বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
বিশেষ নিবন্ধ

তথ্য গোপনে প্রাপ্তিটা কী?
শান্তনু দত্তগুপ্ত

কুম্ভ থেকে দিল্লি
কিছুই তো হয়নি! পদপিষ্ট? না না, পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি। এটাই প্রাথমিক বয়ান। প্রয়াগের কুম্ভ থেকে দিল্লি স্টেশন পর্যন্ত। চারদিকে পড়ে আছে মৃতদেহের স্তূপ। তারপরও উত্তরপ্রদেশ সরকার বলেছে, কয়েকজন আহত হয়েছে মাত্র। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। প্রায় একদিন পার করে যোগী সরকার ঘোষণা করল, ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মৃতের সংখ্যা শ’খানেক হবে। এই লুকোছাপা কেন? ক্ষতিপূরণ কম দিতে হবে বলে? নাকি গায়ে রক্তের দাগ লাগলে আসন্ন কোনও এজেন্ডা ধাক্কা খাবে?
দিল্লি স্টেশন থেকে ছড়িয়ে যাওয়া ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে পড়ে আছেন এক মহিলা। তার পাশে এক যুবতীও। নিথর। তা সত্ত্বেও রেলের তরফ থেকে স্বীকার করা হচ্ছে না মৃত্যুর খবর। হাসপাতাল বলছে, ১৫ জন মারা গিয়েছেন। তার মধ্যে ১০ জন মহিলা, আর তিন শিশু। রাজনাথ সিং, এমনকী স্বয়ং নরেন্দ্র মোদিও মৃতদের পরিবারের প্রতি শোক জ্ঞাপন করছেন। আর তখন ‘স্বাভাবিক’ দিল্লি স্টেশনের ছবি দিয়ে রেলমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন, ‘সব নিয়ন্ত্রণে’। এই দ্বিচারিতা কেন?
তথ্য জানার ‘অনধিকার’
ইদানীং আমাদের মহামান্য ভারত সরকার একটা দারুণ স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে। ধরুন আপনি অনলাইনে আরটিআই করতে চাইছেন। পুরো প্রক্রিয়াটা ঠিকমতো মেনে চললেন। কিন্তু শেষে সাবমিশনের সময় ‘এরর’ দেখিয়ে দিল। কিংবা আপনাকে থমকে দেওয়া হল সেখানেই। অর্থাৎ, তথ্য জানার অধিকার আইনে আপনি আর তথ্য জানার আবেদনটুকুও করতে পারলেন না। সব ক্ষেত্রেই কি তা হচ্ছে? না, সব ক্ষেত্রে না হলেও বহু ক্ষেত্রে হচ্ছে তো বটেই। আর বেশ কিছু ক্ষেত্রে উত্তরে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ‘সরকার এই তথ্য দিতে পারছে না’, কিংবা ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে এমন প্রশ্নের জবাব দেওয়া যাবে না’। সোজা কথায়, তথ্য গোপন করে যাওয়া হচ্ছে। 
জনগণনা
২০২১ সালে সেন্সাস হওয়ার কথা ছিল। কোভিডের অজুহাতে তাকে হিমঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতেও শোনা গিয়েছিল, এবার সেন্সাস প্রক্রিয়া শুরু হবে। আর ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ। কিন্তু তাহলে সাধারণ বাজেটে সাধারণভাবে জনগণনার জন্য অর্থ বরাদ্দ হল না কেন? তাহলে কি সেন্সাস করানোয় সরকারের মন নেই? এদিকে আবার বলা হচ্ছে, চলতি সপ্তাহেই এই সংক্রান্ত মিটিং আছে। আসল ঘটনাটা তাহলে কি? পাবলিক কি মূর্খ নাকি? যা বোঝানো হবে, তাই বুঝতে সে বাধ্য? সেন্সাস না হলে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ঠিক কত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, তার কোনও ভিত্তি পাওয়া যায় না। এখনও বিনামূল্যে রেশন, সংখ্যালঘু ভাতার মতো বহু প্রকল্পের টাকাই দেওয়া হয় ১৪ বছর আগের জনগণনার উপর নির্ভর করে। কত মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নীচে আছেন? সেই উত্তরও খুঁজতে হয় টাইম মেশিনে চেপে ওই ২০১১ সালে গিয়েই। রাজনীতির কারবারিদের তাতে কী? ভোট পেলেই হল। আর সে জন্য ধর্ম তো আছেই! কিন্তু সেন্সাস করালে অসুবিধা কোথায়? হিন্দু খতরে মে হ্যায়, কিংবা সংখ্যালঘুরা দেশটাকে লুটে নিচ্ছে বলে যে স্লোগান তোলা হচ্ছে, তা ঝাড় খেয়ে যাবে না তো? দেখা যাবে না তো, সংখ্যালঘুদের সংখ্যা এই দেড় দশকে অনেকটা কমে গিয়েছে? কারণ, নরেন্দ্র মোদি সরকার কিন্তু ২০১৯ সালের পর থেকে জন্মহার সংক্রান্ত কোনও তথ্যই প্রকাশ করেনি!
করের হিসেব
ডিসেম্বর মাসের ১৭ তারিখ সংসদে রিপোর্ট পেশ করেছিল ক্যাগ। গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ, ওইদিনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে দাঁড়িয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করছেন বি আর আম্বেদকরের নামে। তাঁর ভাষণ-বিতর্কে চাপা পড়ে গিয়েছিল ক্যাগ রিপোর্ট, আর তার ছোট্ট একটা অংশ। ২০২০’র নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আয়কর বিভাগের কাজকর্মের অডিট করেছিল ক্যাগ। তাতে অদ্ভুত একটা তথ্য হাতে এসেছে তাদের—এই ক’বছরে অনাদায়ী আয়করের ৯৭ শতাংশই ‘ডিফিকাল্ট টু রিকভার’ বা আদায় করা মুশকিল বলে উল্লেখ করেছে দপ্তর। প্রশ্ন হল, কেন? কেউ যদি আয়কর না দিয়ে থাকে বা ভুল ফর্ম ভরে থাকে, তার নির্দিষ্ট তথ্য দপ্তরের কাছে থাকবে। সেইমতো তারা ডিমান্ড নোটিস পাঠাবে করদাতার কাছে। তিনি বকেয়া আয়কর না দিলে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দপ্তরের কাছে আছে। তারপরও আদায় করাটা ‘ডিফিকাল্ট’ কেন? ক্যাগের বক্তব্য, অডিটে ঠিকমতো সাহায্যই করেনি আয়কর দপ্তর। অনাদায়ী ১৮ হাজার ৮৭০টি মামলার মধ্যে ১০ হাজার ৮৯৬টি নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তরই তারা দেয়নি। এমনকী, ১১ হাজার কোটি টাকা অনাদায়ী আয়করের ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি বা সংস্থা জড়িত, সেটাও জানায়নি তারা। এর কারণ কী? এইসব ব্যক্তি বা সংস্থা কি অত্যন্ত প্রভাবশালী? তাদের অনাদায়ী করের টাকা কি তাহলে আড়ালে-আবডালে মকুব হয়ে যাবে? প্রশ্ন কিন্তু রয়েছে।
তথ্য গোপনের প্রাপ্তিযোগ
উত্তরটা এক কথায় হতেই পারে—রাজনীতি। বিজেপি জমানায় একটা বিষয়ে আমরা ভালোরকম গা-সওয়া হয়ে গিয়েছি। সেটা হল, প্রচার। সরকার কী করল না করল, তাতে কিছু আসে যায় না। প্রচারটা পুরোদস্তুর চালাতে হবে। রাজনীতির ভাষায় প্রোপাগান্ডা। ডেটা বা তথ্যের সঙ্গে যা মোটেও খাপ খায় না। জন্মহার যদি সরকার প্রকাশ করত, তাহলে কি আর ‘হিন্দু খতরে মে হ্যায়’ প্রচার দিনের আলো দেখত? মনে রাখতে হবে, ১৪০ কোটি জনসংখ্যা কিন্তু এখনও ভারত সরকারের সিলমোহর পায়নি। সেটা সম্ভব একমাত্র সেন্সাসের পর। মোদি সরকারের কেষ্টবিষ্টুরা মুখে মুখেই দেশে জনবিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কেন্দ্রীয় একটি সংস্থাই এর মধ্যে দাবি করে বসে আছে যে, ভারতে জন্মহার নিয়ে ভুল প্রচার চলছে। তারা বলেছে, ভারতের মহিলাদের সন্তান জন্ম দেওয়ার হার ২.১ নয়। বরং তার থেকে কম। সেক্ষেত্রে ১৪০ কোটির অঙ্কে জল মিশতে বাধ্য। এই সত্য সামনে এসে গেলে সংখ্যালঘু বাড়ছে, আপনারাও তিনটি করে সন্তানের জন্ম দিন—সঙ্ঘ ও বিজেপির এই প্রচার মাঠে মারা যাবে। গত ১১ বছরে এই একটি বিষয়েই তো গেরুয়া ব্রিগেড হাত পাকিয়েছে—ধর্মীয় রাজনীতি। সঠিক তথ্য আর শুধু গবেষক আর পরিসংখ্যানবিদের জন্য নয়! রাজনীতিকদের জন্যও বটে। আমাদের দেশে দারিদ্র্যসীমার নীচে কতজন আছে? এর উত্তর যদি ২০১১ সালের জনগণনার নিরিখে হয়, তাহলে মোদি সরকার সাফল্যের চূড়ায় বসে আছে। তারা দাবি করছে, ৮১ কোটি এমন মানুষের কাছে সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে। তাই দেশ থেকে গরিব কমছে। কিন্তু বেসরকারি তথ্য বলছে, অন্তত ১০ কোটি মানুষ এখনও এই তালিকার বাইরে থেকে গিয়েছে। অর্থাৎ, প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এর মূল কারণ করোনা মহামারী। এর কারণ কোনওরকম প্রস্তুতি ছাড়াই লকডাউনের ঘোষণা। এর কারণ, নোট বাতিল। ক্ষতিগ্রস্তদের সেই তালিকা কোথায়? কত মানুষ মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত, আর নিম্নবিত্ত থেকে দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে গিয়েছেন, তাঁদের হিসেব কোথায় দেখানো হয়েছে?
আম জনতাও এখন ‘ডেটা’ বোঝে। অন্তত সাদা চোখে কম-বেশির তফাৎটা ধরতে পারে। তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিলে রাজনীতি হবে কীভাবে? ক্ষমতায় থাকতে গেলে রাজনীতি চাই। আর রাজনীতি কেউ কি আর নিজের পকেট খসিয়ে করে? তার জন্য বন্ধুরা আছেন। সেই বন্ধুরা নানাবিধ সুবিধা পেতেই পারেন। কিন্তু সবটাই ‘ব্যক্তিগত’ বলে মেনে নিতে হবে। অন্তত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেটাই মনে করেন। নিজের দেশে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করেন না। কিন্তু মার্কিন মুলুকে সাংবাদিকদের সামনে আদানি ইস্যুকে ‘ব্যক্তিগত’ প্রসঙ্গ বলেই উড়িয়ে দেন। তাঁর জবাব শুনে প্রশ্ন জাগে, ভেবে বলেছেন তো? কারণ, এই একটি ইস্যুতেই গোটা বিশ্ব তোলপাড়। তাঁর বন্ধু কিন্তু ভারতের নাগরিক হিসেবেই বিশ্বের দরবারে পরিচিত। সেক্ষেত্রে বিষয়টা ব্যক্তিগত হয় কীভাবে? এমনই বন্ধু ও প্রভাবশালীদের নামই কি লুকিয়ে চলেছে আয়কর দপ্তর? এমন বন্ধুদের অনাদায়ী করই কি ‘ডিফিকাল্ট টু রিকভার’? ক্যাগ লাগাতার চেয়েও সেই তথ্য পাচ্ছে না। পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। এটাও যে রাজনীতিরই অঙ্গ। এই তথ্য প্রকাশ্যে চলে এলে বন্ধুদের নামও আম জনতা জেনে যাবে। প্রশ্ন উঠবে, কেন তাদের কর অনাদায়ী থেকে যাচ্ছে? কোন কোন সুবিধা তারা নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলকে দিয়েছে? কীসের ‘বিনিময় মূল্য’ হিসেবে লক্ষ কোটি টাকা তারা দিতে স্রেফ ভুলে যাচ্ছে? মোট অঙ্কটা কত? ক্যাগ ২০২১-২২ অর্থবর্ষের হিসেব দিয়েছে। ওই বছর মোট আয়কর আদায় হয়েছিল ১৪ লক্ষ কোটি টাকার। আর অনাদায়ী কর, ১৯ লক্ষ কোটির। 
ভারতের পাওনাগণ্ডা
গণতন্ত্র। এখনও এই একটি শব্দ নিয়েই আমরা গর্বিত। আশাবাদীও বটে। আমরা স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু স্বাধীনতা পেয়েছেন শুধু রাজনীতিবিদরা। তাঁরা নিজেদের সুবিধা মতো তথ্য বাজারে ছাড়ছেন। চাপছেনও। ওটাই যে অঙ্ক। টিকে থাকার। তাঁরা চাইলে দুয়ে দুয়ে চারের বদলে পাঁচ হতেই পারে। হচ্ছেও। আমরা সেটাই গিলছি। আর অপেক্ষা করছি... যাদের আমরা ভোট দিয়ে সরকার চালাতে পাঠিয়েছি, তাদের থেকে স্বচ্ছতা পাব। তারা সততার সঙ্গে আমাদের প্রাপ্যের ব্যবস্থা করবে। ‘দানধ্যানে’ বৈষম্য থাকবে না। বন্ধু এবং সাধারণ মানুষের ফারাকও ঘুচবে। আর হ্যাঁ, আচ্ছে দিন আসবে। 
2d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

শাস্ত্র অধ্যয়নে গতি বৃদ্ধি ও পরীক্ষায় শুভ ফল লাভের সম্ভাবনা। নতুন কর্মপ্রাপ্তি হতে পারে। দাম্পত্যে...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৬.১১ টাকা৮৭.৮৫ টাকা
পাউন্ড১০৭.৮৫ টাকা১১১.৬২ টাকা
ইউরো৮৯.২২ টাকা৯২.৬১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা