বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

উপেক্ষিত বাংলা, এই বাজেটে দিন বদলাবে না
হিমাংশু সিংহ

লাখপতি দিদিদের কথা শুনতে পেলেন নির্মলার বাজেটে? কিংবা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যে ১০ লাখ পদ ফাঁকা, সেখানে লোক নিয়োগের রোডম্যাপ? উপেক্ষিত একশো দিনের কাজ। এবারও মমতার বাংলা চূড়ান্ত বঞ্চিতই রইল। নতুন কোনও প্রকল্পের কথা তো দূরঅস্ত। প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া নিয়ে একটি কথাও বলতে শোনা গেল না অর্থমন্ত্রীকে। ছাব্বিশে পশ্চিমবঙ্গে কোনও সম্ভাবনা নেই দেখেই কি এই মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।
মূল্যবৃদ্ধির চাপে সাধারণ মানুষ নাজেহাল। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ নেই বলেই সঞ্চয় তলানিতে। চরম আর্থিক মন্দা। এসবেরও কোনও দাওয়াই নেই প্রায় দেড় ঘণ্টার বাজেট ভাষণে। যদি আয়ই না থাকে, বেকার যুবক কাজ না পায়, তাহলে ১২লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর ছাড়ের সুবিধা নেবে কে? মাসে এক লক্ষ টাকা রোজগার দেশের মোট জনসংখ্যার কত শতাংশের? এক থেকে দেড় শতাংশের বেশি কি? মধ্যবিত্তের কথা বলতে গিয়ে আসলে গ্রামের সম্পন্ন চাষি, মহিলা উদ্যোগপতি এবং স্টার্টআপদের জন্যই একগুচ্ছ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তাও সরাসরি নয়, হরেক কিসিমের ঋণ আর ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে দিয়ে। সারে ভর্তুকি কমিয়ে কৃষকের পায়ে কুড়ুল মারা হয়েছে। আর ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন বিহারকে। বেশ বোঝা যাচ্ছে, দিল্লির ভোটের পরই বিহার দখলে ঝাঁপাবে মোদির বিজেপি। লালু- নীতীশ দু’জনেই বৃদ্ধ হয়েছেন। বিহার দখলের এটাই মোক্ষম সুযোগ! কিন্তু গরিবের দিনবদল স্বপ্নই থেকে যাবে। কারণ, অর্থমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন ১৪৩ কোটির দেশে রিটার্ন ফাইলই করে মাত্র ৮ কোটি মানুষ। শতকরা ৬.৬৮ শতাংশ। তাহলে এই এক লক্ষ কোটি টাকা ছাড় কারা পেল? প্রকৃত গরিব না প্রতিষ্ঠিত সম্পন্নরা? আইআইটি কিংবা ডাক্তারিতে আসন বৃদ্ধিও মেধাবীদের জন্য। গড়পরতা মধ্যমেধার ছেলেমেয়েরা কোথায় যাবে? তাদের ভবিষ্যৎ কি রাজপথেই গড়াগড়ি খাবে সরকারি সৌজন্যে।
আসলে ভোট আর বাজেট দুই-ই এই বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশে ‘দিল্লি কা লাড্ডু’! নিয়ম করে আসে, চলেও যায়। রাজনীতির টানাপোড়েনে মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রার উন্নতি হয় না কিছুতেই। দু’দিন হইচই, এখানে কেন বরাদ্দ বেশি, ওখানে কেন কম? রাত পোহালেই সব বিস্মৃতির অতলে। গণতন্ত্রের বৃহত্তম মঞ্চে গরিব মানুষের অদৃষ্টে আপাদমস্তক বোকা বনে যাওয়াই নির্মম দস্তুর। দিন মাস বছর জাগতিক নিয়মের আবর্তে ঘুরলেই দেখা যায় সিংহভাগ প্রতিশ্রুতিই ফানুস হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে হাওয়ায়। বাজেটে যে অনেক পেয়েছে, আর যে কিচ্ছু পায়নি, দু’পক্ষই দাঁড়িয়ে একই বিন্দুতে। শুধু রং বদলে গিয়েছে ফুলে ফেঁপে ওঠা নেতানেত্রীদের। গরিব মধ্যবিত্ত, খেটে খাওয়া শ্রমিক, খেতে কাজ করা কিষান, চাকরি না পাওয়া শিক্ষিত বেকার কিংবা অসহায় পরিযায়ীর ঘরের অন্ধকার ঘোচে না একটুও। অন্ধকার ঘোচে না পশ্চিমবঙ্গের মতো সিঙ্গল ইঞ্জিন রাজ্যেরও।
রাজধানী দিল্লির বিধানসভা ভোটের ৯৬ ঘণ্টা আগে সাধারণ বাজেট। বিপুল কর ছাড়ের ঢেউ লাগবে কি দিল্লির ৩ কোটি ভোটারের মনে? মনে হয় না। দেশজুড়ে মোদিজির দখলদারির সাতকাহনে চোনা লাগিয়েছে দু’টি রাজ্য। বাংলার সঙ্গে দিল্লিও। তাই শুধু কর ছাড়ের মলম লাগিয়েই তিনি থামছেন না। সীমাহীন অব্যবস্থার কুম্ভমেলাতেও দিল্লির ভোটের দিন পুণ্যস্নানে শামিল হতেই হবে প্রধানমন্ত্রীকে। কেন? ভক্তিসাগরে ডুব দিয়ে দিল্লির শাপমোচনই এবারের বাজেটের পয়লা পরীক্ষা! ফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে পরের শনিবার ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ওটাই ‘বাজেট টু’! তারপর পাটনা বিমানবন্দরের উন্নয়ন ঘটিয়ে বিহার দখলের অপারেশন! পঁচিশ সাল শেষ হলেই বাংলার ভোট। সঙ্গে তামিলনাড়ু ও কেরল। 
টানা আটবার বাজেট পেশ করার গৌরব। সাদা সিল্কের উপর মধুবনী প্রিন্টের হলদে পাড় শাড়ি। লাল শালু মোড়া ট্যাবে বন্দি যাবতীয় তথ্য। কিন্তু নির্মলার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কী হল? গরিব মানুষ কী পেল? এবারের বাজেটের প্রধান লক্ষ্য ছিল মন্দা কাটিয়ে আর্থিক বৃদ্ধি এবং জিডিপি’র পুনরুজ্জীবনকে বাস্তবায়িত করা। কিন্তু বাজেট বক্তৃতায় নানা কিসিমের ঘোষণা হলেও কোথাও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়াস চোখে পড়ল না। কিন্তু এক দশক আগের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তা দেওয়ার কোনও দিনক্ষণ এবারও জানানো হল না। লাখপতি দিদির সংখ্যাও অনুপস্থিত। ফলে ১৪৩ কোটির ভারতীয় জনগণের কত শতাংশ আজকের বাজেটে লাভবান হবেন, সেই প্রশ্ন তোলা কি অসঙ্গত? ২০২৪ সালে দেশে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন ৮ কোটির সামান্য বেশি মানুষ। এরমধ্যে আবার সিংহভাগই শূন্য আয়করের মানুষ। প্রায় ৪ কোটি ৯০ লক্ষ। অর্থাৎ করের পরিমাণ শূন্য হলেও তাঁরা রিটার্ন ফাইল করেছেন। বাকি ১৩৪ কোটি মানুষ কী পেলেন, পেনসিল? অথচ এবারের বাজেট আবর্তিত হল মূলত আয়করকে ঘিরেই। সরকার বেশ বুঝতে পারছে, মধ্যবিত্তের হাতে উদ্বৃত্ত টাকা না এলে অর্থনীতির থমকে থাকা চাকা সচল করা যাবে না। কিন্তু শুধু আয়করে ছাড় দিয়েই কি তা হবে? আয়করে একশো টাকা ছাড় দিয়ে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি যদি হাজার টাকা পকেট থেকে বের করে নেয় তাহলে মধ্যবিত্তের সুরাহা হবে কীভাবে, তার উত্তর নেই নির্মলার বাজেট বক্তৃতায়। নেই আয় বাড়ানোর পথনির্দেশও।
এই যে এ দপ্তরের জন্য এত হাজার কোটি, ওই জনহিতকর প্রকল্পে লক্ষ কোটি বরাদ্দের প্রতিযোগিতা চলে। কিন্তু বছর ঘুরলে কেউ কি মনে রাখে ঠিক কত কোটি খরচ হল কিংবা গরিবের ক’টা অন্ধকার ঘর আলোয় উদ্ভাসিত হল। মিলিয়ে কি দেখা হয় বাজেট প্রস্তাব আর বাস্তবে সেই টাকা এসে পৌঁছেছে কি না? এভাবেই এক ভোট থেকে পরের ভোট। এক বাজেট থেকে পরের আর্থিক খতিয়ান পেশের মাহেন্দ্রক্ষণে সাঁতার কাটি আমরা। নাজুক টালমাটাল মধ্যবিত্ত। কারণ অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতাকে পিছনে ফেলে রাজনৈতিক অগ্রাধিকারই মুখ্য হয়ে সামনে আসে সরকারের এই বাৎসরিক ঘোষণায়। তাই রাজনৈতিক কারণেই বিহার এক্সপ্রেস ছোটানোর এত তৎপরতা!
সাধারণ মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ জিডিপি বোঝেন না। জিএসটিও অধিকাংশের কাছেই জটিল ধাঁধা ছাড়া কিছুই নয়। অর্থনীতির জটিল পরিসংখ্যান, তত্ত্বের কচকচি, ফিসকাল ডেফিসিট-ওদের কাছে অর্থহীন বাকোয়াস ছাড়া কিছুই নয়। শুধু একটা সংখ্যা মাত্র। তবু আধমরা বাজারে সিংহভাগ জনগণের সামনে হঠাৎ একটা সংখ্যা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেন্দ্রের সরকার। গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট সংক্ষেপে জিডিপি। এককথায় দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্যের সূচক। ৬.৩ না ৬.৮। ওই একটা সংখ্যা দেখিয়েই উল্লাসে মেতেছে শাসক শিবির। কাড়া নাকাড়া ঢোল কত্তাল নিয়ে একে অপরের পিঠ চাপড়াতে ব্যস্ত। সংখ্যাতত্ত্বের জাগলারিতে জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেছেন গেরুয়াপন্থী অর্থনীতির লোমহর্ষক পণ্ডিতরা। আমরা মানে আম জনতা তাই গিলছি। হাততালি দিচ্ছি। উদ্বাহু হচ্ছি। এই গোয়েবলসের কেরামতি আরএসএসের ভক্তকুলের বড্ড চেনা খেলা। সাফল্যের সাতকাহন দুবেলা উচ্চগ্রামে বলতে থাকো। বারবার বলো। সকাল সন্ধে বাজারে রাস্তায় ভরা স্টেশনে সর্বত্র হাঁকো। চোঙা ফুঁকতে ফুঁকতেই যেটা হয়নি তাও সত্য হয়ে যাবে একদিন। দু’হাত জোড় করে মোদিজির গুণ গাও। আর ভুলিয়ে দাও পুরনো সব ক্ষত। তাহলেই কেল্লা ফতে! 
কিন্তু এই সাফল্যের ছিটেফোঁটাও তো গরিবের কুটিরে প্রদীপ হয়ে জ্বলে না। তাহলে সাধারণের লাভ? নির্মলা সীতারামনদের এই হঠাৎ আহ্লাদের অভিঘাতে পেট কি ভরবে? কিংবা কাজ হারানো শ্রমিকের দুর্দশা ঘুচবে? আজও যাঁরা প্রতিমুহূর্তে কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন। দীর্ঘ প্রায় একদশক আগে নভেম্বরের এক হাল্কা শীতের রাতে প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের পর থেকে বাজার আর তো তেমন ঘুরে দাঁড়ায়নি। স্বাধীন ভারতের নৃশংসতম জুমলা! 
২০১৪ সালে মোদিজি যখন পবিত্র সংসদ ভবনের চৌকাঠে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে প্রবেশ করেছিলেন তখন জনগণের সামনে রিপোর্ট কার্ড তুলে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। তখন গ্যাসের দাম ছিল ৪০০ টাকা। আজ তা বেড়ে দ্বিগুণকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। পেট্রল ডিজেল ১০০ টাকা ছাড়িয়ে দ্রুত আগুয়ান পরবর্তী মাইলফলকের দিকে। কোন জিনিসটার দাম বাড়েনি বলুন তো? আচ্ছে দিনের সব আয়োজন ব্যর্থ। কৃষকের আয় দ্বিগুণ হয়নি। আর এখন ২০৩২ সালের মধ্যে দেশকে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে তুলে ধরতে নতুন খেলা। 
নারীশক্তির কাজের সুযোগ বৃদ্ধি ছাড়া তা কোনওমতেই সম্ভব নয় বলে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মত। কারণ এখনও পর্যন্ত বিশ্বের ১০টি শীর্ষ অর্থনীতির দেশের মধ্যে ভারতের শ্রমক্ষেত্রে মহিলা অংশীদারিত্ব সর্বনিম্ন। এবং তার জন্য বার্ষিক কয়েক বিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি হয়ে চলেছে। এই অবস্থায় নির্মলা সীতারামন যখন তৃতীয় মোদি সরকারের দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করতে চলেছেন, তখন সকলের চোখ নিবদ্ধ ছিল কীভাবে তিনি দেশের নারী শ্রমশক্তিকে পূর্ণাঙ্গ এক রূপ দিতে পারেন সেদিকে। দেশের জনসংখ্যার ৪৮ শতাংশ মহিলা হলেও গড় জাতীয় উৎপাদনের মাত্র ১৮ শতাংশ ভাগীদারি রয়েছে নারীশক্তির। অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় যা কিছুই নয়। চাকরি ক্ষেত্রে এই লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে পারলে জিডিপিতে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এখানেও অর্থমন্ত্রী চূড়ান্ত হতাশ করলেন। তেমন কিছুই বললেন না।
একথা ঠিক, ভোটে জিততে আজ রাজ্যে রাজ্যে সরকারের অভিমুখ সংখ্যালঘু আর নারী। এই দুই শ্রেণির মন জয় করতে পারলেই ভোট পরীক্ষায় আপনি উত্তীর্ণ। বাকি জনগণ ক্ষুব্ধ হয়েও আপনার টিকিটি ছুঁতে পারবে না। জিডিপি গোঁত্তা খাক, মধ্যবিত্তের আয় কমুক কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের আয় বিনা বাধায় ৮৭ শতাংশ বাড়ে। ভোটের বছর হলে তো কথাই নেই। হায় মোদিজির মহান গণতন্ত্র! ভোটের বছরে চাঁদা থেকে বিজেপি’র আয় ছিল ৪ হাজার কোটি, এবার তা বেড়ে ৬ হাজার কোটি হোক। গরিবের কথা ভেবে কী হবে? দলের পকেট ভরাও, আধুনিক গণতন্ত্রের এটাই আদর্শ অভিমুখ।
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

সন্তানের স্বাস্থ্যহানির কারণে মানসিক অস্থিরতা ও উদ্বেগ। পরীক্ষায় মনোমতো ফললাভ ও নামী প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৭৮ টাকা৮৭.৫২ টাকা
পাউন্ড১০৫.৬০ টাকা১০৯.৩৩ টাকা
ইউরো৮৮.১০ টাকা৯১.৪৮ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা