বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

বাজেট ২০২৫: বিষিয়ে ওঠা ক্ষতে স্টিকিং প্লাস্টার লাগানোর চেষ্টা
প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের কেন্দ্রীয় বাজেট বিশ্লেষণ করার আগে ‘বর্তমান’-এর পাঠকদের প্রথমেই মনে করিয়ে দিতে চাই, বাজেট একটি দিশা মাত্র। অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল বাজেটে ঘোষিত পরিকল্পনাগুলি আদতেই বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, সেটা দেখা। বা বাস্তবায়িত হলেও ভারতীয় অর্থনীতির উপর সেই সব পরিকল্পনার প্রভাব ঠিক কী। ২০২৩ সালে ‘অমৃতকাল’ বাজেট পেশ করতে গিয়ে নির্মলা সীতারামন জানিয়েছিলেন, প্রায় সাড়ে ১১ কোটি কৃষককে সাহায্যর জন্য দু’লক্ষ কোটির উপর টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অথচ গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন—এই ছ’মাসের মধ্যে শুধু মহারাষ্ট্রেই প্রায় সাড়ে ৫০০ কৃষক আত্মহত্যা করেছিলেন। ভারতজুড়ে কৃষকদের দুর্দশা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে উপ রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকার স্বয়ং বলেছিলেন, ‘কৃষকদের পাশে সরকারকে অবিলম্বে দাঁড়াতে হবে।’ সরকার দাঁড়িয়েছে কি? ‘স্কিল লোন’ থেকে শুরু করে মহিলাদের জন্য আরো বেশি হস্টেল, প্রায় হাজারখানা আইটিআই-এর আধুনিকীকরণ, এমন বহু প্রতিশ্রুতিতে ভরপুর ছিল ২০২৪-এর বাজেট। দুঃখের কথা এই যে, বাজেটের দিনটির পর থেকে এই সব বিষয়েই আর কোনও আলোচনা, (অন্তত সরকারের পক্ষ থেকে) আপনাদের চোখে পড়বে না। এ বছরের বাজেটেও গত বছরের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাগুলি নিয়ে কোনও খবর নেই। এদিকে বেকারত্বের হার বছর বছর বেড়েই চলেছে।
সম্ভবত গত বছরগুলির ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েই নির্মলা সীতারামন এ বছর বেকারত্ব ঘোচানোর ব্যাপারে যাই বলেছেন, সব ভাসা ভাসা। শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রগুলিতে চাকরি বাড়ানোর জন্য বা ভারতীয় তরুণ-তরুণীদের স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য সরকারের পরিকল্পনা আছে—কিন্তু সে পরিকল্পনা ঠিক কী? তা নিয়ে উচ্চবাচ্যই নেই অর্থমন্ত্রীর। বিজেপি সরকার বহু বছর ধরে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে বাজার গরম করে রেখেছে। অথচ ভারত এখনও চলছে সার্ভিস সেক্টরকে আঁকড়ে ধরেই। ম্যানুফাকচারিং-এ সাফল্য ধরাছোঁয়ার বাইরে। আদৌ সে সাফল্য আসবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহের প্রভূত অবকাশ রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আসা হবে। ব্যবসার পথ সুগম করে তোলা হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে গতিশীল করে তোলা হবে। এইটুকুই। কোনও তথ্য নেই, কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। এই হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া কথার বাইরে নির্দিষ্ট কিছু জানতে চাইলে আজকের কেন্দ্রীয় বাজেট অন্তত কিছুই জানাতে পারবে না।  
আমার ব্যক্তিগত মত এই যে, নির্মলার মতো অপদার্থ অর্থমন্ত্রী ভারত এর আগে দেখেনি। সমস্যা এই যে, নির্মলার বৌদ্ধিক গভীরতা বা দক্ষতা কত, সে নিয়ে আমাদের সম্যক ধারণাই নেই। কারণ, বাজেট থেকে শুরু করে ভারতীয় অর্থনীতির প্রতিটি খুঁটিনাটির দায়িত্বে আসলে রয়েছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি। নির্মলা প্রধানমন্ত্রীর হাতের পুতুল মাত্র। ফলে প্রতি বছর নরেন্দ্র মোদি যেভাবে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি তৈরি করে দিচ্ছেন, নির্মলা তোতাপাখির মতো সেগুলোই আউড়ে যাচ্ছেন। এবং নরেন্দ্র মোদির জমানায় প্রায় প্রত্যেক বছরেই মার্কেটিং গিমিক-এ পর্যবসিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাজেট। এই বছর যেমন বিশাল হইচই শুরু হয়েছে আয়কর লাঘব নিয়ে। বাজেট ঘোষণা শেষ হওয়া মাত্র সরকারের পেটোয়া মিডিয়ারা বলতে শুরু করেছে, এরকম জনদরদী বাজেট বহু বছরে দেখা যায়নি, বিজেপি ছাড়া ভারতের মানুষের কথা অন্য কোনও রাজনৈতিক দল ভাবে না ইত্যাদি। অথচ আয়কর লাঘব করে