বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

ধর্মীয় বাজেটেই আস্থা বিজেপির
তন্ময় মল্লিক

তৃতীয়বার নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় বসার পর এটাই ছিল প্রথম বাজেট। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট পেশ করেছেন। তা নিয়ে সংসদে আলোচনা চলবে। হবে চুলচেরা বিশ্লেষণও। হয়তো কিছু সংশোধনী আসবে। অথবা সংশোধনী ছাড়াই পাশ হয়ে যাবে বাজেট। অর্থনৈতিক বাজেটের ক্ষেত্রে এটাই প্রথা। কিন্তু সেই বাজেট যদি হয় ধর্মীয়? তখন কোনও সংশোধনী কাজ করে না। কারণ ক্ষমতা দখল এবং ক্ষমতার ভিত পোক্ত করাই ‘ধর্মীয় বাজেটে’র উদ্দেশ্য। এবারের কুম্ভমেলা ছিল বিজেপির সেই ‘ধর্মীয় বাজেটে’রই অঙ্গ। লক্ষ্য হিন্দু ভোট এককাট্টা করা। তবে পদপিষ্টের ঘটনায় বিজেপির বাজেট পাশ হবে কি না, তা আজ দিল্লি বিধানসভার ফলে কিছুটা বোঝা যাবে। 
ফরাসি শব্দ ‘বুগেট’ থেকে ‘বাজেট’ শব্দটির উৎপত্তি। বুগেট কথার বাংলা অর্থ ছোট ব্যাগ। চামড়ার ব্যাগেই নিয়ে যাওয়া হয় বাজেটের নথি। দেশের অর্থনীতি কোন পথে চালিত হবে, তা নির্বাচিত সাংসদদের অবগত করাই বাজেটের উদ্দেশ্য। আইনসভার সদস্য হিসেবে দেশের অর্থনীতির হালহকিকত সর্বপ্রথম জানার অধিকারী তাঁরাই। সংসদে বাজেট পেশ হওয়ার আগে তা ফাঁস হয়ে গেলে বিপন্ন হতে পারে সরকারের ভবিষ্যৎ। তবে আর্থিক বাজেটের চেয়েও অনেক বেশি গোপনীয় বিষয় হল ‘ধর্মীয় বাজেট’। প্রতিবাদ তো দূরের কথা, ‘ধর্মীয় বাজেট’ নিয়ে চর্চার অবকাশ থাকে না। উল্টে প্রতিবাদ করলেই প্রত্যাঘাতের প্রবল আশঙ্কা।
বিজেপি বরাবর ধর্মের উপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি করে এসেছে। কিন্তু ২০১৯ সালের পর থেকে হিন্দুত্বকে অক্টোপাসের চেয়েও জোরে চেপে ধরেছে। পুলওয়ামার কাণ্ড না হলে নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়া কঠিন ছিল। বারবার জাতীয় ভাবাবেগ সৃষ্টি সম্ভব নয়। সেটা বিজেপি নেতারা জানেন। তাই আবেগ সৃষ্টির জন্য ধর্মকেই হাতিয়ার করেন। ভোট জেতার জন্য ধর্মকে কখনও খুল্লামখুল্লা, কখনও অতি সূক্ষ্মভাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করে বিজেপি। নির্বাচনী হার্ডেলস টপকানোর জন্য ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা করে, যা রাজনীতির পরিভাষায় ‘ধর্মীয় বাজেট’।
এবার মৌনী অমাবস্যার পুণ্যলগ্নে প্রয়াগে অমৃতস্নানের যোগ ছিল ভোর ৩টেয়। তারজন্য কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষ কুম্ভে ভিড় করেছিলেন। তবে, এটা নতুন কিছু নয়। প্রতিবার অসংখ্য মানুষ পুণ্যস্নানের জন্য কুম্ভে ভিড় জমান। কিন্তু এবার নাকি বিরল যোগ ছিল! তাই পুণ্যলাভের সুযোগ যেন হিন্দুরা হাতছাড়া না করে, তারজন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। দেশজুড়ে প্রচারের ব্যবস্থা তো ছিলই। পাশাপাশি ব্যক্তিগত মোবাইলেও জানানো হয়েছিল কুম্ভে যাওয়ার আবেদন।
রাজনৈতিক নেতারা সাধারণত দু’ভাবে মানুষকে প্রভাবিত করে থাকেন। এক, নানান আর্থিক সুযোগ সুবিধা ও পরিষেবা প্রদান করে। দুই, ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে। নরেন্দ্র মোদির ১১ বছরের শাসনকালে দেশের মানুষ বুঝে গিয়েছে, সাধারণ মধ্যবিত্ত ও গরিবদের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার রাস্তায় তারা হাঁটবে না। ‘অন্নদাতা’দের চেয়ে কর্পোরেটের ঋণ মকুবেই যে তাদের আগ্রহ বেশি, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
নরেন্দ্র মোদির সরকার যে গিমিকেই বিশ্বাসী, তা বাজেটে ফের একবার প্রমাণ হল। এবারের বাজেটের চমক আয়করে ছাড়। বছরে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাঁরা উপায় করেন, তাঁদের আর আয়কর দিতে হবে না। বিজেপির ঢাক পেটানো দেখে মনে হচ্ছে, সীতারামন একটা বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে চাকরিজীবীদের একটা অংশ উপকৃত হবে। কিন্তু সেই সংখ্যাটা দেশের মোট জনসংখ্যার কত ভাগ? একেবারেই নগণ্য। ফলে সাধারণ মানুষকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে সরকারের ভিত মজবুতের জায়গাটায় বিজেপি নেই। ঝুলিতে আছে শুধুই গিমিক। গিমিকে চটজলদি ফল পাওয়া গেলেও কখনও কখনও ‘সাইড এফেক্ট’ মারাত্মক হয়। সেটা গেরুয়া শিবিরের কর্তারা বুঝেছেন বলেই প্রতিটি মেগা ইলেকশনের আগে এমন একটা ইস্যুকে এনে আবেগ তৈরি করে, যার তোড়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই, অনেক রথী মহারথীও ভেসে যায়।
২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে ‘আচ্ছে দিনে’র স্লোগান দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরি, কালাধন ফিরিয়ে এনে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রচারে বিভ্রান্ত হয়েছিল দেশবাসী। পরিণতি? বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মোদি। এখন বিজেপির কোনও নেতা ভুলেও ‘আচ্ছে দিনে’র কথা মুখে আনেন না। ২০১৯ সালের ভোটে কোনও প্রতিশ্রুতি কাজ করবে না, বিজেপি নেতৃত্ব বুঝেছিল। তাই পুলওয়ামার মতো একটা জঙ্গি হানার ঘটনাকে সামনে রেখে জাতীয় ভাবাবেগ তৈরি করেছিল। প্রচার এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল যাতে গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় না তুলে মানুষ জাতীয় ভাবাবেগে ভেসে যায়। তখন মনে হয়েছিল, দেশের অখণ্ডতা রক্ষাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কথায় আছে, ‘ফেলিওর ইস দ্য পিলার অব সাকসেস’। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি ব্যর্থতাকেই তাঁর সরকারের সাফল্য হিসেবে বারবার তুলে ধরেছেন। কুম্ভের দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যুও তাঁকে বিচলিত করতে পারেনি। তাই পূর্ব কর্মসূচি মেনেই তিনি অবগাহন করেছেন। ভাবখানা এমন, দুর্ঘটনা তো ঘটতেই পারে। হ্যাঁ, এটাই ‘মোদি-স্টাইল’। 
বিজেপির ‘ধর্মীয় বাজেটে’র মূল স্তম্ভ ছিল রামমন্দির নির্মাণ। মন্দিরকে সামনে রেখেই ২০২২ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার নির্বাচনে ও ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটে ফায়দা লোটার পরিকল্পনা করেছিল বিজেপি। তাই ২০২০ সালে রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই মন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন মোদিজিই। শঙ্করাচার্যদের আপত্তিও তিনি গ্রাহ্য করেননি। তাতে নরেন্দ্র মোদির হ্যাটট্রিক হয়েছে, কিন্তু তিনি হয়ে গিয়েছেন ক্র্যাচ নির্ভর প্রধানমন্ত্রী। এই অবস্থায় ‘হাওয়া’ ঘোরাতে হিন্দুভোট এককাট্টা করার জন্য মরিয়া বিজেপি। 
বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর লাগাতার লাগামছাড়া অত্যাচার হচ্ছে। সমস্ত দিক থেকেই বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে ভারত। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের উস্কানি, হম্বিতম্বি ভারত সরকার মেনে নিচ্ছে। কোনও পদক্ষেপ করছে না। তাতেই উঠেছে প্রশ্ন, যে নরেন্দ্র মোদি আমেরিকায় গিয়ে ‘ইসবার ট্রাম্প সরকার’ স্লোগান দিয়েছিলেন, তিনি বাংলাদেশ ইস্যুতে মুখে কুলুপ এঁটেছেন কেন? ভারতবর্ষের সহিষ্ণুতা ও সহনশীলতা নীতিই কি এর কারণ, নাকি পিছনে আছে অন্য কোনও অঙ্ক! 
অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশে হিন্দুরা অত্যাচারিত হলে এদেশে তার প্রভাব পড়বে। এখানে হিন্দুরা এককাট্টা হবেন। তাতে লাভ বিজেপির। তাই বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর লাগামছাড়া অত্যাচার হলেও মোদিজি ‘স্পিকটি নট’। এটা বিজেপির ‘ধর্মীয় বাজেটে’র অঙ্গ না হলেও বাংলাদেশের ঘটনা তাদের কিছুটা ডিভিডেন্ট দেবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। ফলে বাংলাদেশের ঘটনা বিজেপির কাছে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতোই। 
অবশ্য কুম্ভমেলাকে বিশ্বমানের মেলা হিসেবে তুলে ধরাটা ছিল বিজেপির ‘ধর্মীয় বাজেটে’র অঙ্গ। দেশজুড়ে কুম্ভস্নানের জন্য যোগী সরকার প্রচার চালিয়েছে। প্রচার ছাড়াই লক্ষ লক্ষ ভক্ত পুণ্যস্নানে অংশ নেন। এবারও নিতেন। তবে, প্রচারের দৌলতে সংখ্যা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে নরেন্দ্র মোদির বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। তাই তাঁর উত্তরসূরি নিয়েও শুরু হয়েছে চর্চা। সেই দৌড়ে অমিত শাহ যেমন আছেন, তেমনই রয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। কুম্ভমেলা যোগীজির সামনে এনে দিয়েছিল সেই দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। অনেকে মনে করছেন, সেই সুযোগকে পুরোমাত্রায় কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন গেরুয়া শিবিরের পোস্টার বয়। কিন্তু ২৮ জানুয়ারির রাতের দুর্ঘটনা কি সমস্ত হিসেব গোলমাল করে দিল? তিনি কি দৌড় থেকে ছিটকে গেলেন?
তবে, তার চেয়েও যে প্রশ্নটা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হল এমন একটা মেগা মেলায় বিপুল ভক্ত সমাগম হবে, সেটা সকলেই জানত। তারপরেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হল না কেন? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তো কথায় কথায় বিরোধী শাসিত রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও কেন্দ্রীয় এজেন্সি পাঠিয়ে দেয়। সেখানে এমন এক ঐতিহাসিক মেলার নিরাপত্তার জন্য কেন সেনা ও পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হল না? এটা কি উত্তরপ্রদেশের ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের উপর অতিরিক্ত ভরসার কারণে, নাকি পিছনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ের কোনও জটিল অঙ্ক?
2h 2m ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

অপ্রত্যাশিত ক্ষেত্র থেকে অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে। কর্মস্থলে উপরওয়ালার আস্থা লাভে সক্ষম হবেন। ব্যবসায় উন্নতি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৬.৬৩ টাকা৮৮.৩৭ টাকা
পাউন্ড১০৬.৯২ টাকা১১০.৬৭ টাকা
ইউরো৮৯.১৭ টাকা৯২.৫৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা