সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত পরিশ্রমে শরীরে অবনতি। নানাভাবে অর্থ অপচয়। কর্মপরিবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি।প্রতিকার: ... বিশদ
খাবেন কী!
বায়ু-পিত্ত-কফ। আয়ুর্বেদ মতে এই তিন দোষ সাম্যাবস্থায় মানেই শরীর নীরোগ রয়েছে। আর বৈষম্য হলেই হয় রোগের উদ্ভব। বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য ছয় ঋতুর বিভিন্ন সময়ে ওই তিন দোষের মধ্যে বৈষম্য ডেকে আনে। ফলে বিশেষ ঋতুতে বিশেষ সমস্যা এবং ঋতু পরিবর্তনকালীন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তবে প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মেই মানবদেহের তিন দোষকে সাম্যাবস্থায় রাখতে প্রতিটি ঋতুতে বিশেষ শাকসব্জি ও ফলমূল দান করে। সব মরশুমি শাকসব্জি এবং ফলে প্রচুর পরিমাণে ‘ভিটামিন সি’, ‘ভিটামিন ই’ এবং ‘ভিটামিন এ’-র পূর্বসূরি ‘বিটা ক্যারোটিন’ থাকে। সঙ্গে থাকে অন্যান্য ভিটামিন, খনিজ এবং ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’। এই উপাদানগুলি শরীরের মধ্যে উৎপন্ন হওয়া ক্ষতিকর কিছু রাসায়নিক দ্রব্য থেকে বিভিন্ন অঙ্গকে রক্ষা করে। গড়ে তোলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
দিনের পর দিন বাড়ছে তাপমাত্রা। তবে খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই মরশুমেও আপনি পেতে পারেন স্বস্তি। গ্রীষ্মে মানবদেহ বায়ু দোষ সঞ্চয়প্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে প্রশমিত হয় কফ দোষ। আসে জলহানি জাতীয় দৌর্বল্য। প্রচণ্ড আর্দ্রতার কারণে এখন আমাদের প্রচুর ঘাম হচ্ছে। ফলে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যাচ্ছে। দেহে জলের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। তাই গ্রীষ্মে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য জামরুল, শসা, ফুটি, আম, তরমুজ, আঙুর এবং লিচুর মতো ফল খুবই উপকারী। সব্জির মধ্যে উচ্ছে, ঝিঙে, পটল, করলা, ঢ্যাঁড়স, কুমড়ো, কলমি শাক, পুঁই শাক, সজনে শাক পিত্ত দোষ উপশম করে জলহানি কমায় এবং তিন দোষের মধ্যে সাম্য আনে।
বর্ষায় বায়ুর প্রকোপ বাড়ে। তাই অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা, অতিসার বা ডায়ারিয়ার মতো রোগে মানুষ প্রায়ই ভোগেন। এই সময় মরশুমি ফল পেয়ারা, কলা এবং সব্জির মধ্যে ঝিঙে, পটল, চালকুমড়ো, ক্যাপসিকাম, বেগুন, আমড়া, হিঞ্চে ও গিমে শাক শরীরের পক্ষে হিতকর। সঙ্গে রান্নায় শুকনো আদা, জিরে, ধনে, গোলমরিচ ইত্যাদি মশলা পরিমিত মাত্রায় খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত। এগুলি পিত্তবল বাড়ায়।
শরতে পিত্তের প্রকোপ দেখা যায়। এই সময় ওল, কচু, মানকচু, লাল শাক, পটল ইত্যাদি সব্জি এবং ফল হিসেবে সবেদা, বাতাবিলেবু, আনারস, পানিফল, তাল, আপেল খাওয়া স্বাস্থ্যকর। এই সব ফল ও শাকসব্জি পিত্তকে প্রশমন করে এবং ত্রিদোষকে সাম্যাবস্থায় আনে।
হেমন্তে পিত্ত দোষ প্রশমিত করতে খান মুসম্বি, শরতের মরশুমি ফল এবং শাকসব্জি।
শীতকালে কফ দোষ সঞ্চিত হয়। এটি সব্জির সময়। বিট, গাজর, বিনস, মটরশুঁটি, টম্যাটো, সিম, পেঁপে, মেথি শাক শরীরের পক্ষে হিতকর। তবে বেশি পরিমাণে ফুলকপি ও বাঁধাকপি খাওয়া
বাঞ্ছনীয় নয়। ফলের মধ্যে কমলালেবু এবং বেদানা স্বাস্থ্যকর।
বসন্তে কফের প্রকোপ হয়। কচি নিমপাতা, সজনে ডাঁটা, উচ্ছে, পটল, বেগুন, লাউ, কুমড়োর মতো সব্জি এবং ফলের মধ্যে আমলকী, পাকা বেল, বেদানা, কুল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
তুলনায় দুর্বল এবং রুগ্নদের জন্য সারাবছর পরিমিত কলা, খেজুর, কাজু, চিনাবাদাম, আখরোট, আমন্ড ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর উপাদান খাওয়া যেতে পারে।
প্রকৃতির নিয়মে উৎপন্ন হওয়া শাকসব্জি, ফলমূল খাওয়াই ওই তিন দোষ বৈষম্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বোত্তম উপায়। আয়ুর্বেদবেত্তারা সেই বিধানই দিয়েছেন।
পরামর্শে বিশিষ্ট যোগ বিশারদ প্রেমসুন্দর দাস।
প্রাণায়াম
কপালভাতি: পদ্মাসন বা সুখাসন— যে কোনও একটি আসনে বসুন। মাথা ও মেরুদণ্ড দুই-ই সোজা রাখুন। দুই হাতকে জ্ঞান বা চিন মুদ্রার ভঙ্গিতে রাখুন। স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে শ্বাস নিন। এই প্রাণায়ামে দ্রুত শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হয়। এইভাবে বার দশেক দ্রুত লয়ে এই পদ্ধতি অভ্যেসের পর মিনিট দুই স্বাভাবিক লয়ে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার কাজ সারুন। প্রতি দশ বারে একটি সেট করুন। পাঁচটি সেট করুন।
অনুলোম-বিলোম: অনুলোমের ক্ষেত্রে একদিকের নাক বন্ধ থাকবে। প্রথমে ডানদিকের নাকের ছিদ্র চেপে ধরে বাঁ দিক দিয়ে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার কাজ করতে হবে। পরে বাঁ দিকের নাকের ছিদ্র চেপে ধরে ডান দিক দিয়ে শ্বাস গ্রহণ ও বর্জনের অভ্যেস করতে হবে। বিলোমের বেলায় দুই নাক দিয়েই একই সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই শ্বাস নেওয়া প্রয়োজন। তবে এই দু’টি তিন ধাপে। অর্থাৎ প্রথমে কিছুটা শ্বাস নিয়ে দু’সেকেন্ড থামতে হবে। আবার শ্বাস নিতে হবে। ফের দু’সেকেন্ড থেমে শেষ ধাপে পুরো শ্বাস নিতে হবে।
অ্যারোবিক্স
হাঁটা, জগিং, সাঁতার, সাইকেল চালানো, নাচ ইত্যাদি ব্যায়াম ও অ্যারোবিক্স এক্সারসাইজ করলেও হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ে, বাড়ে হার্ট রেট। টানা ২০-৩০ মিনিট করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। না পারলে সকালে ২০ মিনিট ও বিকেলে ২০ মিনিট। ব্যায়াম করার আগে হাঁটু-কোমর-গোড়ালির অবস্থা ও হৃদযন্ত্র-ফুসফুসের কার্যক্ষমতা দেখে নেবেন।
হাড় ও পেশির যত্ন
শরীরের নমনীয়তা বাড়াতে হালকা যষ্টি আসন বা স্ট্রেচিং খুব কাজে আসে। হাড় ও পেশি সবল করতে ওজন নিয়ে ওয়েট ট্রেনিংয়ের ব্যায়ামগুলো করা যেতে পারে। এছাড়াও উষ্ট্রাসন, সেতুবন্ধাসন, অর্ধকূর্মাসন, মৎস্যেন্দ্রাসন, অর্ধহস্তাসন ইত্যাদি আসন করা যায়। অনেকেরই পিঠ, ঘাড় বা স্পাইনাল কর্ডের সমস্যা রয়েছে। তাঁরাও এই আসনগুলি করতে পারেন। লাভদায়ক হবে।
উষ্ট্রাসন: প্রথমে বজ্রাসনে বসে মাটিতে হাঁটু রেখে ধীরে ধীরে বুকটা পিছনের দিকে নিচু করে মেরুদণ্ড বাঁকাতে হবে। শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পিছনের দিকে শরীর বাঁকিয়ে দিতে হবে। এবার হাতের তালু পায়ের তালুতে রেখে মাথা পিছনদিকে নামিয়ে দিতে হবে। ২০ সেকেন্ড স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখুন। যাঁদের গোড়ালি ও হাঁটুর ব্যথা রয়েছে বা হার্টের সমস্যা আছে তাঁরা এই আসন করবেন না।
সেতুবন্ধাসন: চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর পা হাঁটুর কাছে ভাঁজ করে উল্লম্ব অবস্থায় এনে হাত পাশে রেখে মুষ্টিবদ্ধ করতে হবে। এবার ধীরে ধীরে পিঠ উঁচু করে শরীরকেও উল্লম্ব অবস্থানে আনতে হবে। এই অবস্থায় ১০ সেকেন্ড স্থির থেকে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে হবে।
অর্ধকূর্মাসন: হাঁটু ভাঁজ করে পায়ের পাতার ওপর বসুন। এবার হাত দু’টি সোজা করে ওপরে তুলে নমস্কারের ভঙ্গিতে জোড়া করুন। হাত যেন কানের সঙ্গে লেগে থাকে। এরপর সামনে ঝুঁকে প্রণাম করুন। এই সময় পেট ও বুক ঊরুর সঙ্গে এবং কপাল যেন মাটিতে লেগে থাকে। নিতম্ব গোড়ালির সঙ্গে লেগে থাকবে। শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে মনে মনে কুড়ি গুনুন। তার পর হাত ওই অবস্থায় রেখে উঠুন।