উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
জঙ্গলমহলের প্রাণকেন্দ্র বেলপাহাড়ির ছোট্ট গ্রাম তামাজুড়ি। গ্রামেরই এক বাসিন্দা স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিতে আসেন তামাজুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কোলে ছোট্ট মেয়ে। ভোট দিয়ে ফেরার সময় পাড়ারই এক পরিচিত তাঁকে নাম ধরে ডাকে। ‘কী হয়েছে?’ জিজ্ঞাসা করতে করতেই একটা জটলার দিকে এগিয়ে যান সেই ভোটার। জটলার মধ্যে থেকেই হাত বাড়িয়ে সেই ভোটারের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় একটা প্যাকেট। কী রয়েছে তাতে? খুলে দেখা যায়, মুড়ি আর ছোলা। কারণ জানার জন্য পাড়ার সেই পরিচিতের দিকে তাকাতেই ভোটার উত্তর পেলেন, ‘যা, বাড়ি গিয়ে খেয়ে নিবি।’ এই বলে ফের সেই ভোটারের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল একটা ছোট্ট প্যাকেট। তাতে রয়েছে কয়েকটা বিড়ি। ভোটার চলে গেলেন। তামাজুড়ি গ্রামের সেই বুথের অদূরে এই দৃশ্য প্রায় সারাদিনই দেখা গেল। মুড়ি-ছোলা-বিড়ি কেন দেওয়া হচ্ছে? উত্তরে মোহিত মুর্মুর দাবি, ‘দল খুশি হয়ে ভোটারদের খাওয়াচ্ছে।’ কোন দল? উত্তর এল, ‘বিজেপি।’ আরও বললেন, ‘অনুব্রতবাবু যদি মুড়ি-বাতাসা-গুড় জল খাওয়াতে পারেন, তাহলে আমরা নয় কেন?’
শুধুমাত্র তামাজুড়িই নয়, আমলাশোল থেকে শুরু করে কাঁকড়াঝোড়, বুড়িঝোড়, ধোবাকাচা, বামনডিহা, কুর্চিবনি, সাহারি থেকে শুরু করে লালগড়, বিনপুরের অধিকাংশ এলাকার বুথেই রবিবার এভাবে মুড়ি-ছোলা বিলি করেছে গেরুয়া শিবির। আমলাশোলের বিজেপি নেতা রঞ্জিত সিং বলেন, ‘মানুষ যদি একটু মুড়ি-ছোলা খেয়ে খুশি হয়, তাহলে দলও খুশি।’ তবে শুধুমাত্র মুড়ি-ছোলা বা বাড়ির পুরুষদের জন্য বিড়ি নয়, একাধিক জায়গায় মুড়ি-ঘুগনি, এমনকী পাত পেড়ে খিচুড়ি পর্যন্ত খাওয়ানো হয়েছে ভোটারদের। কেন বিজেপি এগুলি খাওয়াচ্ছে, তা নিয়ে সরাসরি কেউ মুখ না খুললেও, অনেকের মুখেই শোনা গেল— ‘কালকে রাতেই গ্রামে গ্রামে বলে যাওয়া হয়েছিল, ভোট দিয়ে ফেরার পথে মুড়ি-ছোলা নিয়ে আসতে।’ তবে সেটা কি কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে ভোট দেওয়ার বিনিময়েই দেওয়া হবে? এর উত্তরে অবশ্য মুখে কুলুপ ভোটারদের।
তবে লালগড় এলাকায় আবার বিজেপি শিবিরের পাল্টা দাবি, সিপিএম-তৃণমূলও ভোটারদের মধ্যে খাবার বিলি করে তাঁদের ভোট নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করেছে। যদিও দুই দলই সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এদিকে, ভোটারদের খাওয়ানো প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি সুখময় সৎপতি (জহর) বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে ভোটারদের খাওয়ানোর জন্য এরকম কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাঁদের দলের কর্মী এবং যাঁরা ভোটের কাজ করছেন তাঁদের জন্যই ওই খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখান থেকে গ্রামবাসীরা খেয়ে থাকলে, খেয়ে থাকতে পারেন।’