বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
(ওমর-পেনাল্টি, ডিপান্ডা ডিকা)
সোমনাথ বসু : দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি মাত্র সেশনে ফুটবলারদের পরখ করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন খালিদ। তারমধ্যেই তাঁকে বুঝে নিতে হয়েছে দলের ভুলত্রুটি। সেই অনুযায়ী বুধবার মিনার্ভা পাঞ্জাব এফসি’র বিরুদ্ধে মোহন বাগানের প্রথম একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন হয়। দিনের শেষে ঘরের মাঠে তিন পয়েন্ট পাওয়ার পর এটা বলতেই হবে, খালিদের পরিবর্তনগুলিতে বুদ্ধিমত্তার ছোঁয়া অবশ্যই রয়েছে। পারফরম্যান্সে বিরাট কিছু উন্নতি না হলেও গত দু’টি ম্যাচের তুলনায় এদিন জমাট ছিল সবুজ-মেরুন রক্ষণ। পাশাপাশি সনি-ওমরদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজেও আত্মবিশ্বাসের ছাপ সুস্পষ্ট। চার ম্যাচ পরে গোল পেয়ে ডিপান্ডা ডিকার মুখেও হাসি ফুটেছে। ১২ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট পেয়ে এই মুহূর্তে লিগ তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে মোহন বাগান। উল্লেখ্য, খালিদের স্পর্শে পরপর দু’টি ম্যাচে হারের পর জয়ের পথে ফিরল শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবটি।
কী পরিবর্তন করেন খালিদ? ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে দল সাজান তিনি। ডিপ ডিফেন্সে কিংসলের পাশে পাঞ্জাবি দলরাজকে নামানো হয়। শুরুতে রাইট উইং ব্যাকে অরিজিতের বদলে অভিষেক আম্বেকর এবং লেফট উইং ব্যাকে গুরজিন্দর সিংকে ব্যবহার করেন তিনি। পরে নিজেদের মধ্যে জায়গা অদলবদল হয় তাঁদের। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে ইউটা কিনোয়াকির পাশে বড় চেহারার ড্যারেন ক্যালডেইরা। শঙ্করলাল চক্রবর্তীর প্রিয়পাত্র সৌরভ দাস স্কোয়াডেই ঠাঁই পাননি। প্রথম ২০ মিনিট সনি নর্ডি রাইট হাফ এবং আজহারউদ্দিন মল্লিক লেফট হাফের ভূমিকায় ছিলেন। তারপর দু’জন প্রান্ত বদল করেন। সনি ও আজহারের মাঝখানে ওমর এল হুসেইনি। আপফ্রন্টে হেনরি কিসেকার জায়গায় ডিপান্ডা ডিকা। দুর্গরক্ষার দায়িত্বে অভিজ্ঞ শিলটন পাল।
মিনার্ভা পাঞ্জাব এফসি’র এই দলের আক্রমণভাগ একেবারে সাদামাটা। তাই বুধবারের ম্যাচে সবুজ-মেরুন রক্ষণ সেভাবে পরীক্ষার মুখোমুখি হল না। তবে পুরানো কোচ খালিদকে পেয়ে উজ্জীবিত ফুটবল খেললেন কিংসলে। কিমকিমার থেকে দলরাজ বেটার কিনা তা এখনই বলার সময় আসেনি। বিপক্ষ কোচ পল মুনস্টার এক পয়েন্টের লক্ষ্যেই দল সাজিয়েছিলেন ৫-১-৩-১ ফর্মেশনে। আধা ফিট জাপানি স্ট্রাইকার কুবোকি অতি সাধারণ। আর প্রভজ্যোৎ সিং, আকাশ সাঙ্গওয়ানদের কথা না বলাই ভালো। গোটা ম্যাচে মোহন গোলরক্ষক শিলটন পালকে একবারও কঠিন চ্যালেঞ্জর মুখোমুখি পড়তে হয়নি।
ম্যাচের শুরু থেকেই পরিকল্পিত ফুটবল খেলার চেষ্টা করে খালিদ-ব্রিগেড। তবে মিনার্ভা রক্ষণে প্রবলভাবে আছড়ে পড়েনি মোহন বাগানের আক্রমণ। ২০ মিনিটে ওমরের থ্রু ধরে বক্সে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই ডিকাকে ট্রিপ করেন ল্যানসিন তোরে। রেফারি শ্রীকৃষ্ণ কেন পেনাল্টি দিলেন না তা তিনিই জানেন। তবে কাঙ্ক্ষিত লিডের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বাগানকে। ২৯ মিনিটে সনি নর্ডির বাড়ানো বল ডিকা টোকা দেওয়ার পরে তাঁকে ফাউল করেন সেই ল্যানসিন তোরে। এবার পেনাল্টি পায় মোহন বাগান। স্পটকিক থেকে লক্ষ্যভেদে নির্ভুল ছিলেন ম্যাচের সেরা মিশরীয় মিডফিল্ডার ওমর (১-০)। ডিফেন্সিভ হাফে ইউটার পাশাপাশি ড্যারেন ক্যালডেইরাও এদিন সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। বিরতির আগে ডানদিক থেকে গুরজিন্দারের তোলা ক্রসে নেওয়া আজহারের হেড বাইরে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে তিন অ্যাটাকিং মিডিওর মধ্যে গ্যাপ কমিয়ে আনেন খালিদ। তবে প্রথম দশ মিনিট আক্রমণ লোক বাড়িয়ে সমতা ফেরানোর চেষ্টায় ছিল মিনার্ভা পাঞ্জাব। ৫০ মিনিটে আকাশের ফ্রি-কিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থায় বল পেয়েও তা উড়িয়ে দেন তোরে। এরপর কুবোকির শট ব্লক করেন কিংসলে। ৫৬ মিনিটে আজহারের পরিবর্তে ফৈয়াজকে মাঠে নামান কোচ খালিদ। মোহন বাগান দ্বিতীয় গোল পায় ৬৮ মিনিটে। বিপক্ষ অর্ধে বল পেয়ে সনি দেখে নেন ডিকা ঠিক কোথায় আছেন। তারপর এমন ভাব দেখান যাতে মিনার্ভা ডিফেন্ডারদের মনে হয় তিনি বল বাড়াবেন রাইট উইংয়ে ফৈয়াজের উদ্দেশ্যে। কিন্তু হাইতিয়ান তারকাটি তা না করে ডিকাকেই বাড়ান ‘জেম অব আ থ্রু’। নিখুঁত প্লেসিংয়ে ব্যবধান বাড়াতে ভুল করেননি তিনি (২-০)। এরপর ডানদিক থেকে ইউটার পাস থেকে নেওয়া ওমরের শট রুখে দেন মিনার্ভা গোলরক্ষক। ৮২ মিনিটে বক্সের মধ্যে দলরাজের সঙ্গে সংঘর্ষে ভূপতিত হন ছোটে। কিন্তু রেফারি পেনাল্টি দেননি।
মোহন বাগান: শিলটন, অভিষেক, দলরাজ, কিংসলে, গুরজিন্দার, ইউটা কিনোয়াকি, ড্যারেন ক্যালডেইরা (মেহতাব), সনি নর্ডি, ওমর, আজহারউদ্দিন (ফৈয়াজ) এবং ডিপান্ডা ডিকা (হেনরি)।