সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি, ৮ জানুয়ারি: সিবিআই কাণ্ডে মোদি সরকারকে বড়সড় ধাক্কা দিল সুপ্রিম কোর্ট। ২৩ অক্টোবর মধ্যরাতে যে সিবিআই কর্তাকে সরকার সম্পূর্ণ একক সিদ্ধান্তে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়ে সেই পদে অস্থায়ী সিবিআই কর্তাকে নিয়োগ করেছিল, সেই সিদ্ধান্ত আজ খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, সিবিআই ডিরেক্টর অলোক ভার্মাকে আবার তদন্ত সংস্থার প্রধান পদে ফিরিয়ে আনতে হবে। ভার্মাকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে সরকার একঝাঁক যুক্তি আদালতে পেশ করা সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্ট সেই বক্তব্যকে অগ্রাহ্য করে জানিয়ে দিল, উচ্চপর্যায়ের নিযুক্তি কমিটিকে এড়িয়ে সরকার যেভাবে সিবিআই ডিরেক্টর নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বিধিবহির্ভূত। উল্লেখ্য, সিবিআই ডিরেক্টর নিয়োগ ও বরখাস্ত সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, দেশের প্রধান বিচারপতি এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে নিয়ে গঠিত ওই কমিটি। কিন্তু সিবিআইয়ের শীর্ষস্তরে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে যে চরম কোন্দল, ঘুষের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ ও কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি চলছিল, সেই সঙ্কটে আচমকাই হস্তক্ষেপ করে মোদি সরকার। ২৩ অক্টোবর মধ্যরাতে ডিরেক্টর অলোক ভার্মা এবং স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানাকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ওই রাতেই নিয়োগ করা হয় এক অস্থায়ী ডিরেক্টরকে। শুরু হয় একের পর এক মামলা ও পাল্টা মামলা। সরকারের একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন সিবিআই ডিরেক্টর অলোক ভার্মা। পাশাপশি কংগ্রেস এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও একই আর্জি নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে যায়। আজ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এভাবে সিবিআই ডিরেক্টরকে সরকার একতরফা ছুটিতে পাঠাতে পারে না। অলোক ভার্মাকে পুনর্বহাল করার নির্দেশের পাশাপাশি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, যেহেতু ডিরেক্টরের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে, তাই তিনি পদে বসলেও কোনও বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন না। এক সপ্তাহের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের যে কমিটি সিবিআই ডিরেক্টরকে নিয়োগ করার অধিকারী, তাদের বৈঠকে বসার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। এরকম একটি হাই প্রোফাইল মামলায় যেভাবে আজ সুপ্রিম কোর্ট বিব্রত করেছে, তা মোদি সরকারের কাছে অবশ্যই বড় ধাক্কা।
এবং সেই সুযোগ নিতে সামান্য দেরি করেননি রাহুল গান্ধী। তিনি আজ এই রায় নিয়ে ফের নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করেছেন। বলেছেন, রাফাল ইস্যুতে মোদিজিকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। কারণ তিনি মানুষের থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন এবং বন্ধু অনিল আম্বানিকে দিয়েছেন। সিবিআই যেহেতু রাফাল তদন্ত শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছিল, তাই আতঙ্কিত মোদিজি সিবিআই ডিরেক্টরকেই সরিয়ে দেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বুঝিয়ে দিল মোদিজি বেআইনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে সরকার যে আদৌ ধাক্কা খায়নি সেটা বোঝাতে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট সম্পূর্ণ ভারসাম্যের রায় দিয়েছে। কারণ আদালত বলেছে, সিবিআই ডিরেক্টর কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। উল্লেখ্য, সিবিআই ডিরেক্টর পদে অলোক ভার্মার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ জানুয়ারি।