পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
বয়স মাত্র ১৬। স্কুলজীবনের শেষ বছর চলছে। স্বাভাবিকভাবেই পড়াশোনার খুবই চাপ। কিন্তু মধুর বিড়ম্বনা হচ্ছে, ছেলেটি স্পেনের সিনিয়র ফুটবল দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। অগত্যা কোচ লুইস ডেলা ফুয়েন্তে ইউরো খেলতে তাকে জার্মানি নিয়ে গিয়েছেন। তাহলে লেখাপড়া? ফাইনাল পরীক্ষার কী হবে? ডিফেন্ডারদের ড্রিবল করার মতো, সমস্যারও হাল বের করে ফেলেছে কিশোর উইঙ্গার। বল পায়ে ইউরোতে মাঠ কাঁপাচ্ছে, আর হোটেলে ফিরেই বইপত্রে ডুব দিচ্ছে। আর এই কিশোর ফুটবলারটি হল— স্প্যানিশ ফুটবলের ‘ওয়ান্ডার বয়’ লামিনে ইয়ামাল। বার্সেলোনার এই খেলোয়াড়কে ইতিমধ্যেই আগামীর তারকা ভাবতে শুরু করেছে ফুটবল বিশ্ব।
ইউরোর প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে জয়ে বড় অবদান ছিল ইয়ামালের। ম্যাচের পর সে বলছিল, ‘জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে ভালো লাগছে। এই ছন্দ ধরে রাখতে হবে। পাশাপাশি আর একটি বিষয়েও আমায় ফোকাস করতে হচ্ছে, সেটা হল স্কুলে এটা আমার শেষ বছর। পরীক্ষার চাপ রয়েছে। তাই ম্যাচ বা প্র্যাকটিসের পর হোটেল রুমে গিয়ে অললাইন ক্লাস, হোম ওয়ার্ক করতেই হয়। মা সঙ্গে আছেন। উনি সাহায্য করেন। স্কুল থেকে এখন ডাক না পড়লেই ভালো। কারণ, ইউরোতে আমরা ইতিহাস গড়তে এসেছি। ফাইনালের আগে জার্মানি থেকে না ফেরার সংকল্প করেছি।’ এদিকে, স্কুল ছাত্র ইয়ামালকে বড়দের টিমে খেলানো নিয়ে বিপত্তিতে স্পেনের ফুটবল কর্তারাও। শিশুশ্রমের অপরাধে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে লা রোহারা। কারণ, জার্মান যুব প্রতিরক্ষা নিয়ম অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়সের নীচে কাউকে রাত ৮টার পর কাজ করানো যায় না। এই আইন যেমন জার্মান নাগরিকদের মানতে হয়, তেমনই সে দেশে আসা বিদেশিদের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য। আর ফিলিপ লামদের দেশে ইউরোর ম্যাচ রাতেই হচ্ছে। একটাই স্বস্তি, খেলাধুলার জন্য এই নিয়ম কিছুটা শিথিল করেছে জার্মান প্রশাসন। রাত ১১টা পর্যন্ত অনূর্ধ্ব-১৮ খেলোয়াড়দের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। আর তাই ইউরোর গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ইয়ামালকে ঘড়িতে রাত ১১ বাজার আগেই মাঠ থেকে তুলে নিচ্ছেন স্প্যানিশ কোচ। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধ ম্যাচে তাকে ৮৬ মিনিটে তুলে নেওয়া হয়েছে। ইতালি-স্পেন দ্বিতীয় ম্যাচটি শুরু হয়েছিল জার্মানির সময়ে রাত ন’টায়। সেখানেও ৭১মিনিটে ইয়ামালের পরিবর্তে ফেরান তোরেসকে নামানো হয়েছিল। তবে নক-আউটে প্রয়োজন পড়লে জরিমানা দিয়েই ১৬ বছরের স্প্যানিশ ফুটবলারকে পুরো সময় মাঠে রাখবে স্পেন।
যাকে নিয়ে এত আলোচনা, সেই লামিনে ইয়ামাল সম্পর্কে আর একটু জানা যাক। বার্সেলোনার লা মাসিয়ায় বেড়ে ওঠা এই ফুটবলারের জন্ম ২০০৭ সালে স্পেনে। বাবা মরোক্কান বংশোদ্ভূত, আর মা গিনির। তবে ইয়ামালের কাছে মরক্কোর হয়ে খেলার অফার ছিল। কিন্তু সে স্পেনকেই বেছে নিয়েছে। প্রতিভাশালী ফুটবলার আর্জেন্তিনার লায়োনেল মেসিকেও ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পরই বার্সেলোনার মূল দলে খেলানো হয়েছিল। কিন্তু ইয়ামালের জন্য ১৬ বছর পূর্ণের অপেক্ষাও করেননি তত্কালীন বার্সা কোচ জাভি হার্নান্ডেজ। বার্সেলোনার ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক হয় এই কিশোর ফুটবলারের। তখন তার বয়স ১৫ বছর ২৯০ দিন। ক্লাব ফুটবলে আলো ছড়িয়ে জাতীয় দলের আঙিনায় আসতেও সময় নেয়নি ইয়ামাল। ২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর স্পেনের সিনিয়র দলে অভিষেক হয়। তারপর থেকেই লা রোহা-ব্রিগেডে নিয়মিত এই কিশোর ফুটবলার। পাশাপাশি ইউরোতে নেমেও ইতিহাস গড়ল সে। ইউরোপ মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টে কনিষ্ঠতম প্লেয়ার ইয়ামাল। পাশাপাশি সবচেয়ে কম বয়সি ফুটবলার হিসেবে অ্যাসিস্টেরও রেকর্ড তার নামে। আর ইউরোতে আলো ছড়ানোর সুবাদে লামিনে ইয়ামালের বাজারদরও তরতরিয়ে বাড়ছে। জানা গিয়েছে, কিলিয়ান এমবাপের পরিবর্ত হিসেবে পিএসজি তাকে চাইছে। এরজন্য ২০ কোটি ইউরো খরচ করতেও রাজি প্যারিসের ক্লাবটি।