বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

সমাজে আলোর দিশারি দুই চিরজাগ্রত আলোকবর্তিকা
অতূণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শীতের শেষ বসন্তের আগমন। বসন্ত যেন নতুনের শুরু। প্রকৃতি এই সময় শীতের রুক্ষতা ত্যাগ করে নতুন করে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। শীত বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে গাছে গাছে গজিয়ে ওঠা নতুন কচি কচি পাতায় প্রকৃতি তার অপরূপ রূপে সেজে ওঠে। ফুল ফোটে। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে ফাল্গুন মাস। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে ফেব্রুয়ারি মাস। বছরের সবচেয়ে কম দিনের মাস। এই ফেব্রুয়ারি মাস বাংলা তথা বাঙালির খুব গর্বের মাস। মাতৃভাষা বাংলার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এসেছিল এই মাসেই। আর এমন একটি মাসের ১৮ তারিখটি সর্বকালের বরেণ্য দুই বাঙালি মহামানবের জন্মদিন। প্রায় ৩৫০ বছরের ব্যবধানে দুই মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেন এই দিনটিতে। দেশ কাল সময়ের বাধা অতিক্রম করে তাঁরা দুজনই আজও স্বমহিমায় আমাদের অন্তরে প্রতিষ্ঠিত। ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮ তারিখটি যেন এক মিলন সূত্র। 
আজ থেকে ৫৩৯ বছর আগে নদীয়ার নবদ্বীপে জগন্নাথ মিশ্রের ঘরে ফাল্গুনের এক পূর্ণিমার সন্ধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বম্ভর মিশ্র। দোল পূর্ণিমার দিন শচীমাতার কোলে জন্ম নেওয়া সেই শিশু পরবর্তীকালে শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য নামে হন জগৎ বিখ্যাত। তবে বাঙালির কাছে তাঁর পরিচয় মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব বলে। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। অত্যন্ত ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী। তৎকালীন সারস্বত আরাধনার মূল কেন্দ্র ভূমি নবদ্বীপে তাঁর পরিচয় নিমাই পণ্ডিত নামে। তাঁর পাণ্ডিত্যের খ্যাতি বাংলার সীমা ছাড়িয়ে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পণ্ডিতদের তর্কে পরাজিত করে তিনি তখন খ্যাতির শীর্ষে। প্রথমা স্ত্রী লক্ষ্মী  দেবীর অকাল মৃত্যুর পর বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি। পিতার মৃত্যুর পর  গয়াতে  পিণ্ডদান শেষ করে আসার পর তিনি ঈশ্বর পুরীর কাছে কৃষ্ণ মন্ত্রের দীক্ষিত হন। এই দীক্ষা লাভের পর সমাজে অন্য সকলের মতো বেড়ে ওঠা নিমাইয়ের জীবনে আসে এক বিরাট পরিবর্তন। কৃষ্ণ নাম সাধনায়  নিজেকে নিয়োজিত করে ধীরে ধীরে তিনি অধ্যাপনার কাজ  বন্ধ করে দেন। কৃষ্ণ নাম সাধনা ও  রস আস্বাদনের মাধ্যমে তাঁর জীবনে আসে রূপান্তর। শুরু হয় সাধকের জীবন। এরপর সংসার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে কেশব ভারতী কাছে সন্ন্যাস ব্রত গ্রহণ করে হলেন শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য ভারতী। শচীনন্দন পরিণত হন এক নতুন মানুষে। কৃষ্ণ সাধনায় পদব্রজে ঘুরে বেড়ান দেশের নানা প্রান্তে। ইসলাম শাসনের শেষ দিকে তৎকালীন ভারতবর্ষে ধর্মের নামে মানুষে মানুষের বিভেদ সমাজকে জর্জরিত করে রেখেছিল।  মানুষের মধ্যে উচ্চ -নিচ শ্রেণি বিভাগের ভয়াবহ ছবিটা তিনি প্রত্যক্ষ করলেন পরিব্রাজক জীবনে। সুদীর্ঘ কঠোর তপস্যা শেষে তিনি আচণ্ডালে হরিরাম মহামন্ত্র ছড়িয়ে দিলেন। 
সমাজে পিছিয়ে পড়া  শত দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত মানুষকে দিলেন মর্যাদা। নামের মহিমায় অভিষিক্ত করলেন সমাজের সকল স্তরের মানুষকে। শ্রীগৌরাঙ্গের জীবন 
অধ্যাত্ম সাধনা ও জনকল্যাণের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন। তাই শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, ‘হাতির বাইরের দাঁত যেমন 
শত্রুকে আক্রমণের জন্য এবং ভেতরের দাঁত খাদ্যচর্বন 
করিয়া নিজের শরীর পোষণের জন্য থাকে, তদ্রূপ শ্রী গৌরাঙ্গের অন্তরে ও বাহিরে দুই প্রকার ভাবের প্রকাশ ছিল। বাইরে মধুর ভাব সহায়ে তিনি লোককল্যাণ সাধন করিতেন এবং অন্তরের অদ্বৈতভাবে প্রেমের চরম পরিপুষ্টিতে ব্রহ্মভাবে প্রতিষ্ঠিত হইয়া স্বয়ং ভূমানন্দ অনুভব করতেন’। শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যের  সর্বজীবে প্রেম ও দয়ার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি বলছেন ,‘সমুদয় ভারতেই শ্রীচৈতন্যের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।... তাঁহার প্রেমের সীমা ছিল না। সাধু -পাপী, হিন্দু মুসলমান, পবিত্র অপবিত্র , বেশ্যা-পতিত, সকলেই তাঁর প্রেমের ভাগী ছিল’। স্বামীজি বলছেন, ‘জ্ঞান মিশ্র ভক্তির সঙ্গে ভগবানকে ডাকবে। ভক্তির সঙ্গে বিচারবুদ্ধি রাখবে। এছাড়া চৈতন্যদেবের থেকে আরও নেবে ,তাঁর heart( হৃদয় বত্তা), সর্বজীবে ভালোবাসা, ভগবানের জন্য টান,আর তাঁর ত্যাগটা জীবনে আদর্শ করবে’।
শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যের জন্মের  ৩৫০ বছর পর হুগলির কামারপুকুরে জন্মগ্রহণ করেন শ্রী গদাধর চট্টোপাধ্যায়। পুঁথিকার অক্ষয় কুমার সেন লিখছেন—
প্রসবের স্থান নির্ধারিত ঢেঁকিশালে।
প্রসব হইল আই কুশলে কুশলে।।
সন বারো বিয়াল্লিশ ছয়ই ফাল্গুনে।
শুক্লপক্ষ বুধবার দ্বিতীয়া সেই দিনে।।
এই দিনটিও ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে ছিল ১৮৩৬ সালের১৮ ফেব্রুয়ারি। ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় পুত্র গদাধর অত্যন্ত মেধাবী হলেও প্রথাগত শিক্ষায় তিনি বাধা পড়তে চাননি। তবে বড়দের কাছ থেকে শুনে অসাধারণ স্মৃতিধর গদাধরের শাস্ত্র পুরাণ মহাভারতের কথা ছিল কণ্ঠস্থ। কৈশোর শেষে দাদা রামকুমারের হাত ধরে কলকাতায় উপস্থিত হন। প্রথমে ঝামাপুকুর পরে দক্ষিণেশ্বরে। রানি রাসমণির প্রতিষ্ঠিত ভবতারিণী মন্দিরে গদাধর চট্টোপাধ্যায় দীর্ঘ বারো বছর সুদীর্ঘ সাধনার করেন।   গদাধর থেকে তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস-এ পরিণত হলেন। তিনি কখনও ভৈরবী যোগেশ্বরী, কখনও বা নাগা সন্ন্যাসী তোতাপুরি বা কখনও মুসলিম  সুফি সাধক গোবিন্দ রায়ের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে সাধনার সর্বোত্তম অংশে পৌঁছে যান। উপলব্ধি করেন সব মত ও পথ দিয়েই ঈশ্বরের সাধনা করলে সেই একই ঈশ্বরের কাছেই পৌঁছানো যায়। সমাজের  উচ্চ নিচ, ধনী দরিদ্র শিক্ষিত -অশিক্ষিত নানা বেড়াজালে আবদ্ধ মানুষকে শোনালেন সম্প্রীতির কথা। পুরুষ শাসিত সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদেরকে তিনি মাতৃভাবে সম্বোধন করে এক বিপ্লব এনে দিলেন। সাড়ে ৩০০ বছরের ব্যবধানে একই দিনে জন্মগ্রহণ করা এই দুই মানুষ ছিলেন যথার্থভাবেই সমাজকে অন্ধকার থেকে আলো নিয়ে যাওয়ার এক আলোকবর্তিকা। নিজেদের সময় থেকে শত সহস্র যোজন আগে অবস্থান করে জগদ্বাসীকে শেখালেন আত্মমর্যাদা। দীর্ঘ সাধনা শেষে তাঁরা উপলব্ধির জগতে সাধারণ মানুষের কল্যাণের ভিত্তি গড়ে দিল। তাঁদের সপ্রেম আহ্বান ও লোককল্যাণকর শিক্ষা জগৎকে নতুন বিষয় দেখাল। যা শুধু বিগত দিনেই নয়, অনাগত ভবিষ্যতের মানুষকেও সঠিক পথের দিশা নির্দেশ করে। তাঁদের দুজনের জীবনের ত্যাগ -তপস্যা, সর্বোপরি মানুষের প্রতি ভালোবাসা তাঁদেরকে মানব থেকে দেবতায় পরিণত করেছে। তাই তাঁরা আজ  জগৎ জুড়ে দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত। কোটি কোটি মানুষের জীবন দেবতা। মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য, কিংবা শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সকল অন্ধকার  হতে আলোর যাত্রাপথের উত্তরণের দুই চির জাগ্রত আলোকবর্তিকা।
ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে তাঁরা একই দিনে জগতে আবির্ভূত হয়েছেন। দুজনেই সময় উত্তীর্ণ লোকশিক্ষক। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ও শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যের জীবন, শিক্ষা, সকল মানুষের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা যে জগতের জন্য চিরকল্যাণকর—-তা জগদ্বাসীকে মানতেই হবে।
2d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

শাস্ত্র অধ্যয়নে গতি বৃদ্ধি ও পরীক্ষায় শুভ ফল লাভের সম্ভাবনা। নতুন কর্মপ্রাপ্তি হতে পারে। দাম্পত্যে...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৬.১১ টাকা৮৭.৮৫ টাকা
পাউন্ড১০৭.৮৫ টাকা১১১.৬২ টাকা
ইউরো৮৯.২২ টাকা৯২.৬১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা