নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাঘাযতীন থেকে শুরু করে ট্যাংরা, কামারহাটি, বিধাননগর। হেলেপড়াবহুতল নিয়েশোরগোল বাড়ছে ক্রমশ। ট্যাংরার ক্রিস্টোফার রোডে পাশাপাশি যে দু’টি বহুতল হেলে পড়েছে, তার মধ্যে সবুজ রঙের বাড়িটি খালি করা ও ভাঙার নোটিস দিয়েছে কলকাতা পুরসভা। কারণ, সম্পূর্ণ বহুতলটি অবৈধ বলে জানা গিয়েছে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন,বাড়িটির অনুমোদন সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্র বাসিন্দারা দেখাতে পারেননি। এখানেই উঠে এসেছে নতুন প্রশ্ন। ওই বহুতল আবাসনের ১৩টি ফ্ল্যাটে বিভিন্ন পরিবার বসবাস করছে। পুরসভার অনুমোদন ছাড়াই যদি বাড়িটি তৈরি হয়ে থাকে, মিউটেশন ও সম্পত্তি করের কোনও নথি যদি না মেলে, তাহলে সেখানে কীভাবে পুরসভার জলের লাইন, নিকাশি, এমনকী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হল? ওয়াকিবহাল মহল বলছে, সবটাই হয়েছে বেআইনিভাবে।
সেখানকার বাসিন্দা তথা ওই ঠিকা জমির ‘প্রজা’ পার্থ সেনগুপ্ত বলেন, ‘প্রোমোটার ঠিকার কাগজপত্র, আধার কার্ড নিয়েছিলেন। উনিই সবটা করে দিয়েছেন। এত আইনি বিষয় তো আমরা বুঝি না। প্রোমোটার যা বলেছেন, সেটাই শুনেছি।’ সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এক্ষেত্রে সবটাই বেআইনিভাবে, বলা ভালো টাকার বিনিময়ে হয়েছে। এক পুরকর্তা বলেন, ‘ঠিকার জমিতে আগে থেকেই বাসিন্দারা থাকতেন। ঠিকারজমিতে গড়ে ওঠা বস্তি বা কলোনি এলাকায় বহুকাল ধরেই পুরসভার জলের লাইন রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ সংযোগওছিল। পুরসভার জলের ওই একটি লাইন থেকেই সম্ভবত বহুতলের ভূগর্ভস্থ রিজার্ভারে জল নেওয়া হয়। সেই জলই পাম্প করে উপরের তলায় তোলা হয়েছে, যা পুরোপুরি অবৈধ।’
এদিকে, ট্যাংরার হেলে পড়া বহুতলের ক্ষেত্রেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে কলকাতা পুরসভা। বাড়িটির ‘স্ট্রাকচারাল স্টেবিলিটি টেস্ট’ না করে ভাঙারকাজশুরু করবে পুরকর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে যান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক। বাড়িটি কতটা হেলেছে, আরও কতটা হেলতে পারে, সেবিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সেখানে মাপজোকের যন্ত্রপাতিও বসানো হয়েছে। আজ, শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞের তরফে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা পড়তে পারে। ইতিমধ্যে হেলে পড়া বাড়ির প্রোমোটারের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করেছে পুরসভা। ‘বিপজ্জনক’ লেখা বোর্ডও বহুতলটির গায়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিন মেয়র বলেন, ‘ওঁরা (ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা) আমাদের কোনও স্যাংশন প্ল্যান দেখাতে পারেননি। পাশেই নির্মীয়মাণ সাদাবাড়ির কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।যে বাড়িতে লোকআছে, সেখানে স্ট্রাকচারাল স্টেবিলিটি টেস্ট করা হয়েছে। কতটা ভাঙা হবে, রিপোর্ট পাওয়ার পর সেটা ইঞ্জিনিয়াররা ঠিক করবেন।’
এছাড়া, এদিন বেলেঘাটা মেইন রোড সংলগ্ন ইস্ট কোলিয়া রোডে ফের একটি বহুতল পাশের বাড়ির গায়ে হেলে পড়ার খবর মিলেছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দারা অহেতুক আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। সেই প্রসঙ্গ টেনে মেয়র এদিন বলেন, হেলে পড়া বাড়ি মানেই বিপজ্জনক নয়। স্ট্রাকচারাল স্টেবিলিটি ঠিক থাকলে সেটা ঠিক আছে। কলকাতায় এমন অনেক বাড়িআছে, যেগুলি সামান্য হেলে পড়েছে, কিন্তু বিপজ্জনক নয়। বছরের পর বছর এভাবেই রয়েছে সেগুলি।’