, ডিফেন্ডারকে ততই মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। মেহতাব এই সব গুলে মেরে দিয়ে মোক্ষম ভুলটি করলেন। তাঁর যাবতীয় লড়াই এই একটি ভুলেই শেষ। ফিফা রেফারি তেজাশ নাগভেঙ্কর পেনাল্টির নির্দেশ দিলে গোকুলামের ক্যারিবিয়ান স্ট্রাইকার মার্কাস জোসেফ স্পট কিক থেকে গোল করে সমতা ফেরান। মার্কাসের নামের পাশে ৯ গোল জ্বলজ্বল করছে। যদিও এই গোলটি ছাড়া ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর এই ফুটবলারকে মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার আগে ম্যাচের ১৮ মিনিটে ইস্ট বেঙ্গলের রাইট ব্যাক সামাদ আলি মল্লিক প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে আচমকা উঁচু শটে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। গোলের আগে ডানদিক থেকে বিদ্যাসাগর সিংয়ের ফ্লোটার চাপড়ে সামনে ফেলেন গোকুলাম গোলরক্ষক। সেই বল ফলো করে সামাদের শট মহম্মদ রশিদের পায়ে লেগে গতিপথ পরিবর্তন করে দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়িয়ে যায় (১-০)।
ম্যাচের শেষ লগ্নে মেহতাব লাল কার্ড দেখার পর এক্সট্রা টাইমের পুরো ৩০ মিনিট ইস্ট বেঙ্গল দশ জনে খেলে। যার ফায়দা তোলা উচিত ছিল গোকুলামের। কিন্তু আক্রমণে তাদের তেমন ঝাঁঝই দেখা গেল না। প্রধান গোলগেটার মার্কাস অনেকটা নীচে নেমে খেলায় গোকুলামের আক্রমণের তীব্রতা নষ্ট হয়ে যায়। একইভাবে ইস্ট বেঙ্গলের প্রধান অ্যাটাকার হাইমে স্যান্টোস কোলাডো একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন। ইস্ট বেঙ্গলের প্রধান শক্তি প্রান্তিক আক্রমণে। সেদিক থেকে পিন্টু মাহাতা-ব্র্যান্ডন কিছুটা কার্যকরী ফুটবল খেললেও গোকুলাম ডিফেন্ডাররা ভালো ডিফেন্স স্ট্রেচ করলেন। যথার্থ স্ট্রাইকারের অভাব থাকলে যা হয়। বিদ্যাসাগরকে মাঠে খুঁজতে হল! দুটি দলেরই ম্যাচের শুরু থেকে লক্ষ্য ছিল গোল হজম করব না। সেই ম্যাচ তো টাই-ব্রেকারে যাবেই। গত দু’দিন বৃষ্টি হওয়ার পর সল্টলেক স্টেডিয়ামের মাঠ ম্যাচের আগে ঠিকমতো রোলিংই করা হয়নি। ফলে বারবার ইস্ট বেঙ্গল ফুটবলাররা চোট পেলেন। খেলার বিঘ্ন ঘটে। নির্ধারিত সময়ের পর রেফারি ৬ মিনিট ইনজুরি টাইম দেখান। তারপর রেফারিংয়ের ক্ষুব্ধ হয়ে আচমকা রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে চতুর্থ রেফারির দিকে তেড়ে যান ইস্ট বেঙ্গল স্টপার বোরহা গোমেজ। তাঁকে রেফারি হলুদ কার্ড দেখান। এর ফলে ইস্ট বেঙ্গলের খেলায় কিছুটা তাল কাটে। এদিন বারবার পকেট থেকে কার্ড বের করেছেন রেফারি। দ্বিতীয়ার্ধে সিনবোনে চোট পেয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান সামাদ। ৭৫ মিনিটে গোকুলামের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ব্রুনো পেলিসেরি নামার পর দলের খেলাটা ধরেন।
ব্রুনোর বাঁ-পায়ের কোণাকুণি শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে বেরিয়ে যায়। বিরতির পর হেনরির ওপেন নেট গোল মিস করেন। এরপর ইস্ট বেঙ্গল পিন্টু মাহাতার অব্যর্থ গোলের প্রয়াস অসাধারণ ট্যাকলে আটকে দেন রশিদ। শুরুর ২ মিনিটে পিন্টুর সেন্টার পোস্টে ধাক্কা খায়। ৩৬ মিনিটে সেই গোলমুখী পিন্টু গোলরক্ষকের গায়ে শট করেন। বিরতির আগে মার্তির ভুল ক্লিয়ারেন্স ধরে গোকুলামের হেনরি ফাঁকা গোল পেয়েও কাঁধ দিয়ে বল বাইরে বের করে দেন! তারপরেই মিতেইয়ের দূরপাল্লার শট ইস্ট বেঙ্গল গোলরক্ষক দর্শনীয় ভঙ্গিতে ফিস্ট করে বাঁচান। এক্সট্রা টাইমে মার্কাসের তিনবার গোলের প্রয়াস প্রতিহত করেন মির্শাদ। এইসময় তিনি হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে খোঁড়াতে থাকেন। টাই-ব্রেকারে ইস্ট বেঙ্গলের লালরিনডিকার শট পোস্টে লাগে। কোলাডো ও নাওরেমের শট সেভ করেন উবেইদ। ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে গোল করেন মার্তি ও হাওকিপ। গোকুলামের হয়ে গোল করেন পেলিসেরি, জেস্টিন, লালরোমাওইয়া। মিতেইয়ের শট সেভ করেন মির্শাদ। জেস্টিনের শটে জাল ছিঁড়ে যায়।