খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
মূল কাহিনীটিই উপভোগ্য। দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী ম্যাজিস্ট্রেট রায়বাহাদুর বংশলোচন ব্যানার্জি অসাধারণ ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু তাঁর সব ক্ষমতাই ভণ্ডুল হয়ে যায় নিজের গিন্নির সামনে এলে। বিকেলবেলায় শরীরচর্চার কারণে বেলেঘাটার খালপাড়ে হাঁটা বংশলোচনের রোজকার অভ্যেস। সেখানেই একদিন বিকালে এক ছাগল তাঁর ধুতির খুঁট ধরে টানতে থাকে, তাঁর সমস্ত সিগার চিবিয়ে খায়; এমনকী সিগার কেসটি পর্যন্ত। ছাগলটির প্রতি মায়ায় পড়ে যান বংশলোচন। তাঁর সঙ্গেই ছাগলটি ঢুকে পড়ে বংশলোচনের বাড়িতে। ব্যাস, শুরু হয়ে যায় ধুন্ধুমার কাণ্ড! তাতেই উথালপাথাল কেরোসিন ব্যান্ড, মজলিশি আড্ডা। এমন সব কাণ্ডকারখানার পরিণতি অবশ্য শান্তিতেই হয়। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত অশান্তি চলেছে নানান ঘটনায় হাস্যরস জমজমাট হয়ে ওঠে ততক্ষণ।
শিল্পীরা যদি তুখোড় না হন, তবে হাসির নাটক জমানো মুশকিল। কিন্তু রঙ্গলোক-এর এই প্রয়াসে শিল্পীরা অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন চরিত্র রূপায়ণের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন ধারাবাহিকের দুই ব্যস্ত জনপ্রিয় শিল্পী সুদীপ মুখোপাধ্যায় এবং সঞ্জীব সরকার দুটি প্রধান চরিত্রে। প্রথম জন শিব ঠাকুরের ভূমিকায়, দ্বিতীয় জন বংশলোচনের চরিত্রে। দু’জনের অভিনয় গুণে চরিত্র দুটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। আলাদা করে বলতে হয় বংশলোচনের দজ্জাল স্ত্রীর চরিত্রে অপর্ণা বিশ্বাস, মা দুর্গার চরিত্রে সোনালি চট্টোপাধ্যায়, বংশলোচনের কন্যার চরিত্রে চন্দ্রাণী ভট্টাচার্য, পরিচারিকার চরিত্রে জবা সরকার কেরোসিন ব্যান্ডের নটবরের চরিত্রে শ্যামল সরকার, সহকারী নিয়োগীর চরিত্রে নীলাভ চট্টোপাধ্যায়, মিয়াঁর চরিত্রে শ্যামল চক্রবর্তীর কথা। বহু শিল্পীর ভিড়। ছোট-বড় নানান চরিত্র। কিন্তু টিমওয়ার্ক নজর কাড়বেই।
‘দ্যাখেন দ্যাখেন চেয়ে দ্যাখেন’ গানটি এখানেও ব্যবহৃত হয়েছে। সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে দুটি নতুন গান, যার রচয়িতা সুচেতনা চন্দ্র এবং সুরকার অরুণ নন্দী। কনসার্টের বাজনার সঙ্গে শিল্পীরা যে গানগুলি গেয়েছেন নৃত্যাভিনয়ের মাধ্যমে তা তারিফযোগ্য। এই মজাদার গানের সঙ্গে আরও মজা জমেছে লম্বকর্ণের চরিত্রে কাজল শম্ভুর আচার-আচরণ। মঞ্চকে সুন্দর করে সাজিয়েছিলেন সন্দীপ সুমন ভট্টাচার্য। আলো-আঁধারির কাজে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন সুদীপ সান্যাল। সর্বোপরি পালাটির সম্পাদনা ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শুভ গুপ্তভায়া। এমন একটি কাজকে সুষ্ঠুভাবে তুলে ধরার জন্য তিনি অবশ্যই সাধুবাদ পাবেন।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি রঙ্গলোক গোষ্ঠীর যাত্রা শুরু। এই মুহূর্তে এই গোষ্ঠী তিনটি পূর্ণাঙ্গ নাটক প্রযোজনা করে চলেছে। প্রতি বছর প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে তারা নাটকের কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মান জানিয়ে থাকে। ১১ জানুয়ারির অভিনয়ের শুরুতে তারা ‘গৌতম সেন স্মৃতি সম্মাননা’ প্রদান করে নাট্যজগৎ ও নাট্য সাহিত্যের স্বনামধন্য ব্যক্তি প্রভাতকুমার দাসকে। তিনি তাঁর বক্তব্যে অপ্রতুল দর্শকসংখ্যা নিয়ে যে দুঃখ প্রকাশ করলেন তা সকলেরই মনের কথা। ঘরবন্দি সিরিয়ালের দর্শকেরা যেন সাংস্কৃতিক জগৎ থেকেই নিজেদের গুটিয়েই নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠা দিবসকে মাথায় রেখে একটি স্মারক পত্রিকা প্রকাশিত হল, লেখক রজত মল্লিক। শিরোনাম ‘থিয়েটারের সেই সব কাঠবেড়ালিরা’। সুচিন্তিত বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে লেখাটিতে। আগাম শুভেচ্ছা রইল আসছে বছর রঙ্গলোক-এর সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে পদার্পণের জন্য।