ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
বিজেপি ছেড়ে একাধিক সদস্যদের ফের তৃণমূলে চলে যাওয়ার কথা মেনে নিয়ে বিজেপি’র জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা রায় বলেন, গত লোকসভা নির্বাচনের পর জেলাজুড়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যরা রীতিমতো দরখাস্ত দিয়ে আমাদের দলে যোগদান করেছিলেন। আমরা একজনকেও জোর করে দলে নিয়ে আসিনি। পেশিশক্তিতে ভর দিয়ে জিতে আসা ওই সমস্ত পঞ্চায়েত সদস্যরা ভেবেছিলেন যে বিজেপিতে এসে লুটেপুটে খাবেন। সেটা হতে দিইনি আমরা। একইসঙ্গে গত একমাস ধরে এলাকায় এলাকায় বোমা-বন্দুক নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। পুলিশও তাদের সঙ্গে রয়েছে। রীতিমতো ভয় দেখিয়ে বিজেপিতে চলে আসা পঞ্চায়েত সদস্যদের আবার দলে টানছে তৃণমূল। সাধারণ মানুষ সব কিছুই দেখছেন। এর মধ্যে আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়ার কোনও ব্যাপার নেই।
এব্যাপারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করার পর গোটা জেলাজুড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ কায়েম করেছিল। সেখান থেকে মানুষ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন। যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যকে জোর করে বিজেপিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাঁরা আবার তৃণমূলে ফিরতে শুরু করেছেন। আগামী একমাসের মধ্যে জেলার সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত আবার আমাদের দখলে চলে আসবে। বিজেপির কার্যকলাপ মানুষ বুঝতে পেরেছে। তাই তাদের দিক থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
গত লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহারে গেরুয়া ঝড়ের দাপটে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে শুরু করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। লোকসভা নির্বাচনের পর দিনহাটা, সিতাই, শীতলকুচি সহ জেলার বেশ কিছু এলাকায় বাড়িতে থাকতে পারছিলেন না তৃণমূল কর্মীরা। পরবর্তী সময়ে একটার পর একটা গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে বিজেপি। গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যরা দল বেঁধে বিজেপিতে যোগদান করা শুরু করেন। কিন্তু কয়েকমাস পর থেকেই হাওয়া ঘুরতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বিজেপিতে যাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সিংহভাগ তৃণমূলে ফিরে এসেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি তৃণমূলে ফিরতে শুরু করার পর কোনও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না বিজেপি। ফলে বিজেপি’র মুখ পুড়ছে। যদিও বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তৃণমূলের যে সমস্ত পঞ্চায়েত সদস্য বিজেপিতে এসেছিলেন তাঁরা সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন। ফলে তাঁরা বিজেপিতে থাকলেন না কি তৃণমূলে গেলেন, তাতে কিছু যায় আসে না। মানুষ বিজেপির সঙ্গেই রয়েছে।
কোচবিহার জেলায় মোট ১২১টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মাথাভাঙা-২ ব্লকের ঘোকসাডাঙা গ্রামপঞ্চায়েত ছাড়া আর কোথাও পঞ্চায়েতের বোর্ড দখল করতে পারেনি বিজেপি। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী জয়লাভ করায় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরাও বিজেপিতে যোগদান করতে হুড়োহুড়ি শুরু করে দেন। জেলা বিজেপির হিসাব অনুযায়ী জেলার ৫৭ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিজেপি। উন্নয়নের কাজের তদারকির জন্য বিজেপি প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি করে কমিটি তৈরি করে দেয়। এরপরেই ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে। গত ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে ঘর ওয়াপসি। কোচবিহার, দিনহাটা, সিতাই, শীতলকুচি, মাথাভাঙায় একটার পর একটা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরা তৃণমূলে ফিরতে শুরু করেন। ইতিমধ্যে বিজেপি’র হাত থেকে জেলার ৩৫ টির মতো গ্রামপঞ্চায়েত আবার তৃণমূলের দখলে চলে এসেছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বাকিরাও প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন। তাঁরাও চলে আসবেন তৃণমূলে।
এদিকে রাজনৈতিক মহলের মতে, একাধিক পঞ্চায়েত সদস্য একবার বিজেপিতে চলে আসার পরেও আবার তৃণমূলে ফিরে যাওয়ায় বিজেপি’র সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকট হয়ে পড়েছে। দলের জেলা নেতৃত্বের একটি অংশ প্রথম থেকে তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের দলে নেওয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এই পঞ্চায়েত সদস্যরা পরবর্তীতে দলকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। বিজেপির একাংশের সেই আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হওয়ায় এখন ফাঁপড়ে জেলা নেতৃত্ব।