বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

পদ্ম সম্মান ও গেরুয়া রাজনীতি
প্রীতম দাশগুপ্ত

২০২৪-এর লোকসভা ভোট বুঝিয়ে দিয়েছে, স্রেফ মোদি ম্যাজিকে ভরসা করে ম্যাচ জেতা যাবে না। বিভিন্ন দুর্বল রাজ্যে মাটি শক্ত করতে তাই বিজেপি আঞ্চলিক আবেগকেও হাওয়া দিচ্ছে। পাশাপাশি সঙ্ঘের হিন্দুত্ব এজেন্ডা তো থাকছেই। সবচেয়ে মজার কথা হল হিন্দুত্বে ভরসা করার জন্য এতদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা তাঁর নম্বর টু অমিত শাহের বাগ্মিতার উপর নির্ভর করতে হতো। গেরুয়া শিবির মনে করছে, সেই অস্ত্রে শান দিতে পুরস্কার বা সম্মানকেও হাতিয়ার করতে হবে। নরেন্দ্র মোদি মসনদে বসার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে ভারতরত্ন বা পদ্ম সম্মানের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হিন্দুত্ববাদী নেতাদের নাম আসছে।
২০১৪ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই সেই সময়কার দুই প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি ও মুরলী মনোহর যোশিকে মার্গ দর্শক বানিয়ে কার্যত ছেঁটে ফেলেছিলেন মোদি। কিন্তু সেই আদবানিকেই ২০২৪ সালে ভারতরত্ন ও মুরলী মনোহর যোশিকে ২০১৭ সালে পদ্মবিভূষণ সম্মান দেওয়া হয়। এমনকী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়িও ভারতরত্ন পেয়েছিলেন মোদি ক্ষমতায় আসার পরে, ২০১৫ সালে। এ পর্যন্ত তাও মেনে নেওয়া যায়, কারণ বাজপেয়ি দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, আদবানি প্রাক্তন উপ প্রধানমন্ত্রী ও মুরলী মনোহর প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও দীর্ঘদিনের রাজনীতিবিদ। কিন্তু চলতি বছরের তালিকায় এমন বেশ কয়েকজনের নাম রয়েছে, যাঁদের কাজের পরিচয় খুঁজতে গেলে উইকিপিডিয়ার সাহায্য নিতে হবে। তাঁদের প্রত্যেকেরই যোগসূত্র একটা জায়গায়, সেটা হল হিন্দুত্ব।
পদ্মপ্রাপকের তালিকায় এবার জ্বলজ্বল করছেন সাধ্বী ঋতম্বরা। কে তিনি? আটের দশকের শেষ থেকে নয়ের দশকে রাম জন্মভূমি আন্দোলনে ফায়ারব্র্যান্ড মহিলা নেত্রী হিসেবে যে দু’জনের নাম উঠে এসেছিল, তার একজন উমা ভারতী ও দ্বিতীয়জন এই সাধ্বী ঋতম্ভরা। উমা ভারতীর রাজনৈতিক কেরিয়ার নিশ্চিতভাবেই তরতর করে উঠেছিল। কিন্তু একটা সময় পর কালের নিয়মেই হারিয়ে গিয়েছেন। এমনকী যে মধ্যপ্রদেশ তাঁর কর্মভূমি ছিল, সেই রাজ্যেই বিগত বিধানসভা নির্বাচনে তারকা প্রচারকের তালিকা থেকে ভারতীকে ছেঁটে ফেলেছে বিজেপি। রয়ে গিয়েছেন দুর্গা বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপার্সন ঋতম্ভরা। গৈরিক বসনধারী ঋতম্ভরা উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন স্থানে ছুটে বেরিয়েছেন। যুব সমাজকে হিন্দুত্বের মোড়কে তৈরি করেছেন। তাঁর গরম গরম মেঠো বক্তৃতা বাড়িয়ে দিয়েছে হিন্দুত্ব আবেগ। নামে সমাজসেবক, আসলে হিন্দুত্বের কট্টর প্রচারক। এহেন সাধ্বীকে তাই পদ্ম সম্মানে ভূষিত করতে দেরি করেনি মোদি সরকার।
চলতি বছরের পদ্ম তালিকায় নাম রয়েছে বাংলার কার্তিক মহারাজের। মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের এই মহারাজ বিগত লোকসভা নির্বাচনের সময়ই চর্চায় আসেন। গত লোকসভা ভোটের সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরামবাগের সভা থেকে সরাসরি কার্তিক মহারাজের নাম করে বলেছিলেন, ‘আমি ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে অনেক সম্মান করতাম। কিন্তু যে লোকটা তৃণমূলের এজেন্টকে বসতে দেন না, তাঁকে আমি সাধু বলে মনে করি না। তার কারণ, তিনি ‘ডাইরেক্ট পলিটিক্স’ করে দেশটার সর্বনাশ করছেন।’ শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই নন, বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরীও বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের যদি এমন মানসিকতা হয় যে, তাঁদের পার্টির নেতাকে পুরস্কার দেবে, তাহলে এর গুরুত্ব থাকবে না। যে কমিটি এই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের উপরে রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে গুরুত্ব থাকছে না।’
ঘটনাচক্রে দেখা গিয়েছিল নির্বাচনী প্রচারে এসে কার্তিক মহারাজের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনকী এখনও যখন তাঁর নাম নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, প্রত্যাশিতভাবেই পাশে রয়েছে বিজেপি। তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তৃণমূল বিরোধিতা বা উগ্র হিন্দুত্ব প্রচারের জন্য নয়, কার্তিক মহারাজ এই সম্মান পেয়েছেন সমাজসেবার জন্য।
পদ্মপ্রাপক হিসেবে নাম রয়েছে আইনজীবী সি এস বৈদ্যনাথনের। কে তিনি? আযোধ্যার রাম জন্মভূমি মামলায় রামলালা বিরাজমানের হয়ে সওয়াল করেছিলেন এই আইনজীবী। রামমন্দিরের প্রধান স্থপতি চন্দ্রকান্ত সোমপুরাকেও পদ্মভূষণ দেওয়া হয়েছে। ‘অযোধ্যা রিভিজিটেড’ গ্রন্থের লেখক কিশোর কুণালও চলতি বছরের পদ্মশ্রী প্রাপকের তালিকায়।
হিন্দুত্ব বিজেপির ট্রেডমার্ক রাজনীতি। কিন্তু স্রেফ এই হাওয়ায় ভর করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মাটি শক্ত করতে পারছে না বিজেপি। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারত ও পূর্ব ভারতে জমি খুঁজে পাচ্ছে না গেরুয়া বাহিনী। দক্ষিণের পাঁচ 
রাজ্য কেরল,কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা। এর মধ্যে একমাত্র কর্ণাটকে বিজেপির প্রভাব রয়েছে। 
অনেক চেষ্টা করেও এবার অন্ধ্রপ্রদেশে দাঁত ফোটাতে পারেনি গেরুয়া বাহিনী। একই অবস্থা তামিলনাড়ু, কেরল ও তেলেঙ্গানাতেও। প্রায় নিয়ম করে দক্ষিণে সফর করেন মোদি। কিন্তু সেটাও বিজেপিকে ডিভিডেন্ড দিচ্ছে এমন নয়। সেই কারণে বিজেপির পুরস্কার-সম্মান রাজনীতি। চলতি বছর পদ্মবিভূষণ পেয়েছেন সাতজন। তার মধ্যে দক্ষিণের তিন। পদ্মভূষণের ১৯ জনের মধ্যে দক্ষিণ থেকে আট জন। এর সঙ্গে যোগ করতে হবে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, অসম ও গুজরাতের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যকে। বিগত বছরেও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। আসলে বিজেপি মানেই উত্তরের দল—এমন একটা ধারণা রয়েছে। পুরস্কার রাজনীতিতে সেই মিথ ভাঙারই চেষ্টা চলছে।
পূর্ব ভারতের তিন রাজ্য বাংলা, বিহার ও ওড়িশা। গত বছর বিহারের নেতা কর্পূরী ঠাকুরকে ভারতরত্ন দেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের ভিত্তি শক্তিশালী করতে চেয়েছে বিজেপি। এবারও পদ্মবিভূষণের তালিকায় রয়েছেন প্রয়াত শিল্পী সারদা সিনহা। আর প্রয়াত নেতা সুশীল মোদিকে দেওয়া হয়েছে মরণোত্তর পদ্মভূষণ। বিজেপির গাঁট বাংলা। এই রাজ্যের প্রতিটি ভোটেই দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামক একটি শক্তপোক্ত দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে প্রতিহত হয়েছে মোদি-ঢেউ। বাংলায় একটাও উল্লেখযোগ্য মুখ খুঁজে পায়নি বিজেপি। তাই পুরস্কার রাজনীতি চলছেই। যদি কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে খুঁজে পাওয়া যায়। ২০১৯ সালে ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া হয়েছিল প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে গত বছরই পদ্মভূষণ ও দাদা সাহেব ফালকে দেওয়া হয়েছে। অভিনেতা মিঠুনের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন না তুলেও বলা যায়, বিজেপি যোগ না থাকলে এত দ্রুত তিনি ওই পুরস্কার পেতেন না।
প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মিডিয়া উপদেষ্টা ছিলেন সঞ্জয় বারু। ‘বারনিশিং দ্য পদ্মাস’ বইয়ে তিনি লিখেছিলেন, যাঁরা ন্যাশনাল আইকন হিসেবে চিহ্নিত হতে পারেন, একমাত্র তাঁদেরই এই সম্মানের জন্য মনোনীত করা উচিত। পদ্মে লবিবাজি দেখে মনমোহন সিংও আশাহত হয়েছিলেন। পদ্ম সম্মান নিয়ে বিতর্ক আগেও হয়েছে। ইউপিএ বা পূর্বতন কংগ্রেস জমানায় বহু ব্যক্তির নাম নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে সেটা সমালোচনাই। কিন্তু মোদি ক্ষমতায় আসার পরে এই সম্মানকে দলীয় ভিত্তি প্রসারে কাজে লাগিয়েছেন। যে সম্মান দেশের প্রথিতযশা ব্যক্তিদের দেওয়ার কথা, সেটাই এখন রাজনীতির ঘুঁটিতে পরিণত হয়েছে। ২০১৯ সালের মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটের আগে প্রথমবার নির্বাচনী ইস্তাহারে বিজেপি ঘোষণা করেছিল, জিতলে ভারতরত্ন দেওয়া হবে সাভারকর, জ্যোতিবা ও সাবিত্রী ফুলেকে। ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনও দল এভাবে ‘সম্মান’কে ভোট রাজনীতিতে মিশিয়ে দিল। দুই পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও ও চৌধুরাী চরণ সিংকেও ভারতরত্ন দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই রাজনীতির খেলা খেলেছে বিজেপি। ঠিক ভোটের আগে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষক ভোট সংহত করতে ও সমাজবাদী পার্টির হাত থেকে রাষ্ট্রীয় লোক দলকে ভাঙিয়ে আনতে চৌধুরী চরণ সিংকে ভারতরত্ন (মরণোত্তর) দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। দক্ষিণের দুই রাজ্য বিশেষত তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশে ভোটের ভিত্তি বাড়াতে বিগত লোকসভা ভোটের আগে ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছিল নরসিমা রাও ও বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথনকে। মদনমোহন মালব্য, নানাজি দেশমুখের মতো হিন্দুত্ববাদী নেতাকেও দেশের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হয়েছিল এই সময়। বার্তা স্পষ্ট, উগ্র হিন্দুত্ববাদের আদি রাস্তা থেকে সরে আসছেন না মোদি। ইউপিএ জমানায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছিল অ-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর অত্যন্ত সুচারুভাবে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে বেছে নিয়েছেন। 
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

নিজের বা পরিবারের কারও আকস্মিক রোগবৃদ্ধিতে বিচলিত হতে পারেন। কাজকর্ম কমবেশি এগবে। মানসিক  বিক্ষিপ্ততা।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৫.৯৩ টাকা৮৭.৬৭ টাকা
পাউন্ড১০৫.৪১ টাকা১০৯.১৩ টাকা
ইউরো৮৭.৭৪ টাকা৯১.১২ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা