হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
একমো কী?
একমো’র পুরো কথা হল এক্সট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন। এটি একটি জীবনদায়ী যন্ত্র। যন্ত্রটি দেহের বাইরে কৃত্রিম ফুসফুসের মতো কাজ করে। এক্ষেত্রে একটি নলের মাধ্যমে শরীরের কার্বন-ডাই-অক্সাইড যুক্ত রক্ত একমো যন্ত্রে আসে। এরপর এই যন্ত্র থেকেই অপর একটি নলের সাহায্যে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরে পৌঁছয়। একমো ব্যবহারের মূল লক্ষ্য হল ফুসফুসকে বিশ্রাম দেওয়া এবং অঙ্গটিকে সুস্থ হতে সাহায্য করা।
একমো আজ শিরোনামে উঠে এলেও উন্নত দেশগুলিতে কিন্তু গত শতাব্দী থেকেই এই যন্ত্র ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে প্রাথমিকভাবে হার্টের বাইপাস সার্জারির সময়ই একমো ব্যবহার হতো। এরপর ফুসফুসের সমস্যায় এর ব্যবহার শুরু হয়।
কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার?
মূলত সিভিয়র নিউমোনিয়া হলেই এর ব্যবহার হয়। নিউমোনিয়ার কারণে ফুসফুস ১০০ শতাংশ কার্যক্ষমতা হারিয়েছে, কোনও ওষুধ কাজ করছে না, শরীরে অক্সিজেন-কার্বন-ডাই অক্সাইডের সমতা বজায় থাকছে না— এই ধরনের লক্ষণে একমোর কোনও বিকল্প নেই। এছাড়াও হাতে গোনা কয়েকটি ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন চিকিৎসা যেমন— বাইপাস সার্জারি, হার্ট মাসল ডিজিজ, হার্টের পেশির প্রদাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার হয়।
করোনার ক্ষেত্রে এই যন্ত্রের কার্যকারিতা কতটা?
করোনা বহু ক্ষেত্রেই ফুসফুসকে একেবারে বিকল করে দিচ্ছে। এমন অবস্থায় একমোই হল চিকিৎসার মূল হাতিয়ার। সমস্ত ধরনের চিকিৎসা বিফল হওয়ার পর একমো ব্যবহার করা হয়। করোনা সঙ্কটের মধ্যে একমো একবারে জীবনদায়ী একটি যন্ত্র। করোনার ক্ষেত্রে একমোর সাফল্যের হার প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে মানুষকে বাঁচিয়ে আনতে পারে এই যন্ত্র। তাই এই যন্ত্র নিয়ে চিকিৎসকমহলে এত চর্চা।
কতদিন চিকিৎসার আওতায় থাকতে হয়?
বুঝতেই পারছেন, খুব খারাপ অবস্থা না হলে রোগীকে একমো দেওয়া হয় না। ফলে এমন জটিল সমস্যায় পড়া রোগীদের একমো সাপোর্টে একটু বেশি দিনই থাকতে হয়। একমো সাপোর্ট চলে মোটামুটি ৩০ দিনের মতো। তারপর আরও ২০ থেকে ২৫ দিন রোগীকে ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়। মোটামুটি দুই মাস পর রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। বাড়িতে গিয়ে এক মাস বিশ্রাম। তারপরই ফেরা যায় স্বাভাবিক জীবনে।
একমো থেকে ফেরার পর জীবন কেমন?
একদম স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়। কোনও বাধানিষেধ নেই। আগেও যেই কাজ করতেন, ফিরে এসেও সেই কাজ করা যায়।
একমো যন্ত্রটি এখনও পশ্চিমবঙ্গের হাতে গোনা কয়েকটি হাসপাতালেই রয়েছে। এর কারণ কী?
একমো যন্ত্রটির দাম তেমন বেশি নয়। চাইলেই অনেক হাসপাতালে বসানো যেতে পারে। তবে সমস্যার মূল রয়েছে অন্য জায়গায়। এই যন্ত্রটি সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য সুযোগ্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসাকর্মীর প্রয়োজন। আমাদের রাজ্যে এখনও সেই প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব রয়েছে। তাই চাইলেই একমো যন্ত্র বাড়িয়ে পরিষেবা দেওয়ার উপায় নেই। অবশ্য বর্তমানে বহু চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী একমো ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাই আগামীদিনে এই পরিষেবা পাওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়বে বলেই আশা করা যায়।
একমো চিকিৎসার বিপুল খরচ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
শুধুমাত্র একমো প্রযুক্তি ব্যবহারে তেমন কোনও খরচ নেই। রোজ গড়ে ১০ থেকে ২০ হাজারের মধ্যে খরচ হয়। তবে বিল বৃদ্ধি হয় অন্য কারণে। এক্ষেত্রে একমো সাপোর্টে থাকা রোগীকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রাখতে হয়। চলে সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ। পাশাপাশি রোগীকে রোজ প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার ওষুধ দিতে হয়। এইসব জুড়ে খরচটা দিনপ্রতি এক লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর আগেই বলেছি, একমো-তে অনেকদিন থাকতে হয়। ফলে চিকিৎসার খরচটা অনেকটা বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।
এত টাকা খরচের পরও তো অনেক ক্ষেত্রেই রোগী প্রাণ হারাচ্ছেন।
দুর্ভাগ্যের হলেও এটা সত্যি। তবে একমো ব্যবহার না করলে তো রোগী আগেই মারা যেতে পারতেন। একমো ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টাটুকু তো করা গেল। আর ভুলে গেলে চলবে না যে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী বেঁচে ফিরছেন। এই হারটা কিন্তু কম নয়। তাই একমো-এর সাফল্যের দিকটাও মাথায় রাখা উচিত। বিজ্ঞানের ধর্মই তো এগিয়ে চলা।