বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

বাংলা যে দিল্লি নয় জানে বিজেপিও
তন্ময় মল্লিক

২৭ বছর পর দিল্লির ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। অরবিন্দ কেজরিওয়াল হারায় বঙ্গ বিজেপি প্রচণ্ড উত্তেজিত। তাই একুশে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অর্ধেক পুঁজি জোগাড়ে ব্যর্থ হয়েও বাংলায় সরকার গড়ার হুঙ্কার দিচ্ছে। এসবই হচ্ছে একুশের ভোটের মতো ছাব্বিশেও কী হয়-কী হয় আবহ তৈরির লক্ষ্যে। একুশে ছিল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, এবার হিন্দুত্ব। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় কোনও লড়াই-ই নেই। তাই বিজেপিকে ঠেকাতে জোটেরও দরকার নেই। তৃণমূল একাই কাফি। অবশ্য এটার হক তাঁর আছে। কারণ ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে সমূলে উৎপাটিত করার হিম্মত ও মোদি-শাহ জুটির বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের দম তিনিই দেখিয়েছেন। তাই এটা হুঙ্কার বা আস্ফালন নয়, তাঁর আত্মবিশ্বাস।
ছাব্বিশের ভোটে বাংলায় কী হবে, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপির অনেকেই বলছেন, ‘দিল্লির পর এবার বাংলা’। তবে, এটা বিজেপির পুরনো কৌশল। এক দশক ধরে এটাই চালিয়ে যাচ্ছে। কোনও রাজ্য দখল করলেই গেরুয়া শিবির ‘এবার লক্ষ্য বাংলা’ রেকর্ডটা বাজিয়ে দেয়। ত্রিপুরা দখলের পরেও জোর হাওয়া তোলার চেষ্টা হয়েছিল। বলেছিল, ‘ত্রিপুরার পর এবার বাংলা।’ একই কথা শোনা গিয়েছিল বিহার ও ওড়িশা দখলের পরেও। তবে 
এই হুঙ্কার শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নয়, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেও শুনতে হয়েছে বারবার। ঝাড়খণ্ড দখলের জন্য গেরুয়া শিবির মরিয়া চেষ্টা চালালেও সফল হয়নি। কারণ কারও পা মাটিতে থাকলে কুলোর বাতাস দিয়ে তাকে উড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব।
রাজনীতি হল লড়াই। শক্তিধর প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে পারলে মানুষ তাঁকে বীরের সম্মান দেয়। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে জেলে ভরেছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সি। হেমন্ত ময়দান ছাড়েননি। স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপির সঙ্গে সমানে টক্কর চালিয়ে গিয়েছেন। তাই অভিযোগ সত্যি বা মিথ্যে যাই হোক না কেন, ঝাড়খণ্ডের মানুষ তাঁকে বিজেপি বিরোধী বলেই মনে করে। কিন্তু কেজরিওয়াল লড়াইয়ের রাস্তায় হাঁটেননি। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন। হয়তো ভেবেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে লড়লে সহানুভূতি পাবেন। কিন্তু দিল্লির মানুষ তাঁর ‘নাটক’ পছন্দ করেনি। ভোটের ফলেই সেটা স্পষ্ট। 
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির পাখির চোখ। তারজন্য মোদি-শাহ জুটি আগেও ঝাঁপিয়েছে, আগামী দিনেও ঝাঁপাবে। কিন্তু তাঁরা জানেন, প্রতিপক্ষ হিসেবে কেজরিওয়াল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক নয়। একুশের ভোটে তাঁরা সেটা ভালোই টের পেয়েছেন। দল ভাঙিয়ে, কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে লেলিয়ে দিয়ে, মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে ‘দিদি ও দিদি’ বলে কটাক্ষ করেও টার্গেটের অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার আগেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল। 
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, দিল্লিতে বিজেপি জয়ী হয়নি, হেরেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। শুধু দুর্নীতি ইস্যুতেই নয়, পরিষেবা নিয়েও দিল্লিবাসীর ক্ষোভ ছিল বিস্তর। বাজেটে আয়কর ছাড়ের ঘোষণায় বিজেপি কিছুটা সুবিধে পেলেও আপ মার খেয়েছে সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে। বছর তিনেক আপের সংগঠন বলে কিছুই ছিল না। যে প্রত্যাশা জাগিয়ে আপ ইনিংস শুরু করেছিল তার জোশ ধরে রাখতে পারেনি, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা। তাতে মানুষ প্রচণ্ড চটেছিল। তার ফায়দা ঘরে তুলেছে বিজেপি। 
দিল্লিতে বহু বছর ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। তা সত্ত্বেও আপের ব্যর্থতার লাভ তারা ঘরে তুলতে পারেনি। কারণ যোগ্য নেতৃত্বের অভাব। বিজেপি সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। ২০১৬ সালের পর পশ্চিমবঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছিল। সিপিএম নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে বিজেপি এ রাজ্যে জায়গা পেয়েছিল। দিলীপ ঘোষের গরমাগরম ভাষণে অনেকেই মনে করেছিলেন, তৃণমূলের মোকাবিলা সিপিএম নয়, বিজেপিই করতে পারবে। সেই কারণে বিজেপিই হয়ে ওঠে প্রধান বিরোধী দল। দিল্লিতেও বামেদের মতোই কংগ্রেস দিন দিন তলিয়ে যাচ্ছে। এইজন্যই বোধহয় বলে, এক নম্বর একবার দ্বিতীয় হয়ে গেলে লড়াইয়ে বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না।
তবে একথা ঠিক, কেজরিওয়াল নিজেকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির একটি আসনেও আপ জিততে পারেনি। তাতেই বোঝা গিয়েছিল, কেজরিওয়ালকে জেলে পাঠানোর বিন্দুমাত্র সহানুভূতি আপ পায়নি। দিল্লির মানুষ তাঁকে পছন্দ করছেন না। তখনই যদি কেজরিওয়াল ক্ষোভের কারণ খুঁজে সংশোধন করে নিতেন, তাহলে দিল্লির ভোটের ফল অন্যরকম হতো। 
কাজ করলে ভুল হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে কেউ ভুল স্বীকার করে শুধরে নিলে মানুষ তাকে ক্ষমাও করে। তার জ্বলন্ত প্রমাণ একুশের নির্বাচন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যের প্রায় অর্ধেক আসনে জিতেছিল বিজেপি। তারজন্য সিপিএমের স্টাইলে ‘মানুষ আমাদের ভুল বুঝেছে’ না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেঁটেছিলেন সংশোধনের রাস্তায়। তাঁর নির্দেশে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনী কেন্দ্রে রাত কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন। তা করতে  গিয়ে অনেক জায়গায় ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। তাতে জনগণের মনে জমে থাকা ক্ষোভ, রাগ বেরিয়ে গিয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘শিক্ষা’ নিয়েছিলেন বলেই একুশে তৃণমূল ড্যাং ড্যাং করে জিতেছিল। কিন্তু আইআইটিয়ান কেজরিওয়াল সেই শিক্ষাটাই নিলেন না। পরিণতি? গোহারা হল আপ।
তাছাড়া অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে কেউ কখনওই কট্টর বিজেপি বিরোধী বলে মনে করেনি। আপ সরাসরি বিজেপিকে হারিয়ে কোনও রাজ্যের ক্ষমতা দখল করেনি। দিল্লিতে এবং পাঞ্জাবে আপ ক্ষমতা পেয়েছিল কংগ্রেসকে হারিয়ে। কিন্তু যে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় সেখানে কোনও দাগই কাটতে পারেনি। অনেকেই মনে করেন, কেজরিওয়াল ঘুরপথে বিজেপিকে ক্ষমতা দখলে সাহায্য করে যাচ্ছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তিনি ‘বিজেপির বন্ধু’ বলেই বিবেচিত হয়েছেন। রাজনৈতিক সচেতন মানুষ তাঁকে ‘পাল্টুরাম’ না বললেও নবীন পট্টনায়কের মতো তাঁকেও ‘সুবিধাবাদী’ বলেই মনে করে। 
পরিসংখ্যান বলছে, দিল্লির ১৮টি আসনে বিজেপি জয় পেয়েছে কংগ্রেস ও আপের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হওয়ায়। বাংলায় এই সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তৃণমূল তৈরির পর থেকেই মালদহ ও মুর্শিদাবাদ বাদে কংগ্রেস কার্যত সাইনবোর্ড সর্বস্ব দলে পরিণত হয়েছে। আর বামেদের সিংহভাগ ভোট আগেই বিজেপিতে শিফ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই রাজ্যের প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটের প্রায় সবটুকুই পায় বিজেপি। ফলে বিজেপির নতুন করে ভোটবৃদ্ধির জায়গা তেমন নেই। একমাত্র রাস্তা, শাসক দলকে ভাঙা। কিন্তু সেই সুযোগও 
এবার ক্ষীণ।
গত বিধানসভা ভোটের আগে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের তোলা হাওয়ায় ভেসে অনেকেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় এজেন্সির তৎপরতা আকাশ ছুঁয়েছিল। তাতেও দু’শো টার্গেট নিয়ে নামা বিজেপি একশো টপকাতে পারেনি। তাই চার্টার্ড প্লেনে চড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতাদের বেশিরভাগই ‘মুচলেকা’ দিয়ে তৃণমূলে ফিরেছেন। একুশের পর বাংলায় প্রতিটি নির্বাচনেই বিজেপির ভোট কমেছে। বঙ্গ বিজেপি সাংগঠনিক হালও করুণ। ‘অফার’ দিয়েও সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি। এই শক্তি দিয়ে আর যাই করা যাক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে না। 
ক্ষমতায় থাকলে ‘অ্যান্টি ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টর’ কাজ করে। তা সে কেন্দ্র সরকার হোক বা রাজ্য সরকার। এই কারণেই চারশো আসনের স্লোগান দিয়ে নরেন্দ্র মোদির দল আড়াইশো টপকাতে পারেনি। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও দুর্নীতির কারণে পশ্চিমবঙ্গেও ‘অ্যান্টি ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টর’ কাজ করছে। কিন্তু তা যাতে সরকার গড়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে, তারজন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতিয়ার সামাজিক প্রকল্প। মোদি সরকারের বঞ্চনার এক নম্বর টার্গেট বাংলা। ছুতো পেলেই গরিব মানুষের টাকা বন্ধ করছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার আঁচ খেটেখাওয়া মানুষের গায়ে লাগতে দিচ্ছেন না। প্রতিটির বিকল্প প্রকল্প চালু করেছেন।
কেন্দ্রের আবাসের টাকা বন্ধ। তা সত্ত্বেও ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে ১২ লক্ষ উপভোক্তার প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার কাজ শেষ। দ্বিতীয় দফার টাকাও রেডি। আরও ১৬ লক্ষ গরিব পরিবারের মাথার উপর ছাদের পরিকল্পনাও মমতা সেরে ফেলেছেন। বছরের পর বছর ঝুলে থাকা ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্যও বরাদ্দ করেছেন ৫০০ কোটি টাকা। প্রতিটি প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তিনি বাংলার সাধারণ মানুষের মনে ভরসার অট্টালিকা নির্মাণ করেছেন। তাকে দিল্লি জয়ের কুলোর বাতাস দিয়ে যাঁরা ভাঙার স্বপ্ন দেখছেন, রাজনীতির পাঠশালায় তাঁদের ‘মহামূর্খ’ না বললেও  কিছুতেই ‘পণ্ডিত’ বলা যাবে না।
12h 12m ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

বিশেষ কোনও পারিবারিক কারণে মানসিক দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে। কাজকর্মের ক্ষেত্রে বিশেষ  সুখবর পেতে পারেন।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৬.০৩ টাকা৮৭.৭৭ টাকা
পাউন্ড১০৭.২৮ টাকা১১১.০৪ টাকা
ইউরো৮৯.২২ টাকা৯২.৬১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা