দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের সুফল আশা করতে পারেন। শেয়ার বা ফাটকায় চিন্তা করে বিনিয়োগ করুন। ব্যবসায় ... বিশদ
সন্তানের বাবা-মা, দু’জনের পরিচয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতারা অভিজিৎবাবুর বাঙালিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আপনার মারাঠি পরিচয়ের দিকে ইঙ্গিত করে। তাঁকে যেন রাজনৈতিক শত্রুও মনে করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার মত কী?
কে কী বলছেন, তা আমি জানি না। তাঁরা কী ইঙ্গিত করতে চাইছেন, তাও জানি না। তবে এটা সত্যি, আমি যেহেতু মারাঠি তাই জিনগত ভাবে অভিজিৎ তো অর্ধেক মারাঠি অর্ধেক বাঙালি। অভিজিতের জন্ম মহারাষ্ট্রে হলেও, ওর দেড়-দু’মাসের মাথায় ওকে নিয়ে কলকাতায় চলে আসি। ওর সঙ্গে আমিও। ও কখনও মহারাষ্ট্রে থাকেনি। বছরে কখনও এক-দু’বার সেখানে গিয়েছে। কিন্তু ওর বড় হওয়াটা পুরোটাই কলকাতাতে। এখানে জয়েন্ট ফ্যামিলি। ঠাকুর্দা, ঠাকুমারা ছিলেন। তাঁদের সংস্পর্শেও ওর বড় হওয়া। তাই মননে, শিক্ষায় বা সাংস্কৃতিকভাবে অভিজিৎ পুরোপুরি বাঙালি।
অমর্ত্য সেন যখন অর্থনীতিতে নোবেল পান, তখন নিন্দুকরা প্রশ্ন করেছিলেন, এতে দেশের অর্থব্যবস্থায় কি সুদিন ফিরবে? তিনি তো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান, সেখানেই থাকেন। অভিজিৎবাবুর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তাঁর নোবেল জয়ে সাধারণ মানুষের কী উপকার হবে, সেই প্রশ্ন একটা অংশ থেকে উঠছেই...
(প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ থেমে ভ্রু কুঁচকে রইলেন। তারপর হেসে অর্থনীতির এই অধ্যাপিকা জানালেন) তাহলে অমর্ত্যবাবুর প্রসঙ্গেই আসি। তাঁর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বা সম্পর্ক ভালো। তবে, এই তথ্য আমরা প্রায় সবাই জানি, উনি নোবেল পুরস্কারের অর্থ বেশিরভাগটাই দান করছেন প্রতীচী ট্রাস্টে। সেই ট্রাস্ট অনেক ধরনের কাজ করে। গরিব ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার উন্নতি করার জন্য তারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে। এতে তো তাদের সরাসরিই উপকার হচ্ছে। এবার অমর্ত্যবাবু বা কোনও নোবেল বিজয়ী যদি তাঁর পুরস্কারমূল্য দু’আনা, দু’আনা করে সবার মধ্যে ভাগ করে দেন, তাহলে আমার মনে হয় না, কারও কোনও উপকার হতো বা হবে। তবে, অভিজিৎও যদি তার পুরস্কারমূল্য এ ধরনের কাজে লাগায় আমি খুশিই হব।
ঠিক পুরস্কারের নগদ অর্থ নিয়ে নয়, তাঁর গবেষণার তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক দিকটি নিয়ে প্রশ্ন করছেন কেউ কেউ। আপনি তাঁর মা এবং নিজে একজন অর্থনীতিবিদ। এর ব্যাখ্যা কী?
প্রায়োগিক এবং তাত্ত্বিক দু’টি দিক থেকেই লাভবান হবে সাধারণ মানুষ। অভিজিতের গবেষণালব্ধ তত্ত্ব নিয়ে তো ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরী ইতিমধ্যেই কাজ করছেন। ওরা দু’জনেই কাজের পদ্ধতিটা ডিজাইন করেছেন। সেটা তো এই পশ্চিমবঙ্গেই হচ্ছে। এই কাজগুলি পরে অবশ্যই কাজে লাগবে। গরিবেরই লাভ হবে এতে। এই ধরনের কাজগুলি থেকে বোঝা যায়, দারিদ্র্য উন্নয়নে কেমন প্রকল্প নিতে হবে, কীভাবে তা রূপায়ণ করতে হবে। সরকারি অর্থ যদি সঠিকভাবে ব্যয় না হয়, তাতে গরিবের কোনও উপকার হয় না। সরকার একটা প্রকল্প চালু করে বলতেই পারে, আমরা গরিবদের ভালো করব। কিন্তু তা যে হয়নি, সেটা তো আমাদের ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারছি।
ওরা দু’জনেই যে কাজটা করছে সেটা হল, কোনও নীতি এখানে কার্যকর হবে কি হবে না, তা জানার চেষ্টা। অনেক সময়ই সরকার একটা প্রকল্প চালু করে। কিন্তু তা থেকে আশানুরূপ সুফল মিলছে না দেখে, সরকার সেটা একটা সময় বন্ধ করে দেয়। সেই প্রকল্প ব্যর্থ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। কিন্তু সরকার এটা জানার চেষ্টা কখনও করে না যে প্রকল্পটি কেন ব্যর্থ হল, কী কী পরিবর্তন করা হলে তা সত্যিই কার্যকর হতে পারত। তাই এই দিকগুলি জানার চেষ্টা যে ওরা করছে, এতে পরবর্তীকালে অবশ্যই সুফল মিলবে।
শুধু অর্থনীতি নয়, আপনি নারী অধিকার নিয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। অভিজিৎবাবুর প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে যে বিভিন্ন আলোচনা, জল্পনা হচ্ছে, তা নিয়ে সেই জায়গা থেকে কোনও মন্তব্য করতে চাইবেন?
(কিছুক্ষণ থেমে থাকার পর) কাকে নিয়ে বলব, অরুন্ধতীকে নিয়ে? খুবই ভালো মেয়ে। আমার খুব প্রিয় মেয়ে। প্রকৃত বুদ্ধিমতী এবং ভালো বলতে যা বোঝায়, অরুন্ধতী ঠিক তাই। ওর ভালোবাসার ক্ষমতা অনেক বেশি ছিল। আমাকে ভালোবাসত, আমিও ওকে খুব ভালোবাসতাম। এখনও নিশ্চয়ই ভালোবাসি। হঠাৎ করে কী হল, কোনও মতভেদ ছিল কি না, তা জানি না। কিন্তু আমার কাছে দুঃখের কথা, ডিভোর্সটা হয়েছিল। কারণটা আমার কাছে আজও অজানা। আমার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। ও নিজেও আমেরিকায় কাজ নিয়ে খুবই ব্যস্ত থাকে। এখানে ওর মা-বাবা রয়েছে। সেখানে কখনও কখনও আসে।
ওর দ্বিতীয় স্ত্রী এস্থারকেও আমি খুবই ভালোবাসি। ওরা একসঙ্গে অনেকদিন কাজ করছে। ও আগে অভিজিতের ছাত্রী ছিল। পরে ভালো বন্ধুও হয়ে ওঠে। ন’য়ের দশকে ও কলকাতায় যখন এসেছিল, তখন আমাদের বাড়িতেও আসে। ভালো মেয়ে। আসলে বিয়ে, ডিভোর্স এগুলো এতটাই ব্যক্তিগত বিষয় যে একজন মা হয়েও নাক গলানো যায় না বলে আমি মনে করি। আমার প্রশ্নে যদি ওরা বলত, এটা আমাদের ব্যাপার! তাই, কেন এটা করেছ, এসব প্রশ্ন নিয়ে অন্তত আমাদের বাড়িতে কোনও তর্কাতর্কি করিনি। এটা নিয়ে নীতিশিক্ষা দেওয়া আমার কাজ নয়, আমি দিইওনি। কারণ, ওদের যথেষ্ট বয়স হয়েছিল। বোঝারও ক্ষমতা ছিল। তবে, দ্বিতীয় বিয়েটা সুখের হয়েছে, তাতে আমি খুশি। আর, পুরস্কারটা শুধু অভিজিৎ না পেয়ে দু’জনেই পেয়েছেন বলে আমি বেশি খুশি।
কবীরকে নিয়ে কিছু বলবেন?
ওকে নিয়ে আর কী বলি! ও আমার নাতি। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ হল কবীরের মৃত্যু। ওই দেশেই ঘটনাটা ঘটেছে। কেন হল, কীভাবে হল, সেটা আমি জানি না। সত্যি কথা বলতে, ওর বাবা-মাও বিষয়টা বুঝতে পারেনি। মৃত্যুর কারণটাও জানতে পারিনি। হঠাৎ ওকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে, এটা আমাদের সাংসারিক বিষয়। এর বেশি আর কিছু বলতে চাই না। অভিজিৎ আর এস্থার দু’জনে ভালোভাবে সংসার করছে, এতেই আমি খুশি।
সহযোগিতায় স্বাগত মুখোপাধ্যায়