হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
ক্যান্সার ও আতঙ্ক যেন সমার্থক। যদিও এখনকার অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ক্যান্সারের চিকিৎসাও চলে এসেছে নাগালের মধ্যেই। এই রোগটিকে হারিয়েও দিব্যি হেসেখেলে জীবন উপভোগ করছেন অসংখ্য মানুষ। তাই ক্যান্সার নিয়ে অতিরিক্ত নেতিবাচক চিন্তাধারার জায়গা আজ আর নেই। বরং আতঙ্ক ত্যাগ করে আমাদের এই রোগটি সম্পর্কে আরও সচেতন হতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসায় অনেক সুবিধা হয়। তাই রোগ লক্ষণের দেখা মিললেই একটুও দেরি না করে ডাক্তারবাবুর শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তবেই রোগটির সঙ্গে সহজে লড়াই করা সম্ভব। এবার সেই লক্ষ্যেই ক্যান্সারের প্রাথমিক কয়েকটি লক্ষণ সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক—
শরীরের কোনও অংশ অহেতুক ফুলে ওঠা। ফোলা অংশটা কোনও ফোঁড়া বা ওই জাতীয় কিছু নয়। টিউমারের মতো মনে হচ্ছে।
বগল, গলা, কুঁচকি সহ শরীরের কোনও অংশের লিম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে ওঠা।
দেহের কোনও অংশে ঘা হয়েছে। চিকিৎসা করালেন। কিন্তু চিকিৎসার পরও ঘা সারছে না।
মেনস্ট্রুয়েশনের সময় ছাড়াও অন্য সময়ে ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং।
দুর্গন্ধ যুক্ত ভ্যাজাইনাল হোয়াইট ডিসচার্জ।
ঘনিষ্ঠ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের পর একাধিকবার ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং।
ব্রেস্টে ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড হয়েছে, জায়গাটা ফুলে রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে কাশি রয়েছে। চিকিৎসা করালেন। ওষুধও খেলেন। তারপরও কমছে না— এমনটা হলে অবশ্যই সচেতন হোন। বিশেষত ধূমপায়ীরা এই ধরনের লক্ষণকে কোনও মতেই অগ্রাহ্য করবেন না।
হঠাৎ গলার স্বর ভেঙে গিয়েছে। গার্গেল করে, গরম জলে ভাপ নিয়েও কমল না। অগত্যা চিকিৎসকের কাছে গেলেন। ওষুধ খেলেন। কোনও লাভ নেই— এই মতো অবস্থায় সতর্ক হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
দ্রুত ওজন কমছে। কেন ওজন কমছে, তার যুক্তিসঙ্গত কোনও উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না। পাশাপাশি বেশ দুর্বল লাগছে।
নাক, কান, রেক্টাম সহ শরীরের যে কোনও রন্ধ্রপথে রক্তপাত হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এখানে বলে রাখি, এই রকম শারীরিক অবস্থায় অনেকেই নিজের মতো করে রক্তপাতের কারণ খোঁজার চেষ্টা করেন। কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখেন ব্লিডিং কমল কি না। তারপর না কমলে চিকিৎসকের কাছে আসেন। এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত অবশ্য সমস্যার হাতই মজবুত করে। এই সময়ে রোগ আরও কিছুটা গড়িয়ে যেতে পারে। তাই রক্তপাতের সমস্যা হলে প্রথমেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
শিশুর ক্রমাগত রক্তাল্পতা দেখা যাচ্ছে। দিনদিন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে জ্বর।
বয়স্ক মানুষের হঠাৎ প্রাতঃকৃত্যের অভ্যেস পরিবর্তন। আগে একবার ল্যাট্রিনে যেতেন, এখন হঠাৎ করেই তিন-চারবার যেতে হচ্ছে। আবার কিছুদিন ল্যুজ মোশন হচ্ছে, তারপর হচ্ছে কনস্টিপেশন, এভাবেই চলছে— এমন লক্ষণেও সতর্ক হতে হবে।
এছাড়া শরীরের যে কোনও অস্বাভাবিক পরিবর্তন যা আগে কখনও ছিল না। হঠাৎ করে নজরে এল। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে না। এই পরিবর্তনের কারণ খুঁজতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মনে রাখবেন, এই লক্ষণগুলি দেখা দিল মাত্রই ক্যান্সারই হয়েছে তেমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। এই উপসর্গ থেকে অন্য রোগও হওয়া সম্ভব। তবে ক্যান্সার আছে না নেই সেটা জানতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রথমেই চিকিৎসা
ক্যান্সার চিকিৎসার প্রথম শর্তই হল দ্রুত রোগ চিহ্নিতকরণ। লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে ঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা করা যায়। ক্যান্সার রয়েছে কি না নিশ্চিত করে বুঝতে বায়োপ্সি পরীক্ষা করা হয়। এছাড়াও প্রয়োজন মতো সিটি স্ক্যান, এমআরআই স্ক্যান ইত্যাদি টেস্ট করতে হতে পারে।
এবার অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে, কেন দ্রুততার সঙ্গে ক্যান্সার নির্ণয় করা অত্যন্ত জরুরি? আসলে ক্যান্সার রোগটিকে এক, দুই, তিন, চার— এই চারটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। এক ও দুই হল অসুখের প্রাথমিক পর্যায় বা আর্লি স্টেজ। তিন ও চার হল রোগের গড়িয়ে যাওয়া পর্যায় বা অ্যাডভান্স স্টেজ। চিকিৎসার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, বর্তমানে প্রাথমিক স্তরে রোগ ধরা পড়লে বেশিরভাগ ক্যান্সারেরই চিকিৎসা করতে অনেক সুবিধে হয়। এই পর্যায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। চিকিৎসার খরচও অনেকটা কম। রোগ হারিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও এই পর্যায়ের রোগীরই সবথেকে বেশি। অপরদিকে অ্যাডভান্স স্টেজে চিকিৎসা অনেক জটিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা হয় দীর্ঘকালীন। চিকিৎসার খরচও এই পর্যায়ে অনেক বেশি হয়। কিছু ক্ষেত্রে তো আবার রোগ এতটাই গড়িয়ে যায় যে চিকিৎসা করার সুযোগটুকুও পাওয়া যায় না। সবমিলিয়ে অ্যাডভান্স স্টেজে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার হার কিছুটা কম। তাই দ্রুত রোগনির্ণয় করাটাই হল বুদ্ধিমানের কাজ। তবে দুঃখের হলেও এটা সত্যি যে, সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশে এখনও বেশিরভাগ ক্যান্সারই অ্যাডভান্স স্টেজেই ধরা পড়ে। তখন চিকিৎসা করা কঠিন হয়। কিন্তু, আমরা যদি সকলে সচেতন হতে পারি, তবে বেশিরভাগ সময়ই এই রোগের বিরুদ্ধে জিতে যাওয়া সম্ভব। বর্তমানে ক্যান্সার চিকিৎসা একেবারে অন্য স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। কেমো, রেডিয়েশন, রোবোটিক সার্জারি, ক্যান্সারের ওষুধ— সবেতেই এসেছে আমূল বদল। আর সব থেকে বড় কথা, এই দেশ, রাজ্য তথা কলকাতার বুকেই মিলছে বিশ্বমানের পরিষেবা। তাই দুশ্চিন্তা দূরে সরিয়ে রেখে রোগ লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবেই দ্রুত রোগ থেকে সেরে ওঠা যাবে।