বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহযোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন হতে ... বিশদ
হৃতিক রোশন পঙ্কজ ত্রিপাঠী
অমিত সাধ ম্রুনাল ঠাকুর
সওয়াল ঢুন্ডো। ইন সব মে সওয়াল ঢুন্ডো।...
পুরনো ময়লা শার্ট, কাঁধে সস্তার গামছা। সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে শিক্ষক তাঁর ছাত্রদের বলছেন, প্রশ্ন খুঁজে নিতে। পাখা ঘুরছে, বাল্ব জ্বলছে, ট্রেন ছুটে চলেছে দুরন্ত গতিতে – আশেপাশে যা ঘটে চলেছে, যা দৈনন্দিন, তারই মধ্যে লুকিয়ে জটিল সব অঙ্কের প্রশ্ন।
এই সব জটিল প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে কারা? না খেতে পাওয়া, হতদরিদ্র জনা তিরিশেক ছাত্র। কারও বাবা দিনমজুর, কারও বাবা জমাদার, কারও বাবা লরি চালায়। আর যে শিক্ষক দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাদের শিখিয়ে চলেছেন নতুন নতুন অঙ্ক কষার উপায়, ভরসা জুগিয়ে চলেছেন অনবরত, তার নাম আনন্দ কুমার।
বিকাশ বহেলের ‘সুপার ৩০’ পাটনার সেই বিখ্যাত অঙ্কবিদের গল্প বলে, যার শিক্ষায়, যার ভরসায় প্রতি বছর আইআইটি’তে (ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) জায়গা করে নেয় এমন কিছু ছাত্র যাদের কোচিং তো দূরঅস্ত, দুবেলা খাবারও জোটে না। মেধাটুকুই জীবনের সম্বল। আর বিনা পয়সায়, তাদের পড়ান আনন্দ কুমার।
‘এডুকেশন হি সবসে বড়া বিজনেস হ্যায়’ বলে কলার তুলে গাড়ি চালিয়ে ঘুরে বেড়ানো কোচিং মাফিয়াদের ভিড়ে একঝলক টাটকা অক্সিজেনের মতো সেই মানুষটি, যিনি অনবরত প্রমাণ করতে ব্যস্ত, ‘অব রাজা কা বেটা রাজা নাহি বনেগা। রাজা ও হি বনেগা, জো উসকা আসলি হকদার হ্যায়’।
রামানুজন গোল্ড মেডেল পেয়ে, বিদেশি জার্নালে লেখা বের করে সাড়া ফেলে দিয়ে, কেমব্রিজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও যেতে পারেননি আনন্দ। পোস্টমাস্টার বাবা খরচ জুগিয়ে উঠতে পারেনি। মন্ত্রীমশাই সাহায্য করবেন বলেও কথা রাখেননি। বাবার হঠাৎ মৃত্যুতে সংসারের হাল ধরতে ঘুরে ঘুরে পাঁপড় বেচতে শুরু করেন তিনি। আর সেখান থেকেই তাঁকে একদিন আবিষ্কার করে লালন সিং যার এক্সেলেন্স কোচিং সেন্টারের নাম ছড়িয়ে দিকে দিকে। ম্যাথামেটিক্স উইজার্ড আনন্দ কুমারের হাত ধরে আরও ব্যবসা বাড়াতে চায় লালন। কিছুটা পারেও বইকি! কিন্তু তার পরেই কি বাধ সাধে আনন্দের বিবেক? দ্রোণাচার্য কি শুধুই অর্জুনের হক? একলব্যরা কি আজীবন পিছিয়েই থাকবে? নাকি আনন্দের হাত ধরে, সব প্রতিকুলতা পেরিয়ে তারা পা ফেলবে আলোর দিকে?
মুক্তির আগেই বলা হয়েছিল যে, এ ছবি বায়োগ্রাফিক্যাল নয়। যে কোনও মানুষের গল্পই বড় পর্দায় পৌঁছলে তা খানিকটা বাস্তবচ্যুত হতে বাধ্য। ‘সুপার ৩০’ কিছু কিছু অংশে বাস্তব থেকে একটু বেশিই দূরে সরেছে। আর সেই গল্প গুটোতে পরিচালক তাই নিয়েছেন আড়াই ঘণ্টারও কিছু বেশি সময়। বিরতি পর্যন্ত গল্পের গতি স্বাভাবিক থাকলেও, দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটাই টেনে লম্বা করা হয়েছে। অজয়-অতুলের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ছাড়া আর কোনও সুর মনে বিশেষ দাগ কাটে না।
মন্ত্রীর চরিত্রে পঙ্কজ ত্রিপাঠী আর লালন সিংয়ের চরিত্রে আদিত্য শ্রীবাস্তব বেশ কিছু ভালো মুহূর্ত তৈরি করেছেন। ছোট চরিত্রে নজর কেড়েছেন অমিত সাধ, বীরেন্দ্র সাক্সেনা ও বিজয় বর্মা। আনন্দের বান্ধবীর চরিত্রে ম্রুনাল ঠাকুরের বিশেষ কিছু করার ছিল না। আনন্দের ভাই প্রণবের উপস্থিতি রয়েছে গোটা ছবি জুড়েই। নন্দিশ সাধু যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও সেই চরিত্র গঠনে ছবির কারিগরদের আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। তুখোর মগজাস্ত্রের অধিকারী, নির্ভীক অঙ্কবিদ আনন্দের চরিত্রে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন হৃতিক রোশন। সেখানে অনেকটাই সফল তিনি। চেহারায়, চলনে বলনে নিজেকে এমন করে সাজিয়েছেন হৃতিক যাতে দর্শকের সামনে রিয়েল-লাইফ আনন্দের সঙ্গে রিল-লাইফ আনন্দের বিশেষ দূরত্ব না থাকে।
বুধবার বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডে বিরুদ্ধে যেমন ফিনিশিং লাইনের কিছু আগেই থেমে গেল জাডেজা-ধোনির দুরন্ত লডাই, এখানেও যেন ফিনিশিং লাইনের কিছু ধাপ আগেই থেমে গিয়েছে ফ্যান্টম ফিল্মস’এর প্রযোজনায় শেষ ছবি ‘সুপার ৩০’র দৌড়। কিছু অপ্রাসঙ্গিক সিকোয়েন্স, গল্পের খেই হারানো আর এডিটিংয়ের দুর্বলতাকে এর জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যেতে পারে। বিকাশের সুপ্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও এ ছবির গল্প স্ক্রিনে ম্যাজিক কাঠি বোলাতে পুরোপুরি সক্ষম নয়। ম্যাথামেটিক্যাল উইজার্ড বক্স অফিসে কতটা জাদু দেখাবে, সেটা অবশ্য সময় বলবে।