বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

সংবিধানকে গ্রাস করল মতাদর্শ
পি চিদম্বরম

ভারতের সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘রাষ্ট্র ভারতের সর্বত্র নাগরিকদের জন্য একটি অভিন্ন দেওয়ানি আইন নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে’। বিজেপি একটি বিশেষ আদর্শের দ্বারা চালিত হয়। তাই দলটি ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি)’ শব্দগুলির উপর জোর দিয়েছে। কথাটি বোধগম্য, কিন্তু আমরা ‘নাগরিকগণ’ (সিটিজেনস) এবং ‘ভারতের সর্বত্র’ শব্দগুলিকে উপেক্ষা করতে পারি না।
প্রতিটি নাগরিকের ভারতের যেকোনও স্থানে বসবাস বা বসতি স্থাপনের অধিকার রয়েছে। 
আর সকল স্থানে একই দেওয়ানি বিধি দ্বারা নাগরিকদের পরিচালিত হওয়া উচিত। এটি নিশ্চিত করা সংবিধানের উদ্দেশ্য। 
এই অধিকার ‘সকল নাগরিকের জন্য নিশ্চিত 
করা’ রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মূলত, এই বাধ্যবাধকতা সংসদ পূরণ করেছে যে, ভারতের নাগরিকরা একই চুক্তি আইন, বিচার প্রার্থনার সময়সীমা (ল’ অফ লিমিটেশন) সংক্রান্ত আইন, যেকোনও দেওয়ানি আদালতে একই পদ্ধতি এবং সকলের নাগরিক জীবন সম্পর্কিত বিষয় (‘ফৌজদারি’ বিষয়ের পরিবর্তে) একই আইন দ্বারা পরিচালিত হয়।
উদ্ধত?
বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ এবং উত্তরাধিকারের 
মতো কিছু দেওয়ানি বিষয়ে সংসদ অবশ্যই আইন প্রণয়নের কাজ করতে পারে। তবে, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ অথবা উত্তরাধিকার সম্পর্কিত (‘সাকসেশন’ ও ‘ইনহেরিটেন্স’) আইন প্রণয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়ার যে কাণ্ডটি উত্তরাখণ্ড রাজ্যের পক্ষ থেকে করা হয়েছে, তা ঔদ্ধত্যপূর্ণ ব্যাপার। প্রথমত, আইনটি ভারতের ‘সমস্ত নাগরিকের ক্ষেত্রে’ প্রযোজ্য হবে, এমনটা উত্তরাখণ্ড নিশ্চিত করতে পারে না। এমনকী, উত্তরাখণ্ডে জন্ম নেওয়া সমস্ত ব্যক্তির উপরেও আইনটি প্রযোজ্য হবে না, যদি না তিনি ওই রাজ্যেই বসবাস (‘রেসিডেন্স’ অথবা ‘ডমিসাইল’ হিসেবে) করেন। যদি কোনও ব্যক্তির আইনটি পছন্দ না-হয় তবে তিনি ওই রাজ্য ছেড়ে অন্যত্রও চলে যেতে পারেন। উত্তরাখণ্ডের দু’জন বাসিন্দা প্রয়োজন বোধে তাঁদের বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে ফেলতে পারেন ওই রাজ্যের বাইরে কোথাও গিয়েও। তাঁদের তরফে ওই রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়া কিংবা অন্যত্র গিয়ে বিবাহ সম্পন্ন করা প্রভৃতি উত্তরাখণ্ড রুখতে পারে না।
দ্বিতীয়ত, উত্তরাখণ্ডে জন্ম নেওয়া ব্যক্তির উপর তাদের আইন ‘ভারতের সর্বত্র প্রযোজ্য’ হবে বলেও উত্তরাখণ্ড ধরে নিতে পারে না। যদি এই ধরনের ব্যক্তি উত্তরাখণ্ডের বাইরে গিয়ে বিবাহ করেন অথবা সন্তান দত্তক নেন কিংবা উইল রেজিস্ট্রেশন করেন, তাহলে প্রযোজ্য আইন সম্পর্কে প্রশ্ন উঠে যাবে। এছাড়া বলবৎ সংসদীয় আইনের সঙ্গে উত্তরাখণ্ড আইনের সংঘাত সৃষ্টি  হতে পারে। বলা বাহুল্য, এমন পরিস্থিতিতে সংসদের মাধ্যমে প্রণীত আইনটিই কার্যকর গণ্য হবে। 
