উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার বিকেলে ঝাড়খণ্ডের তিরুলডি থানার অন্তর্গত কুকরু হাটে জনসাধারণের মাঝেই প্রথমে কুপিয়ে এবং পরে গুলি করে পাঁচজন পুলিসকর্মীকে খুন করে মাওবাদীরা। ঝাড়খণ্ড পুলিস ও কুকরু এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, কুকরুতে ঝাড়খণ্ডের অন্যতম বড় পশু হাট বসে। সাপ্তাহিক এই হাটে কয়েক হাজার লোকসমাগম হয়। গত শুক্রবার বিকেলে পাঁচজন পুলিসকর্মী হাটের দু’টি দোকানে ঠান্ডা পানীয় ও খাবার খাচ্ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন জানান, মাওবাদীরা মুখে গামছা বেঁধে ছিল। তাদের কয়েকজন একজন পুলিসকর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। তারপর পুলিসকর্মীদেরই অস্ত্র লুট করে তাঁদের গুলি করে এবং শেষে কয়েকজন পুলিসকর্মীর গলার নলিও কেটে দেয়। বড় কোনও অস্ত্র তাঁদের সঙ্গে ছিল না বলে জানান ওই প্রত্যক্ষদর্শী। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই বেশকিছুক্ষণ ‘মাওবাদী জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দেওয়ার পর বাইক নিয়ে তারা চম্পট দেয়। পুলিসকর্মীদের গাড়ির চালক অন্যত্র থাকায় কোনওক্রমে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন। ঘটনার নৃশংসতায় কুকরু এলাকা সহ সীমান্তবর্তী বাঘমুণ্ডি থানা এলাকাতেও ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
পুরুলিয়া জেলা পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পর পুরুলিয়ার ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকাগুলি কার্যত সিল করে চলছে ব্যাপক নাকা চেকিং। বলরামপুর থানার পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, নাকা চেকিংয়ের সময় গাড়ির কাগজপত্র এবং গাড়ি তল্লাশির পাশাপাশি সীমান্ত পেরিয়ে আসা ব্যক্তিদের ভোটার কার্ড বা যেকোনও পরিচয়পত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। কারও পরিচয়পত্র না থাকলে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরই ছাড়া হচ্ছে। বলরামপুর ছাড়াও বাঘমুণ্ডি সহ জেলার ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী অন্যান্য এলাকাগুলিতেও সতর্ক রয়েছে পুলিস। এছাড়া কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং যৌথ বাহিনীর ক্যাম্পগুলিকেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে জেলা পুলিস।
ঝাড়খণ্ড পুলিসের একাংশের আশঙ্কা, কুকরু হাটে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর মাওবাদীরা পুরুলিয়ায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই পুরুলিয়া জেলা পুলিস সতর্ক রয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা পুলিসের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা সীমান্তবর্তী এলাকার বিষয়ে বিশেষ খোঁজখবর শুরু করেছেন।
এবিষয়ে পুরুলিয়ার পুলিস সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, জেলার পুলিস যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নাকা চেকিং ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। ক্যাম্পগুলির নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও সিআইএফের টিম রাখা হয়েছে। এদিন থেকে তারা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘমুণ্ডি থানা এলাকা থেকে দুয়ারসিনি হয়ে কুকরু হাটের দূরত্ব প্রায় ১০কিলোমিটার এবং বাঘমুণ্ডির হুড়মদা গ্রাম হয়ে ওই হাটের দূরত্ব মাত্র ৬ কিলোমিটার। তাই ঝাড়খণ্ডের কুকরু হাটে বাঘমুণ্ডি এবং পুরুলিয়ার অন্যান্য থানা এলাকা থেকেও বহু মানুষ ওই হাটে যান। ঝাড়খণ্ডের কুকরু হাট এলাকার বাসিন্দা ভাগবৎ মাহাত বলেন, কুকরু হাটে পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষ আসেন। এই এলাকায় মাও হামলার ঘটনা এই প্রথম। ঘটনার পর থেকে আমরা আতঙ্কে রয়েছি। বাঘমুণ্ডিরও বহু পরিচিতরা আতঙ্কের কারণে এই এলাকায় আপাতত আসার বিষয়ে তাঁদের অনীহার কথা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন।
ঘটনার দিন ওই হাটেই উপস্থিত বাঘমুণ্ডির সিঁদরি এলাকার এক ছোট ব্যবসায়ী বলেন, কুকরু হাটে মাও হামলার ঘটনার পর ‘ওদের’ বাঘমুণ্ডিতে আসতে আর কতটুকু সময়? বাঘমুণ্ডির সঙ্গে ওই এলাকা তো বিভিন্ন বিষয়ে ওতপ্রতভাবে জড়িত। নৃশংস ওই ঘটনার ছবি কিছুতেই ভুলতে পারছি না।