হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে আমরা সকলেই শঙ্কিত। এই ভয়ঙ্কর সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই দীর্ঘদিন নিজেদের প্রায় গৃহবন্দি করে রেখেছিল। অফিস-কাছারি-বাজারহাট ও একান্ত প্রয়োজন ছাড়া অনেকে এখনও বাহিরমুখো হচ্ছেন না। বর্তমানে সংক্রমণ আগের তুলনায় কমলেও, ভয়ভীতির কারণে ডাক্তারবাবুর চেম্বার বা হাসপাতালের আউটডোরে যাওয়ার আগে বহু মানুষ দশবার ভাবছেন। ফলে বিভিন্ন শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও সমস্যা অবহেলিত থাকছে মাসের পর মাস। তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল আমাদের ‘চোখ’। আর চোখের সবচাইতে সাধারণ সমস্যা হল ছানি। বহু মানুষ ইতিমধ্যেই ছানির সমস্যায় ভুগছেন। অথচ অপারেশন করাচ্ছেন না। ছানির ফলে মানুষের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকে এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম করার ক্ষেত্রে বিবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
সময়ে ছানি অপারেশন না করালে কী কী বিপদ?
অনেক মানুষের ধারণা, ছানি কেবলমাত্র বার্ধক্যজনিত কারণে হয়। এই ধারণা ভুল। বয়সবৃদ্ধিজনিত ছাড়াও ছানি অনেক ক্ষেত্রে আঘাত বা ট্রমা, জন্মগত ও ডায়াবেটিস থেকেও হতে পারে। এমনকী কোনও অসুখ বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও চোখে ছানি দেখা দিতে পারে। এইসকল ক্ষেত্রে চিকিৎসায় দেরি করলে রোগীর দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ছানির একটাই চিকিৎসা—অপারেশন। সঠিক সময় ছানি অপারেশন না করালে জটিলতা বাড়ে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বা আংশিক দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসায় দেরির কারণে ছানি বেশি পেকে যায় এবং সেজন্য শক্ত হয়ে যায়। ডাক্তারির পরিভাষায় বিষয়টিকে আকছার আমরা বলে থাকি ‘লেন্স অব হাইপারম্যাচিয়োর ক্যাটার্যাক্ট বিকামস হার্ড’।
বর্তমান সময়ে ছানি অপারেশন নিয়ে কিছু জরুরি প্রশ্ন
সকলেই আশঙ্কায় ভুগছেন, ১. চোখের অপারেশনের আগে কি কোভিড টেস্ট আবশ্যক? ২. অপারেশনের সময়ে কি সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে?
উত্তর হল—১. সরকারের নিয়মাবলি অনুযায়ী ছানি অপারেশনের আগে কোভিড টেস্ট আবশ্যক নয়। ২. করোনার সংক্রমণ ছড়ানোর মূল পদ্ধতি হল সংক্রামিত ব্যক্তির শ্বাসনালিজনিত এরোসল।
এছাড়াও জেনে রাখুন, ১. ছানি অপারেশন হয় মূলত লোকাল অ্যানাস্থেসিয়ায়। ২. চক্ষু পরীক্ষা ও অপারেশন এখন যে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে করা হয়, তাতে অপারেশনের সময় কোনও রক্তক্ষরণ হয় না। ৩. রোগীর নাক ও মুখ সম্পূর্ণরূপে ঢাকাও থাকে। ৪. সাধারণ অ্যানাস্থেশিয়ার সময় রোগীর শ্বাসনালিতে ‘এন্ডোট্র্যাকিয়াল টিউব’ পরিয়ে দেওয়া হয়। ৫. কৃত্রিমভাবে ভেন্টিলেটর মেশিন দ্বারা শ্বাসপ্রশ্বাস বজায় রাখার সময় যে এরোসল তৈরি হয়, সেই এরোসল তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও ছানি অপারেশনের সময় থাকে না। কারণ ছানি অপারেশনে সচরাচর সাধারণ বা জেনারেল অ্যানাস্থেসিয়ার দরকার হয় না। ৬. এছাড়া অপারেশন থিয়েটার এমনভাবেই জীবাণুনাশক দিয়ে পরিশোধিত করা হয়, যে সেখানে জীবাণু থাকার আশঙ্কা থাকে না বললেই চলে। ৭. ছানি অপারেশনের পরবর্তী সময়েও রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার প্রয়োজন হয় না। রোগী অপারেশনের দিন থেকেই নিজের সমস্ত দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারেন। এই সকল কারণে আপারেশনের আগে রোগীর কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট আবশ্যক নয়।
সময়ে অপারেশন না করালে কী কী বিপদ?
‘ফেকো’ বা ফেকো-ইমাল্সিফিকেশন নামক অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বিনা ইঞ্জেকশনে ছানি অপারেশন করা হয়।
ছানি পেকে শক্ত হলে এই পদ্ধতিতে আল্ট্রাসোনিক এনার্জির ক্ষরণ সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি করতে হয়। ফলে অপারেশনে ঝুঁকি থাকে। অপারেশনের পর দৃষ্টি ভালোমতো ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক জটিলতা দেখা দেয়।
এছাড়া ছানির পিছনের পর্দা (পস্টেরিয়ার ক্যাপসুল) ছিঁড়ে ছানির অন্তর্ভাগ অর্থাৎ নিউক্লিয়াস চোখের আরও গভীরে ডুবে গিয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আরেকটি সমস্যা হল, এই সমস্যা অতিক্রম করতে ‘ফেকো’-এর বদলে চোখ কেটে ছানি বের করতে হয়। ফলে ‘ফেকো’তে বিনা ইঞ্জেকশনে, বিনা রক্তক্ষরণে যে সার্জারি সম্ভব ছিল, সেই সুবিধা পাওয়া যায় না। চোখ কাটার ফলে রক্তক্ষরণ, অপারেশন পরবর্তী সময় চোখে ব্যথা ও সংক্রমণের আশঙ্কাও বেশি হয়। প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হতে পারে। নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
সুতরাং সময়ে চোখের চিকিৎসা করান। সময়ে ছানি বা অন্যান্য জরুরি অপারেশন করান। অযথা ভয় পেয়ে গৃহবন্দি থেকে চিকিৎসার সাহায্য নিতে দেরি করবেন না।