উত্তরাখণ্ড একটি ইউসিসি তৈরি করতে পারে, কিন্তু বাস্তবে উত্তরাখণ্ডের কাঁধে বন্দুক রেখে কেন্দ্রীয় সরকারই গুলিটা চালাচ্ছে। তবে এটি তাদের একটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ বা মহড়া। প্রত্যাশা মতোই আইনটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কারণ ইউসিসির ধারণাটি পরীক্ষা করার উপযুক্ত সংস্থা হল ২১তম আইন কমিশন। ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট কমিশনের রিপোর্ট এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে, ‘এই কমিশন তাই একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির ব্যবস্থা করার চেয়ে সেই আইনগুলির বিষয়েই আলোচনা করেছে যেগুলি বৈষম্যমূলক। কারণ ‘এই পর্যায়ে ইউসিসি প্রয়োজনীয় বা কাম্য নয়’।’
মনে হচ্ছে যে, সমাজের পরিবর্তিত মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং রীতিনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ 
একটি প্রগতিশীল এবং উদার আইন তৈরি করা উত্তরাখণ্ডের লক্ষ্য নয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, এটি ‘পশ্চাৎপদ ব্যক্তিগত আইন’ অপসারণ করার একটি উদ্যোগ। উত্তরাখণ্ডের আইনটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের দাবিই প্রকট হয়েছে।
সংস্কার?
আইনটির তিনটি অংশ। প্রথম অংশে (ধারা 
৪ থেকে ৪৮) ‘বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ’ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয়াংশে (ধারা ৪৯ 
থেকে ৩৭৭) আলোচিত হয়েছে ‘উত্তরাধিকার’ বিষয়ে। ‘লিভ-ইন রিলেশনশিপ’ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তৃতীয়াংশে (ধারা ৩৭৮ থেকে ৩৮৯)। আর চতুর্থ অংশটি নির্দিষ্ট রয়েছে ‘বিবিধ’ বিষয়ে আলোচনার জন্য। 
অংশ ১-এর কিছু বিধান স্বাগত। একইসঙ্গে দু’জনের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক রক্ষা (বাইগ্যামি) এবং বহুবিবাহ (পলিগ্যামি) নিষিদ্ধ। মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছর। বিবাহ নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।
কিছু বিধান পরিষ্কার ‘অসাংবিধানিক’। উত্তরাখণ্ডের ভিতরে অথবা বাইরে বসবাসকারী নির্বিশেষে যাঁরা ‘বাসিন্দা’ (রেসিডেন্ট) তাঁদের সবার ক্ষেত্রেই আইনটি প্রযোজ্য। এটি একটি অতিবিস্তৃত সংজ্ঞা, যার মধ্যে পড়ছেন—(১) আপাতত উত্তরাখণ্ডে নিযুক্ত কেন্দ্রীয় সরকারের একজন স্থায়ী কর্মচারী (অর্থাৎ পোস্টেড) এবং (২) ‘কেন্দ্রীয় সরকারের’ যেকোনও প্রকল্পের সুবিধাভোগী বা বেনিফিসিয়ারি। আইনটি উত্তরাখণ্ডের আঞ্চলিক এক্তিয়ার লঙ্ঘন করতে পারে। কিছু বিধান—‘বিতর্কিত’। উদাহরণস্বরূপ বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিধান। এছাড়া কিছু বিধান রয়েছে ‘স্থিতাবস্থা’ সংক্রান্ত বা ‘স্টেটাস কোয়েস্ট’। একজন ব্যক্তি কেবল পুরুষ বা মহিলা হতে পারেন এবং ‘বিবাহ’ কেবল একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার মধ্যেই সম্পন্ন করা যেতে পারে। কিছু বিধান ‘পশ্চাৎগামী’। ‘দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার’-এর ক্ষেত্রে মান্ধাতার আমলের স্বস্তি বহাল রাখা হয়েছে।
