ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
সুকুল পরিবারের প্রবীণ সদস্য শ্যামল কুমার সুকুল বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষেরা উত্তরপ্রদেশে এই পুজো করতেন। পরিবারের দুই ভাই বংশধর সুকুল ও ধুরন্ধর সুকুল সেখানে এই পুজো নিষ্ঠা সহকারে শুরু করেন। ১৯৬২ সালে বংশধর সুকুলের পরিবার পুরাতন মালদহের নাগেশ্বরপুর গ্রামে চলে আসে। তবে থেকে এখানেও সেই পুজো শুরু হয়। পুজোর স্থান, সময় বদলে গিয়েছে। কিন্তু নিয়মনিষ্ঠা, রীতি-রেওয়াজ একই রয়ে গিয়েছে। এই পূজা এবারে ৯৮৮ বছরে পড়ল। এই পুজোর অনেক ব্যতিক্রমী আচার-রীতি রয়েছে যা এই পুজোর মাহাত্ম্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
পরিবারের লোকেরা বলেন, দুধ-আলতা দিয়ে আগে কাঠামো পুজো হয়েছে। নটি পুকুরের মাটি ও লাঙলের ফলায় মাটি দিয়েই কাঠামোয় মাটির প্রলেপ পড়ে। আগে মনসা পুজো করে এই মায়ের পুজো শুরু হয়। মায়ের সঙ্গে ২৮টি দেবদেবী একসঙ্গে পূজিত হন। এরমধ্যে রাম, লক্ষণ, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর তো রয়েছেই, পাশাপাশি মায়ের কাঁধে সঙ্গী হিসাবে থাকে জয়া ও বিজয়া। এছাড়াও চামুণ্ডা, নীলশ্বরী, ষষ্ঠী, অন্নপূর্ণা সহ পঞ্চসতীও মায়ের সঙ্গেই শ্রদ্ধা সহকারে পূজিত হন। বড় সিদ্বেশ্বরী দুর্গা মূর্তি সাড়ে চার ফুটের হয়।
পুজোর ক’দিনে নানা নিয়ম পালন করা হয়। কলা গাছের সঙ্গে মাকে স্নান করানো, পাঁচ হাঁড়ি অন্ন রান্না করা, পাঁচ হাঁড়ি ডাল রান্না করা, এক হাঁড়ি শুকনো লঙ্কা তৈরি করা, নিয়ম অনুযায়ী মায়ের চুলে সুগন্ধি তেল দেওয়ার নিয়ম কানুন তো রয়েছেই।
সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত বিভিন্ন রকমের মাছ দিয়ে মায়ের ভোগ রান্না করা হয়। সপ্তমী দিন দু’টি পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। অষ্টমী ও নবমীতে অগণিত ভক্ত পাঁঠা বলি দেন। পুজোয় অংশগ্রহণ করতে ও পাঁঠা বলি দিতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা কলকাতা, রামপুরহাট, তারাপীঠ, মুর্শিদাবাদ, শিলিগুড়ি থেকে প্রতিবছর ভক্তরা আসেন। এছাড়াও এই পুজোকে ঘিরে পাড়াপ্রতিবেশীদের উৎসাহ থাকে চোখে পড়ার মতো। পুজোতে নিয়মমতো মাছ ভোগ দেওয়া হয়। বলির মাংস রান্না করেও মায়ের সামনে দেওয়া হয়। দশমী দিনে তাঁদের বিসর্জনের নিয়মও আলাদা। জলে আগে দুটি নীল ফুল ভাসিয়ে দেওয়া হয়। তারপর সন্ধ্যায় লণ্ঠন জ্বালিয়ে মাকে বিদায় দিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
বংশ পরম্পরায় এই পুজোর সেবাইত রয়েছেন অরুণ পাল। তিনি বলেন, মায়ের নির্দেশ মেনেই পুজো করা হয়। মা খুব জাগ্রত। এটা বলে, বর্ণনা করে বোঝানো যাবে না। খুবই শ্রদ্ধা ও ভক্তি সহকারে পুজো হয়। ভোগ দেওয়ার জন্য ভক্তের ঢল নামে। বংশপরম্পরায় এই প্রতিমা গড়ছেন মৃৎশিল্পী উজ্জ্বল ভূঁইমালি। তিনি বলেন, এই প্রতিমা গড়তে খুব ভালো লাগে। মনে শান্তি আসে। প্রতিমা যেভাবেই গড়া হোক না কেন, একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি,পুজোর সময় মা নিজের রূপ ধারণ করেন। ভালো লাগে। নিজের গড়া প্রতিমার সেই রূপ বদল দেখে মন প্রশান্তিতে ভরে যায়।