ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
শিশুদের উদ্ধার করার পরে তাদের বাড়ির ঠিকানা পেলেও শিশু কল্যাণ সমিতির নির্দেশ না মেলায় দিনের পর দিন হোমেই শিশুদের আটকে থাকার নজিরও রয়েছে। এই অবস্থায় চাইল্ডলাইন সমস্যা পড়েছে। অসুবিধায় ভুগছে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিকের দপ্তরও। চাইল্ডলাইনের তরফে এব্যাপারে নিজেদের অসহায়তার কথা স্বীকারও করে নেওয়া হয়েছে।
সিডব্লিউসি বা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি গঠন না হওয়াতেই এই সমস্যা শুরু হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। সিডব্লুসি মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ছ’মাস তাদের মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষমতা দপ্তরের হাতে ছিল। তাও হয়নি। যদিও জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, নদীয়া জেলায় এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। একটা সময় মালদার সিডব্লুসি এই জেলার দায়িত্ব সামলেছে। পরে উত্তর ২৪ পরগনার সিডব্লুসি’র কাছেও শিশুদের নিয়ে যেতে হয়েছে। ওই কর্তার কথায়, রাজ্য থেকে খোঁজ খবর নিয়ে যেটুকু জানা গিয়েছে, কমিটিতে নিয়োগের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। কখনও বা যোগ্য আবেদনকারী পাওয়া যায়নি। কখনও বা আবেদনকারীদের সংখ্যা এতটাই কম ছিল যে কমিটি গঠন করা যায়নি। গত এক বছরে একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও শিশু কল্যাণ সমিতি গঠনের জন্য প্রার্থী মেলেনি। এই জাঁতাকলে পড়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশু সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশ জারি হচ্ছে ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট’ লঙ্ঘন করেই।
জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক অনিন্দ্য দাস বলেন, গত এক বছর ধরে শিশু কল্যাণ সমিতি জেলায় নেই। সপ্তাহে একদিন মুর্শিদাবাদের কমিটি এসে বসে। তাঁরাই এই সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশ দেয়। সমস্যা হচ্ছে, এটা অস্বীকার করা যায় না। চাইল্ড লাইনের পক্ষে দেবব্রত কর্মকার বলেন, শিশু সুরক্ষা সমিতি এত দিন ধরে না থাকাটা সত্যিই সমস্যার। তবে এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই। জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিকের দপ্তর বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
পাঁচজনকে নিয়ে গঠন হয় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি বা শিশু কল্যাণ সমিতি। এরই মধ্যে একজনকে কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে পরপর কয়েকটি জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু আগে থেকে কোনও সমিতি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু না-হওয়ায় নতুন সমিতি তৈরি হয়নি। তখন যে জেলার সমিতির মেয়াদ রয়েছে, তাদের উপরেই চাপানো হয়েছিল একাধিক জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির দায়িত্ব। সেই ট্রাডিশন এখনও চলছে। জেলার সমাজ কল্যাণ দপ্তরের এক কর্তা বলেন, নতুন আইন অনুযায়ী সদস্য এবং চেয়ারম্যান নিয়োগের শর্তাবলি মানতে গিয়ে প্রার্থী পেতে অসুবিধা হয়েছে। তাই সব জেলার শিশু কল্যাণ সমিতি গঠন করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রার্থী মেলেনি।
এর পাশাপাশি আবার তিন মাস ধরে নদীয়া জেলায় জুবেনাইল জাস্টিস বোর্ডের দুই সদস্য নেই। ১৯৮৬ সালে তৈরি হয় ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট’। সেটাই ২০০০ সালে ‘জুভেনাইল জাস্টিস কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন’ হয়। ২০০৬ সালে সংশোধিত আইনের পরে বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় অভিযুক্ত নাবালকদের বিচার প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে জেলায় জেলায় তৈরি হয় ‘জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড’। শিশুরা যাতে অপরাধের রাস্তা থেকে সরে সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে পারে তা দেখার জন্যই ‘জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড’। একজন প্রিন্সিপ্যাল ম্যাজিষ্ট্রেট এবং আরও দুই সদস্য-সহ মোট তিনজনের একটি বোর্ডই নাবালক অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার দায়িত্বে রয়েছে। অপরাধের ধরন এবং অপরাধীর বয়স বিবেচনা করে কখনও কাউন্সিলিং করে বা স্বল্প সময়ের জন্য আটকে রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় অভিযুক্তদের। জেলার এই বোর্ডে দু’জন সদস্য না থাকায় বিভিন্ন কেস ঝুলে থাকছে। জেলার এক পদস্থ কর্তা বলেন, দু’টি বিষয় নিয়েই রাজ্যের নারী, শিশু কল্যাণ দপ্তরে বার বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।