হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
নবজাতকের জন্য বুকের দুধই সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্য। কারণ বুকের দুধেই আছে শিশুর চাহিদামাফিক যাবতীয় পুষ্টিকর উপাদান। শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতি ও সময়মতো স্তন্যপান সংক্রান্ত কারণের জন্য প্রতিবছর ১ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃদুগ্ধ পান সপ্তাহ। প্রতিবছরই এই সপ্তাহে বিভিন্ন জায়গায় স্তন্যপান নিয়ে কর্মশালা । তবুও বিশ্বব্যাপী তিনটি বাচ্চার মধ্যে দু’টি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় না।
বাস্তব পরিস্থিতি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শূন্য থেকে ২৩ মাসের সমস্ত বাচ্চাকে সর্বোত্তমভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো হলে বছরে আট লক্ষ ২৩ হাজারেরও বেশি শিশুকে বাঁচানো যেত। তবে ছয় মাসের কমবয়সি শিশুদের মধ্যে কেবলমাত্র ৪১ শতাংশ শিশুদের একমাত্র মাতৃদুগ্ধ পান করানো হয়। ভারতে, কেবলমাত্র ৪১.৬ শতাংশ মহিলারা জন্মের একঘণ্টার মধ্যে স্তন্যপান করা শুরু করতে পারেন, যদিও ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-৪ (২০১৫-১৬) অনুযায়ী, কেবলমাত্র ৫৫ শতাংশ বাচ্চাকে ০-৬ মাসের মধ্যে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো হয়।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে স্তন্যপান শুরু করা গেলে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং-এর হার অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
শ্রীলঙ্কা, তুর্কমেনিস্তানের মতো দেশগুলিতে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং-এর হার বৃদ্ধির পিছনের কারণগুলি হল— ক্রমবর্ধমান প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি, স্কিন কন্টাক্ট, জন্মের একঘণ্টার মধ্যে স্তন্যপান, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ফর্মুলা কোম্পানিগুলোর প্রতি কঠোর নিয়ন্ত্রণ, শিশু বান্ধব হাসপাতাল প্রকল্পের বাস্তবায়ন।
বিশেষজ্ঞের মতে আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির হার বৃদ্ধি পেলেও, ক্রমবর্ধমান সিজারিয়ান সেকশন এবং জন্মের পর বাচ্চা ও মাকে আলাদা রাখার প্রবণতা, সচেতনতা বৃদ্ধিতে উপযুক্ত অর্থবরাদ্দের অভাব এবং ফর্মুলা মিল্ক প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির উপর দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা লক্ষ্যপূরণের অন্তরায় হয়ে উঠছে।
কয়েকটি ভুল ধারণা
অনেক মায়েরই স্তন্যপান করানো নিয়ে অনেক ভুল ধারণা থাকে, অনেকেই শিশুকে স্তন্যপান করাতে চান না, অনেকে সঙ্কোচ বোধও করেন। স্তন্যপানের উপকারিতা সম্পর্কে মায়েদের অবগত করার উদ্দেশে কর্মসূচিগুলি হয়ে থাকে। অনেক মায়েরাই ছ’মাসের আগেই শিশুকে কৃত্রিম দুধ অথবা বাজার চলতি বিভিন্ন খাবার খাওয়াতে শুরু করেন। তাতে তেমন কোনও সুফল পাওয়া যায় না, যা মায়ের দুধ থেকে পাওয়া সম্ভব। বরং অনেক সময় বাইরের খাবার খেলে শিশুর শরীরে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। তবে বুকের দুধ খাওয়ানো কেবল একজন মায়ের কাজ নয়। এর জন্য দক্ষ পরামর্শদাতা, পরিবারের সদস্য, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, নিয়োগকর্তা, নীতি নির্ধারক এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে উৎসাহ ও সমর্থন প্রয়োজন।
শিশুকে স্তন্যপান করানোর উপকারিতা কী কী?
ক. মাতৃদুগ্ধ প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডির উৎস। মায়ের দুধ থেকে শিশুর শরীরে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডি প্রবেশ করে, যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। স্তন্যপান করালে বাচ্চার শরীর ভালো থাকে, সর্দি-কাশি কম হয়।
খ. সদ্যোজাত শিশু খাদ্য, পানীয়, বিশ্রাম এইসব কিছুর জন্যই মায়ের উপর নির্ভরশীল। স্তন্যপানের মাধ্যমেই একটি শিশু তার মা’কে চিনতে পারে।
গ. বাচ্চারা স্তন্যপান করলে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি থেকে সুরক্ষিত থাকে।
ঘ. স্তন্যপান বাচ্চার মস্তিষ্ক বিকাশে সহায়তা করে।
ঙ. বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে না। বরং বাইরের দুধ খাওয়ালে এই সমস্যা দেখা দেয়।
চ. স্তন্যপান শিশুর শারীরিক গঠনে সহায়তা করে।
কেন প্রসূতি তাঁর সন্তানকে স্তন্যপান করাবেন?
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মাতৃদুগ্ধ যেমন একটি শিশুকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে, ঠিক তেমনই মায়ের জন্যেও এটি সমানভাবে উপকারী। যেমন—
ক. গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেসব মহিলা নিয়মিত তাঁর শিশুকে স্তন্যপান করান, তাঁদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা ২৫ শতাংশ কমে যায়। শুধুমাত্র ব্রেস্ট ক্যান্সারই নয়, স্তন্যপান ইউটেরাস ও ওভারি ক্যান্সারকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
খ. শিশুর পরিচর্যা করার মধ্যে দিয়ে মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। মা ও শিশুর মধ্যে সম্পর্ক নিবিড় হয়।
গ. স্তন্যপান করালে মায়ের ওজন কমে। শিশু পরিচর্যায় অক্সিটোসিন উত্পাদনে সাহায্য করে, যা মায়ের মন ভালো রাখে এবং ডিপ্রেশন আসতে দেয় না।
ঘ. গর্ভকালীন অবস্থায় শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা কমে ও ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ে। ফলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে। এছাড়া, গর্ভকালীন ওজন বৃদ্ধির কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সন্তানকে স্তন্যদানের মধ্য দিয়ে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
কীভাবে ব্রেস্ট ফিডিং সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব?
• স্বাস্থ্যকর্মীদের মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ।
• মাতাপিতা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বুকের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত করা।
• সরকারি প্রচার।
• বেতনভুক্ত পরিবারিক ছুটি এবং কর্মক্ষেত্রে স্তন্য পান করাতে নীতিমালা কার্যকর করা।
• ফর্মুলা দুধ এবং অন্যান্য বুকের দুধের বিকল্পের বিপণন নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
• বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ দ্বারা বিকাশিত সকল প্রসূতি হাসপাতালে বুকের দুধ খাওয়ানোর ১০টি পদক্ষেপ কার্যকর করা ও অসুস্থ নবজাতকের জন্য বুকের দুধ সরবরাহ করা।
কোভিড-১৯ পজিটিভ মা কী করবেন?
১. খাওয়ানোর সময় মাস্ক পরুন।
২. শিশুকে স্পর্শ করার আগে এবং পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন, নিয়মিতভাবে শিশুর ব্যবহার্য বস্তু জীবাণুমুক্ত করুন।
শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো এবং ওজনে কম বাচ্চাদের জন্য ‘ক্যাঙ্গারু মাদার’ পদ্ধতি স্তন্যপানের হার বৃদ্ধি করে।
কয়েকটি জরুরি তথ্য
জীবনের প্রথম ছয় মাস ধরে শিশুকে শুধু বুকের দুধই খাওয়াতে হবে। অন্য কোনও তরল বা কঠিন খাদ্য খাওয়ানো যাবে না। এমনকী জলও পান করানো যাবে না।
বুকের দুধ খাওয়ানোর সুবিধা এবং কৃত্রিম খাদ্য খাওয়ানোর ঝুঁকি সম্পর্কে তথ্য জানার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে। এই তথ্য সরবরাহ করার দায়িত্ব সরকারের। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমও শিশুর স্তন্যদুগ্ধ পানের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবেই এগবে ভারত।