পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
ওই যে বললাম। শুধু দুঃখ-কষ্ট পেলেই নয়, চোখ সর্বদাই জলে ভিজে থাকে। আসলে অশ্রু তিন ধরনের— ‘বেসাল’, ‘ইরিট্যান্ট’ ও ‘ইমোশনাল’। চোখে সাধারণ অবস্থায় যে জল তৈরি হয়, তা হল ‘বেসাল টিয়ার’। আর কোনও কারণে অস্বস্তি হলে চোখ থেকে যে জল বেরয়, তাকে বলে রিফ্লেক্স টিয়ার। ধোঁয়া, ধুলো বা পেঁয়াজ কাটার সময় চোখে যে জল আসে, তাকে বলে ‘রিফ্লেক্স টিয়ার’। আর সবচেয়ে বেশি জল আসে কষ্ট-দুঃখ পেলে বা অভিমান হলে। এই অশ্রুকে বলা হয় ‘ইমোশনাল টিয়ার’। আবার অনেক সময় দারুণ খুশি ও আনন্দেও এই অশ্রু ঝরে পড়ে।
চোখ যাতে ঠিকমতো কাজ করে সেজন্য অশ্রু খুব জরুরি। এজন্য চোখে একটা বিশেষ অংশ থাকে। তাকে বলে গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি। ওই গ্রন্থিগুলিই সারাদিন জল তৈরি করে। এমনিতে ওগুলো সামান্য অশ্রু তৈরি করে। সারা দিনে আধ চামচ মতো। তাতেই কাজ চলে যায়। অশ্রুতে কী থাকে? বেশিরভাগটাই জল আর সামান্য পরিমাণে নানা ধরনের লবণ। শুধু তাই নয়। তেল, মিউকাসও থাকে। আর বিভিন্ন রাসায়নিক, যেগুলিকে উৎসেচক বলে। এগুলি জীবাণুকেও মেরে ফেলে।
সামান্য তেল থাকায় অশ্রু শুকিয়ে যেতে পারে না বা চোখের বাইরে বেরিয়ে আসে না। তা না থাকলে চোখ শুকনো থাকত। পলক পড়লেই চোখের পাতা সারা চোখে অশ্রু চারিয়ে দেয়। মিউকাসের জন্য অশ্রু চোখের তারার সঙ্গে লেগে থাকে। চোখে থাকে নিকাশি ব্যবস্থাও। বাড়তি জল ওই নিকাশি দিয়ে নাকে পৌঁছয়। অশ্রু চোখের টিস্যুকে পুষ্টি জোগায়। চোখে ময়লা পড়লে সেটাকে ভাসিয়ে বের করে দেয়।
এ তো গেল ‘বেসাল’ অশ্রুর কথা। এবার আসা যাক ‘ইরিট্যান্ট’ অশ্রুতে। ধোঁয়া লাগলে বা পেঁয়াজ কাটলেও আমাদের চোখ দিয়ে জল পড়ে, জ্বালা করে। এর নেপথ্যে রয়েছে রাসায়নিক উপাদান সালফারের এক ধরনের যৌগ। পেঁয়াজ কাটলে এই যৌগ বেরিয়ে আসে। তা চোখের জলে সঙ্গে মিশে অতি সামান্য অ্যাসিড তৈরি করে। সেজন্য চোখ জ্বালা করে, অস্বস্তিবোধ হয়। তখন অশ্রু ঝরে পড়ে। একে রিফ্লেক্স টিয়ার। অর্থাৎ চোখে অস্বস্তির প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই অশ্রু বেরিয়ে আসে।
আর কান্না পেলে চোখের জল বাঁধ ভাঙে। একে বলে ইমোশনাল বা আবেগের কারণে অশ্রু। এত জল তৈরি হয়, চোখ ধরে রাখতে পারে না। ওই সময় চোখের সবচেয়ে বড় গ্ল্যান্ডের সুইচ অন হয়ে যায়। ফলে একসঙ্গে অনেক জল তৈরি হয়। অনেকটা ঝর্ণার মতো। আর সেটা কিন্তু এমনি এমনি হয় না। দুঃখ-কষ্ট পেলে মস্তিষ্কের একটা নির্দিষ্ট অংশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। ওই অংশই আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে। মস্তিষ্ক থেকে সিগন্যাল আসার পরই অশ্রু ঝর্ণার আগল খুলে যায়। তখন কয়েক মিনিটের মধ্যেই আধ কাপেরও বেশি জল তৈরি হতে পারে। আর এত বেশি জল চলে আসায় চোখের নিকাশি ব্যবস্থাও সক্রিয় হয়ে ওঠে। আগেই বলেছি, এই নিকাশির সঙ্গে নাকের যোগ থাকে। তাই যখন আমরা কাঁদি, তখন নাকেও জল চলে আসে। আর খুব বেশি কাঁদলে, নিকাশি ব্যবস্থাও তা সরাতে পারে না। তখন তা চোখের বাইরে উপচে পড়ে। কিন্তু এর পর থেকে যখন কাঁদবে, তখন কি এত কিছু ভাববে?