সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি, ২৪ মার্চ: করোনা ভাইরাসের কারণে দেশজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার পরিস্থিতি সামলাতে আজকালের মধ্যেই বড়সড় আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, ব্যাঙ্ক লোনের জন্য মাসিক কিস্তি দেওয়ার চাপ, স্তব্ধ হয়ে যাওয়া উৎপাদন, কর্মসংস্থানে প্রভাব, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং পরিষেবা ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি ধাক্কা লেগেছে। এই সমস্যাগুলি নিয়ে আমরা আর্থিক প্যাকেজ আনতে চলেছি। আপাতত টাস্ক ফোর্স এই বিষয়ে কাজ করছে। পাশাপাশি আজই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী একঝাঁক সহায়তার ঘোষণা করেছেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে দেশজুড়ে লকডাউনের জেরে অর্থনীতি যেভাবে প্রায় ডুবতে বসেছে তার জেরে আয়কর, জিএসটি, কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স এবং সাধারণ মানুষকে কিছুটা সুরাহা দেওয়ার লক্ষ্যে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মার্চ, এপ্রিল, মে এই ত্রৈমাসিকের জিএসটি রিটার্নের সময়সীমা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ জুন। ৫ কোটি টাকার নীচে টার্নওভারের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে কোনওরকম জরিমানা, সুদ অথবা দেরিতে কর দেওয়ার ফি দিতে হবে না। ৫ কোটি টাকার বেশি টার্ন ওভার হলে ৩০ জুনের মধ্যে জিএসটি রিটার্নে ৯ শতাংশ সুদ দিতে হবে শুধু। ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরের আয়কর রিটার্ন যারা জমা দেয়নি তাদের ওই রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ জুন। এক্ষেত্রেও ১২ শতাংশের পরিবর্তে সুদ দিতে হবে ৯ শতাংশ হারে। দেরিতে জমা দেওয়া টিডিএসের ক্ষেত্রেও সুদের পরিমাণ হবে ৯ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানান, আধার কার্ডের সঙ্গে প্যান কার্ডের সংযুক্তিকরণের সময়সীমা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ জুন। নতুন কোনও সংস্থা বাণিজ্যের লাইসেন্স পাওয়ার পর এতদিন নিয়ম ছিল প্রথম ৬ মাসের মধ্যে অবশ্যই কাজ শুরু করে দিতে হবে। করোনা ভাইরাসের আবহে সামগ্রিক অনিশ্চয়তার কারণে ওই সময়সীমা আরও ৬ মাস বাড়িয়ে দেওয়া হল। পাশাপাশি ভারতে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চালু করতে হলে অন্তত ১৮২ দিন ভারতে থাকতে হবে। এই নিয়মও আর থাকছে না। নতুন সংস্থার ২০ শতাংশ ডিপোজিট আগাম দেওয়ার সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে ৩০ জুন পর্যন্ত। সাধারণ ব্যাঙ্ক গ্রাহকের ক্ষেত্রে এটিএম থেকে টাকা তোলার সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। যে কোনও ব্যাঙ্ক থেকেই যে কোনও ডেবিট তথা এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা তোলা যাবে কোনও অতিরিক্ত চার্জ ছাড়াই। তবে এই সুবিধা আগামী তিন মাসের জন্য প্র঩যোজ্য।
অন্যদিকে আজ থেকে কোনও ব্যাঙ্কেরই অ্যকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালান্স রাখার বাধ্যবাধকতা রইল না। আর সেই কারণে ন্যূনতম ব্যালান্স রাখা না হলে যে চার্জ নেওয়া হয়, সেটিও আর নেওয়া হবে না। আজ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনও সংস্থার ডিরেক্টর যদি ২০১৯-২০ আর্থিক বছরের অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত কোনও বোর্ড মিটিং আগামী ৬ মাসে করতে না পারে সেটাকে কোনও আইনভঙ্গ হিসেবে ধরা হবে না। একইভাবে শিল্পমহলের ক্ষেত্রে দেউলিয়া আইনে কিছুটা শৈথিল্য আনা হয়েছে। আর এই প্রতিটি সিদ্ধান্তকেই কমবেশি ৩০ জুন পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে আজ সন্দেহ করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরে সম্ভবত আশঙ্কা তৈরি হয়েছে করোনা সঙ্কট এত সহজে দূর হবে না। সম্ভবত আরও কয়েকমাসের মধ্যে এই সঙ্কট কেটে যাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। আর তাই আজ এই ঘোষণার পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই একঝাঁক আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণার সম্ভাবনার কথাও শুনিয়েছেন। বস্তুত আজ অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয় আর্থিক মন্দা কি আরও গভীর সঙ্কটের দিকে এগোচ্ছে? নির্মলা বলেছেন,নো কমেন্টস!