‘লিভ-ইন রিলেশনশিপ’ সম্পর্কিত অংশ ৩ হল—একইসঙ্গে ‘পশ্চাৎগামী ধরনের’ এবং ‘অসাংবিধানিক’। উত্তরাখণ্ডের যে ‘বাসিন্দারা’ উত্তরাখণ্ডের ‘বাইরে’ অবস্থান করছেন আইনটি তাঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে দাবি করা হয়েছে। এটি স্ববিরোধিতার একটি স্পষ্ট দৃষ্টান্ত। পার্ট ৩-এর পুরোটাই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার উপর একটি গুরুতর আক্রমণ। অতএব এটি ‘অসাংবিধানিক’ বলে বাতিল করা হবে। ১৫ থেকে ১৯ নম্বর রুলগুলি আরও খারাপ। বিশ্বাস করুন বা না করুন, উত্তরাখণ্ডের আইনের এই রুলগুলিতে লিভ-ইন পার্টনারদের কর্তব্য এবং অধিকার নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। 
দ্বন্দ্ব?
দ্বিতীয়াংশে আলোচিত হয়েছে ‘উত্তরাধিকার’ (সাকসেশন) বিষয়টি। আরও বিশ্লেষণ সাপেক্ষে, মনে হচ্ছে যে ‘ইনটেস্টেট সাকসেশন’ বা ‘উইল না-করা উত্তরাধিকার’-এর ক্ষেত্রে, হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, ১৯৫৬-এর বৈশিষ্ট্যগুলিই সামান্য পরিবর্তনসহ গৃহীত এবং আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে—‘এক্ষেত্রে অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত উত্তরাধিকারের কোনও নিয়ম অন্তর্ভুক্ত হয়নি’। আইনটিতে ‘এস্টেট’ বা ‘সম্পত্তি’র সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং এখানে সম্পত্তিতে ‘সহস্বার্থ’ (কোপারসেনারি ইন্টারেস্ট) স্বীকৃতি পেয়েছে বলেই মনে হয়। এর অর্থ এটাই যে, আইনটি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রথাগত অনুশীলনের উপর নির্ভর করে তৈরি। 
‘টেস্টামেন্টারি সাকসেশন’ বা ‘উইল করা উত্তরাধিকার’-এর ক্ষেত্রে, আদালত কর্তৃক ব্যাখ্যাত ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫-এর অধীনে নিয়মগুলি তুলে নিয়েই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আইনের স্বাভাবিক সীমানা বহির্ভূত প্রভাব (এক্সট্রা-টেরিটরিয়াল রিচ), প্রাথমিকভাবে, অসাংবিধানিক বলেই গণ্য হবে। কথায় ও কাজে, উত্তরাখণ্ড আইন সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে প্রাধান্য দিয়েছে এবং উপেক্ষা করেছে অহিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে যেসব ব্যক্তিগত আইন প্রচলিত রয়েছে সেসবের বৈশিষ্ট্যগুলিকে। আইনটি কীসের বীজ বপন করেছে—সংস্কারের নাকি সংঘাতের? শুধু সময়ই তার উত্তর দেবে। 
• লেখক সাংসদ ও ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত
2d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কারও কাছ থেকে কোনও দামি উপহার লাভ হতে পারে। অকারণ বিবাদ বিতর্ক এড়িয়ে চলুন। স্বাস্থ্য...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৬.১৮ টাকা৮৭.৯২ টাকা
পাউন্ড১০৬.২৮ টাকা১১০.০২ টাকা
ইউরো৮৮.১৫ টাকা৯১.৫১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা