সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার বা ... বিশদ
স্থানীয় ও পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার পুরুলিয়া শহরেরই চারবন্ধু মিলে টিকটক ভিডিও শ্যুট করার জন্য আদ্রা ডিভিশনের কাটিন রেল গেটের কাছে পুরুলিয়া-চাণ্ডিল রেললাইনে যায়। কাটিন রেল গেট থেকে প্রায় ৫০০মিটার দূরে তারা ভিডিও শ্যুট করছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও অনেকেই তাদের ওই এলাকায় ভিডিও শ্যুট করতে দেখেছেন। সেই সময় পুরুলিয়া স্টেশন থেকে বরাভূমগামী ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর জখম হয় নুর আনসারি ও তার সঙ্গী শেখ সাদাফ আলম। দু’জনকেই পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক নুরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সাদাফ পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে গুরুতর জখম অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। সে এদিন বলে, বাড়িতেই ছিলাম। সেই সময় বাকিরা স্লো মোশনে টিকটক ভিডিও শ্যুট করার জন্য ডাকতে আসে। প্রথমে বলেছিলাম, রবিবার যাব না। তারপর ওরা জেদ করায় রাজি হয়ে যাই। আইসক্রিম কারখানার দিকে ভিডিও শ্যুট করতে গিয়েছিলাম। ওখান থেকেই রেল লাইনের দিকে গিয়ে একাধিক টিকটক ভিডিও শ্যুটও করা হয়। সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফেরার তোড়জোড় করছিলাম। সেই সময় স্টেশনের দিক থেকে ট্রেন আসছিল। নুর আবার বলে, ট্রেনের সামনে ধীর গতির একটি ভিডিও শ্যুট করার জন্য। ট্রেনের সামনে থেকে ও হেঁটে আসছিল। আমি সেই ভিডিও শ্যুট করচ্ছিলাম। সেই সময় নুরের পিছনের দিক থেকে কাঁধের কাছে ধাক্কা মারে ট্রেনটি। নুর ছিটকে পড়ে। আমিও আরও দূরে ছিটকে পড়ে রেললাইনের পাশে থাকা নর্দমায় পড়ে যাই। সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে যখন জ্ঞান ফেরে দেখি, নুরকে অনেক দূর থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। আমার মোবাইলটিও খুঁজে পাইনি।
মৃত কিশোরের বাবা রফিক আনসারি বলেন, নুর বড় ছেলে। বাড়ি থেকে ও কখন বেরিয়েছিল সেটা জানি না। তবে বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ওকে মোবাইলে ফোন করেছিলাম। ও বলল, স্টেশনে আছি। হঠাৎ স্টেশনে কেন গিয়েছে তা জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কিন্তু, সেই বিষয়ে ও কিছু বলেনি। ওকে তাড়াতাড়ি বাড়িও ফিরতে বলেছিলাম। তারপর আর কথা হয়নি। কিছুক্ষণ পরে পাড়ার কয়েকজন ছেলে এসে জানাল যে ছেলের দুর্ঘটনা হয়েছে। হাসপাতাল ছুটে গিয়ে ছেলেকে আর জীবিত দেখতে পাইনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনজন নাকি ওকে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল। কারা ওকে হাসপাতালে এনেছে জানি না। তাছাড়া ছেলে ভিডিও শ্যুট করত কি না তাও জানি না। ভিডিও শ্যুট করতে গিয়েই ওর প্রাণ গেল নাকি অন্য কোনও বিষয় রয়েছে সেই বিষয়ে আমার ধন্দ রয়েছে। মোবাইলগুলি উদ্ধারের পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত দাবি করছি।
স্থানীয় মাদ্রাসা ইসলামিয়া থেকে মাধ্যমিক পাশ করে নুর। সোমবার দুপুরে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পর তার দেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এদিন তার বাড়িতে পৌঁছন পুরুলিয়া পুরসভার কাউন্সিলার সোহেল দাদ খান সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছতেই তার পরিবার সহ স্থানীয় বাসিন্দারা শোকে ভেঙে পড়েন।
স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ আলি বলেন, চারজন মিলে ভিডিও করতে গিয়েছিল বলে শুনেছি। পরিবারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় টিকটক বা এধরনের ভিডিও শ্যুট ও ছবি তোলার ক্ষেত্রে বারণ করতে হবে কমবয়সিদের। আমাদের নিজেদেরও এবিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় নুরের ভিডিও শ্যুট করছিল সাদাফ। তাদের সঙ্গে থাকা আরও দু’জন উঁচু এলাকায় ছিল। উপরে থাকা দু’জন অন্যদিক থেকে ভিডিও শ্যুট করছিল কি না তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। পুরুলিয়া জিআরপি থানার পুলিস জানিয়েছে, ট্রেনের চালক বা গার্ড ঘটনার বিষয়ে তাদের কোনও তথ্য দেয়নি। পুরুলিয়া সদর থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস।