বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহযোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন হতে ... বিশদ
আজ লোকসভায় তৃণমূল এমপি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন যাত্রীভাড়া খাতে একটি পয়সাও বৃদ্ধি করা হয়নি। বরং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী গরিব মানুষদের জন্য ইজ্জত প্রকল্প শুরু করেছিলেন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাতে খুব অল্প টাকায় বিপিএল তালিকাভুক্ত মানুষের রেলভ্রমণের মান্থলি টিকিট কেটে নিতে পারেন। টিকিট না থাকার অপরাধে অযথা তাঁদের প্রকাশ্যে অপমানিত হতে না হয়।’ এরপরেই এবারের রেলবাজেটে বাংলাকে বঞ্চনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে সুদীপবাবু বলেন, ‘কলকাতায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ এখনও শেষই হয়নি। তা সত্ত্বেও এবারের বাজেটে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের খাতে বাংলাকে উল্লেখযোগ্য অর্থ বরাদ্দই করা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের অনেক রেলপ্রকল্পে নামমাত্র টাকা দেওয়া হয়েছে। আসলে শুধু বাংলা নয়। রেলের ক্ষেত্রে গোটা পূর্বাঞ্চলের সঙ্গেই বৈমাত্রেয় সুলভ আচরণ করছে কেন্দ্রীয় সরকার।’ সামনে বসে থাকা রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে উদ্দেশ্যে করে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরিও বলেন, ‘আপনারা রেলবাজেটে বাংলায় টাকা দিচ্ছেন না। এবার পয়সা দিন বাংলাকে। বিজেপি নাকি পশ্চিমবঙ্গে অনেক কিছু করবে বলে দাবি করছে। আগে সেখানে রেলকে ঢোকান। আমাদের সকলেরই সহযোগিতা পাবেন।’ এই প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার স্টেশনের একটি স্থানীয় ইস্যুও তুলে ধরেন অধীরবাবু।
যদিও এর পাল্টা দিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের বিজেপি এমপি সুনীল সিং। আজ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন সবমিলিয়ে তিনি মোট ২৬৫টি নতুন ট্রেনের ঘোষণা করেছিলেন সারা দেশে। যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি ট্রেন চালানো সম্ভবই হয়নি। ২০১২-১৩ সালে রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদি ১১৩টি নতুন ট্রেনের ঘোষণা করেছিলেন। ৪৫টি নতুন রেললাইনের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেগুলির কী হল?’ তবে শুধুমাত্র বাংলাকে বঞ্চনার ইস্যুই নয়। সামগ্রিকভাবে রেলের পরিষেবা নিয়েই এদিন কেন্দ্রকে চেপে ধরেন বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের বুলেট ট্রেন প্রকল্পকে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়ে সুদীপবাবু বলেন, ‘ভারতের মাটির যা প্রকৃতি, তাতে কোনওদিনই এখানে জাপানের মতো বুলেট ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। কারণ তার জন্য সম্পূর্ণ আলাদা পরিকাঠামো প্রয়োজন। বুলেট ট্রেন প্রকল্প নিয়ে দেশের মানুষকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।’ ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের দ্রুত সফল বাস্তবায়ন, আইআরসিটিসির খাবারের গুণগত মানোন্নয়ন, বিভিন্ন রয়্যাল এক্সপ্রেসের আসন ফাঁকা থাকা, ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টার জার্নির রেল সফরে ট্রেনে প্যান্ট্রি কারের ব্যবস্থার মতো একাধিক ইস্যু তোলেন ওই তৃণমূল এমপি। সেইসঙ্গে টেনে আনেন রেলের শূন্যপদের প্রসঙ্গও। সুদীপবাবু বলেন, ‘বিশেষ করে গ্যাংম্যান এবং রেলের চালক পদে অসংখ্য পদ ফাঁকা রয়েছে। শুধু গ্যাংম্যানের পদেই দু’লক্ষের বেশি শূন্যপদ রয়েছে। রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণ গ্যাংম্যানেরাই করেন। ফলে সুরিক্ষত রেলযাত্রায় এঁদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চালক পদেও প্রচুর আসন শূন্য রয়েছে। অল্প সংখ্যক চালকদের দিয়ে বেশি ট্রেন চালাতে হচ্ছে বলে অনেক সময়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। অবিলম্বে এইসব শূন্যপদে রেলের লোক নিয়োগ করা প্রয়োজন।’
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরি বলেন, ‘রেলের পরিকাঠামো উন্নয়নে কেন্দ্রের পূর্বতন ইউপিএ জমানার তুলনায় বর্তমান মোদি সরকার অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালে প্রতি বছর ৩ হাজার ৩৫৭ কিলোমিটার রেললাইন নবীকরণ হয়েছে। অথচ ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রতি বছর রেললাইন নবীকরণ হয়েছে ৩ হাজার ২৭ কিলোমিটার। যে ডেডিকেটেড ফ্রেট করিড নিয়ে মোদি সরকার এত কথা বলছে, ২০০৬ সালে তা শুরু করেছিল ইউপিএ সরকারই। ৫০ বছরে নাকি দেশে রেলের কোনও পরিকাঠামোগত উন্নয়নই হয়নি। ইউপিএ সরকার জমি তৈরি করে না দিলে এখন রেল নিয়ে এভাবে স্বপ্ন দেখানো সম্ভবই হত না।’ দেশের প্রথম সেমি হাইস্পিড ট্রেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস নিয়েও এদিন সরকারকে কটাক্ষ করেছেন অধীরবাবু। বলেছেন, ‘ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে চলার কথা ছিল এই ট্রেনের। অথচ চলছে ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। পরিকাঠামো ছাড়াই এর উদ্বোধন করা হয়েছে।’ রেলের সাতটি প্রোডাকশন ইউনিটের বেসরকারিকরণের অভিযোগ প্রসঙ্গেও কেন্দ্রকে তোপ দাগে কংগ্রেস। রেলমন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামীকাল সংসদে জবাবি ভাষণ দেবেন রেলমন্ত্রী।