মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
প্রথমবা০র শঙ্কুকে রুপোলি পর্দায় আনার জন্য সত্যজিৎ-পুত্র বেছে নিয়েছেন ‘নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো’ গল্পটিকে। এই গল্পের একটা বড় অংশের ব্যাকড্রপ লাতিন আমেরিকার আমাজন অববাহিকা। তাই ‘প্রফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো’র টিমকে পাড়ি জমাতে হয়েছিল ব্রাজিলে। পেলের দেশে শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতাই শোনালেন ধৃতিমান। বললেন, ‘ব্রাজিলে শ্যুটিং মানেই অন্য রকম অভিজ্ঞতা। ব্রাজিল এত বৃহৎ দেশ যে, একাধিক টাইম জোন। এ দেশের উত্তর-পশ্চিমে অ্যামাজোনাস প্রদেশের মানাউসে শ্যুট হয়েছিল। ওখানে রয়েছে আমাজন নদী প্রধান উপনদী রিও নেগরো। উপনদী হলে কী হবে, রিও নেগরো বেশ চওড়া নদী। এ কূল ও কূল দেখা যায় না। এই নদী পথে ঘণ্টা দেড়েক গিয়ে জঙ্গলে ঢুকে আমাদের শ্যুটিং চলত।’ সেখানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়— ঝড়-জল আর নদীর উদ্দাম জলস্রোতের জেরে শ্যুটিংও অনেক সময় বন্ধ করতে হয়েছে। এমনকী, একটা সময় ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে দেশে ফিরে আসতে হয়। পরে সুস্থ হলে আবার দ্বিতীয়বার গিয়ে শ্যুটিংয়ের বাকি অংশ শেষ করে এই ছবির ইউনিট।
নদীপথে আমাজনের জঙ্গলে পৌঁছে শ্যুটিং করা যেমন রিল লাইফ শঙ্কুর কাছে দুর্লভ অভিজ্ঞতা, তেমনই ব্রাজিলের শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়াটাও তাঁর কাছে উপরি পাওনা। এই ছবিতে তিনজন ব্রাজিলীয় অভিনেতা কাজ করেছেন। এঁরা সাওপাওলো এবং রিও ডি জেনেইরোতে নাটকের সঙ্গে যুক্ত। পাশাপাশি টেলিভিশন ধারাবাহিকেও কাজ করেন। অত্যন্ত অভিজ্ঞ। বাংলা ছবির টিম সে দেশে পা দেওয়ার আগেই এঁরা শঙ্কু, সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে রীতিমতো জ্ঞানার্জন সেরে রেখেছিলেন। এছাড়া আরও একজন অভিনেতা ও অভিনেত্রী ছিলেন, তাঁরা আদতে ব্রাজিলের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে কাজের সূত্রে মার্কিনমুলুকে থাকেন।
ধৃতিমান মানেই টলিউড-বলিউড দুটোতেই স্বচ্ছন্দ্য। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন দু’জনের সঙ্গেই কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। হঠাৎ শঙ্কুর অফার পেয়ে কেমন লেগেছিল? তাঁর বক্তব্য, ‘মানিকদার শঙ্কুকে নিয়ে ছবি করার ইচ্ছা ছিল কিনা জানি না। তবে, সন্দীপের শঙ্কুকে নিয়ে ছবি করার ইচ্ছা দীর্ঘদিনের। কিন্তু শঙ্কুর গল্পগুলোর প্রেক্ষাপট বিদেশি, আবার অদ্ভুত সব লোকেশন। ফলে বাংলায় শঙ্কু করার প্রধান অন্তরায় বাজেট এবং প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট। এসভিএফ-এর এগিয়ে আসাটা আমাদের সকলের কাছে সৌভাগ্যের। যখন ছবিটা হওয়া মোটামুটি নিশ্চিত হল, তখনই সন্দীপ আমাকে একটা আভাস দিয়েছিল যে, ও আমাকেই শঙ্কুর চরিত্রের জন্য ভাবছে। শুরুটা হল। তাই আমাদের আশা ফেলুদা, ব্যোমকেশের মতো শঙ্কুকে নিয়ে আরও কতগুলো ছবি তৈরি হোক। তবে এটা বলব, শঙ্কু টলিউডে তৈরি হলেও একটা অর্থে আন্তর্জাতিক ছবি।’ কোন গল্পগুলো ছবি হলে ভালো হয়, জানতে চাওয়া হলে তাঁর সহাস্য জবাব, ‘যে গল্পগুলোতে একটু অববিট জায়গার বর্ণনা আছে, সেগুলো হলেই ভালো হয়। আসলে ওই জায়গাগুলো তো সচরাচর যাওয়া হয় না।’
শঙ্কুকে নিয়ে পরের ছবি হোক বা নাই হোক। একটা ইতিহাস অবিলম্বে তৈরি হয়ে গিয়েছে— প্রথম শঙ্কু ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়। কীভাবে প্রস্তুতি নিলেন কল্পবিজ্ঞানের এই বাঙালি বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার জন্য? রিল লাইফের শঙ্কুর বক্তব্য,‘আমি খুব একটা পূর্ব প্রস্তুতিতে বিশ্বাসী নই। আমি পরিচালকের দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিত্রনাট্যর কাছে দায়বদ্ধ। এমনও হয়েছে, কোনও একটা সাহিত্যসৃষ্টি অবলম্বনে ছবি তৈরি হচ্ছে, আমাকে একটা চরিত্র অফার করা হয়েছে, কিন্তু সেই গল্প বা উপন্যাসটা আমার পড়া নেই। আমি ইচ্ছা করেই সেটা আর পড়ে দেখিনি। তবে, শঙ্কুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। কারণ ১৯৬১ সালে যখন শঙ্কুর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়, তখন আমি স্কুল পাশ করে কলেজের পথে। তাই শঙ্কুর সব গল্পই আমার পড়া। তবে, সমস্যাটা হল প্রফেসর শঙ্কু যেহেতু ডায়েরি ফর্মে লেখা, তাই শঙ্কু চরিত্রটা কেমন বোঝা মুশকিল। সত্যজিৎ রায়ের স্কেচ থেকে শঙ্কুর চেহারার একটা আভাস পাওয়া যায়। একমাত্র স্বর্ণপর্ণী গল্পের শুরুতে ওর বাবা সম্পর্কে একটু স্মৃতিচারণা রয়েছে। সেখান থেকে শঙ্কু ও তার পরিবারের মূল্যবোধের বিষয়টা আন্দাজ করা সম্ভব। রেফারেন্স বলতে এটুকু। আর সন্দেশে শঙ্কুর যে স্কেচগুলো ছিল, কমিক বুকে এসে সেই লুকটা পাল্টে গিয়েছিল। তাই কোন লুকটা নেওয়া হবে, সেটা পরিচালকের উপরেই ছেড়ে দিয়েছিলাম।’
ছবির ট্রেলারে দেখা যাচ্ছে ভিএফএক্সের ব্যবহার রয়েছে। বাংলা ছবিতে ভিএফএক্স প্রযুক্তির ব্যবহার ভালো হয় না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি কি এই ছবির ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা নেবে? যদিও এই ব্যাপারটিকে এভাবে দেখতে নারাজ ধৃতিমান। তাঁর দাবি,‘এই ছবিতে ভিএফএক্সের ব্যবহার থাকলেও, সেটা প্রয়োজন অনুযায়ী। কখনওই পুরো ছবিটা ভিএফএক্স নির্ভর নয়।’ পাশাপাশি তাঁর যুক্তি, ‘এটাকে ছবি হিসাবে কীভাবে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, সেটা নিশ্চয়ই পরিচালক ভেবেছেন। কারণ যাঁরা শঙ্কুর লিখিত গল্পের সঙ্গে পরিচিত, তাঁদের একাংশ মূল গল্পের সঙ্গে ছবির তুলনা করবেন। আবার এখনকার প্রজন্মের যাঁরা বিদেশি অ্যাডাভেঞ্চার ছবি দেখে অভ্যস্ত, তাঁদের একাংশ আবার সেই সব ছবির সঙ্গে এই ছবির তুলনা করতে চাইবেন। তাই পরিচালক নিশ্চয়ই এই দুয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখেছেন।’
২০২০-তে গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যজিৎ রায়কে জন্মশতবর্ষে বিশেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে। আবার ওই বছরই ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র সুবর্ণজয়ন্তী। তাই এই ছবির নায়ক সিদ্ধার্থের আশা, ইফি-তে নিশ্চয়ই একটা ভালো স্থান পাবে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’।