পিতার স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
বুধবার সন্ধ্যায় শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ঘিরে ধুন্ধুমার হয়ে গিয়েছে। তার জেরে রাজনৈতিক দলটি বৃহস্পতিবার গোটা রাজ্যে বন্ধ ডেকে দিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যাতেই এয়ারপোর্ট পৌঁছনোর দুশ্চিন্তা মাথায় ঘুরছিল। একজন বললেন এয়ারপোর্ট প্রায় ১০ কিমির বেশি রাস্তা। একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বুধবার সন্ধ্যায় যখন এসব ভাবছি, আর দু’একজনকে জিজ্ঞাসা করছি, তখন সামনে থেকে একজন প্রস্তাব দিলেন এয়ারপোর্ট যাবেন? কোনও চিন্তা নেই। আমার গাড়ি আপনাকে পৌঁছে দেবে। শুনে কিছুটা স্বস্তি ফিরল। তখন তিনি বলেন, তবে আমার গাড়ি সকাল আটটায় এয়ারপোর্ট যাবে। শুনে আঁতকে উঠলাম! সে কী! আমার ফ্লাইট তো বিকেল সাড়ে পাঁচটায়! তাঁর সাফ জবাব, অপেক্ষা করবেন। নইলে বেলা বাড়লে আর যেতে পারবেন না। এই বলে তিনি ফোন নম্বর দিয়ে বললেন, যদি যান তাহলে রাতেই ফোন করবেন। আগরতলায় ঘুরতে এসে যাঁদের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, সবারই পরামর্শ সকাল ৮টায় ওই গাড়িতেই চলে যান।
সেই মতো রাতেই ওই ব্যক্তিকে জানালাম, আমি আপনার গাড়িতে কাল (বৃহস্পতিবার) যাব। উনি বললেন, ঠিক আটটায় রেডি থাকবেন, এক মিনিটও যেন দেরি না হয়! যাতে দেরি না হয়, তাই সকাল পাঁচটায় উঠে রেডি হয়ে যাই। কখন ফোন আসবে? আদৌ আসবে তো? এই উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে মুহূর্তে দু’ঘণ্টা কেটে যায়। সকাল ঠিক সাড়ে সাতটা। ওই ব্যক্তি ফোন করেন, দাদা রেডি তো? বললাম, হ্যাঁ। উনি বললেন, আচ্ছা অপেক্ষা করুন। কয়েক মিনিটের মধ্যে আমি যেখানে ছিলাম, সেখানে তিনি গাড়ি নিয়ে হাজির। গাড়ি দেখে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ! অ্যাম্বুলেন্সে যেতে হবে? উনি বলেন, উঠে পড়ুন। এই গাড়ি চৌমুহনী ছেড়ে দেবে, সেখান থেকে অন্য গাড়িতে যেতে হবে।
চৌমুহনী পৌঁছে দেখলাম, সেখানেও আমাদের বাহন সেই অ্যাম্বুলেন্স। এবার আমি শুধু একা নয়। আমার মতো একাধিক যাত্রীই আছেন। যাঁরা এদিন আগরতলা থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এসেছেন। মাথাপিছু ভাড়া ৪০০ টাকা করে। সাধারণ দিনে অন্য গাড়িতে এটা ২০০ টাকায় পাওয়া যায়। বন্ধের শহরে শুনশান রাস্তায় হুটার বাজিয়ে ১৫-২০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম এয়ারপোর্ট। তখন ঘড়ির কাঁটা সবে সকাল আটটা পেরিয়েছে। তাই এখন অপেক্ষা অনেক ঘণ্টার!
এয়ারপোর্টে পৌঁছেই বুঝলাম শুধু আমি নয়, আমার মতো বহু যাত্রীই সকাল সকাল চলে এসেছেন। এক যাত্রী বললেন, রাত ৮টায় ফ্লাইট। ১২ ঘণ্টার বন্ধ। কিন্তু, তাও সাবধানতাবশত সকাল সকাল পৌঁছে গিয়েছেন এয়ারপোর্টে। এমন সময় একটা বাসে বেশ কয়েকজন এলেন। বাসের সামনে লেখা, ত্রিপুরা পুলিস পর্যটকদের পরিষেবায়। ব্যাপারটা জানতে চাওয়ায়, এক পুলিস কর্মী বললেন, আগরতলায় আটকে পরা পর্যটকদের এইভাবে শহর থেকে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ত্রিপুরা বন্ধে জর্জরিত পর্যটকরা গত তিনদিন ধরে আগরতলার বাইরে যেতে পারেননি। ফেরার সময় ফের ভোগান্তির হাত থেকে পুলিসের এই রক্ষাকর্তার ভূমিকায় সকলেই খুশি। এক পুলিস কর্মী বললেন, আগরতলা বা ত্রিপুরায় বন্ধ হলে, পুলিস এটা করেই থাকে। ধন্যবাদ তাদের। রাজনৈতিক দল যখন পর্যটক তথা রাজ্যের অতিথিদের কথা ভাবছেন না, তখন তারা অন্তত পাশে দাঁড়াচ্ছে। পুলিসের গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্সে করে এই ফেরার অভিজ্ঞতা বহু পর্যটকেরই দীর্ঘদিন মনে থাকবে।