ভারতীয় উপভোক্তাদের সাহায্য করার দরকার ছিল কোভিডের সময় থেকেই। তখন কিন্তু বারবার বিজেপি সরকার কর ছাড় দিয়ে এসেছে শিল্পপতিদের। কোভিডের অব্যবহিত পরেই অলিগার্কি বজায় রাখার জন্য এমন বাজেট নরেন্দ্র এবং নির্মলা বানিয়েছিলেন যে, বহু শিল্পপতিকেও বাধ্য হয়ে বলতে হয়েছিল, সরকারের উচিত সাধারণ মানুষের হাতে টাকা তুলে দেওয়া। তাঁদের হাতে নয়। মূল্যবৃদ্ধির পৃথিবীতে এই কর ছাড় এখন অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার শেষ প্রচেষ্টা মাত্র। জনসাধারণকে সত্যিই সাহায্য করার ইচ্ছা থাকলে এই বাজেট অন্তত বছর চারেক আগে পেশ করা উচিত ছিল। যাই হোক, আয়কর লাঘবের ফলে কি ভারতীয় অর্থনীতি সত্যিই চাঙ্গা হবে? মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে না পারলে শুধু কর লাঘব করে ভারতীয় ক্রেতাদের উজ্জীবিত করা যাবে না। তাঁরা এই টাকাটা সঞ্চয় বা বিনিয়োগ করতেই বেশি উৎসাহী হবেন। কেনাকাটির পরিমাণ তখনই বাড়বে, যখন ভারতীয় মধ্যবিত্তদের আয় বাড়বে চাকরির মাধ্যমে। কিন্তু অর্থনীতির সামগ্রিক বৃদ্ধি না ঘটলে, বা আরও চাকরির সুযোগ না এলে, তাঁদের আয় স্থবির হয়েই থাকবে। এবং সেরকম পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র আয়কর লাঘব করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা যাবে না। 
উপভোক্তারা খুশি নয় বলে দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন। তাঁরা তাঁদের বিনিয়োগ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এই সপ্তাহেই সিএনবিসি জানিয়েছে, ২০২৪-এ বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৯৯ শতাংশ (২০২৩-এর বিনিয়োগের তুলনায়)। বিনিয়োগ আসছে না বলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিও ঘটছে না। এই যে ‘দুষ্ট আবর্ত’, এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার। ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধি এবং সরকারি বিনিয়োগ—এই দু’টিই অত্যন্ত দরকার ছিল প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে। কিন্তু এ বছরের বাজেটে দেখা যাচ্ছে, এই দু’টি বিষয় নিয়েই সরকারের কোনও পদক্ষেপ নেই। বরং, গত দু’-তিন বছরে যে পরিকাঠামো বিনিয়োগের কথা সরকার বলেছিল, সে নিয়েও নির্মলা আর কথা বাড়াননি। সম্ভবত যা পরিকল্পনা ছিল, তার অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়নি বলে! অথচ পরিকাঠামোয় যথাযথ বিনিয়োগ হচ্ছে না বলে আমাদের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প ধুঁকছে। হয়তো দেশজ চাহিদা তারা পূরণ করতে পারছে, কিন্তু বিদেশি ডিমান্ডের ক্ষেত্রে ব্যর্থ। যেমন চীন। তাদের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পক্ষেত্র প্রযুক্তিগতভাবে অনেক আধুনিক। তাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া দুরূহ হয়ে পড়ছে ভারতের জন্য। ফলে বৈদেশিক মুদ্রাও আসছে না। সেই কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আরও মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন।  
এবছরের বাজেটে আইনি এবং পুঁজি-বাজারে সংস্কারের কথা ঘোষণা হয়েছে, যা সদর্থক প্রচেষ্টা বলেই মনে করি। কিন্তু এগুলি বাস্তবায়িত হতে হতেই এই সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর জন্য যে দিশা বা স্পষ্ট করে বললে, সাধারণ মানুষের হাতে টাকার জোগান বাড়ানোর যে স্থায়ী সমাধানসূত্র দরকার ছিল, তার স্পষ্ট হদিশ কিন্তু পাওয়া গেল না। মনে রাখতে হবে, আয়করে ছাড় নেহাতই মামুলি টোটকা। দেশকে সাময়িকভাবে শান্ত করার খানিক অক্ষম প্রচেষ্টা। 
 লেখক ব্রিটেনের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের অধ্যাপক। (মতামত ব্যক্তিগত)
6d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

অপ্রত্যাশিত ক্ষেত্র থেকে অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে। কর্মস্থলে উপরওয়ালার আস্থা লাভে সক্ষম হবেন। ব্যবসায় উন্নতি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৬.৬৩ টাকা৮৮.৩৭ টাকা
পাউন্ড১০৬.৯২ টাকা১১০.৬৭ টাকা
ইউরো৮৯.১৭ টাকা৯২.৫৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা