গত পাঁচ বছর ধরে আমেরিকার আটলান্টায় থাকেন পরমা রায় বর্ধন। তিনি ভরতনাট্যম শিল্পী। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই নাচ নিয়েই তাঁর খ্যাতি। ভরতনাট্যমে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল চার বছর বয়সে। কলকাতার কাছেই উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহে শৈশব কেটেছে পরমার। ছোটবেলায় ব্যারাকপুরে কত্থক শিক্ষক প্রদীপ্ত নিয়োগীর কাছে ভর্তি হন কত্থক শিখতে। কিন্তু পরমার ভরতনাট্যমে আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। শুরু হয় ভরতনাট্যমে প্রশিক্ষণ। এখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে ধ্রুপদী নৃত্যের নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেকে মেলে ধরেছেন পরমা। সফটওয়্যার ইঞ্জিয়ারিং পাশ করেও বেছে নিয়েছেন নাচকে। বিয়ের পর জর্জিয়ার আটলান্টা শহরে গিয়ে সেখানেই শুরু করেন নাচের অনুষ্ঠান। দেশীয় সংস্কৃতিকে বিদেশের মঞ্চে প্রতিষ্ঠা করা ও পাশ্চাত্যের দর্শককে সেই স্বাদ উপভোগ করানোই এখন পরমার পেশাগত দায়িত্ব। এতদিনের অভিজ্ঞতায় তিনি দেখেছেন, পাশ্চাত্যের দর্শকরা ভারতীয় এই সংস্কৃতিকে বিশেষ পছন্দ করেন। সম্প্রতি জন ক্রিকস ইন্টারন্যাশানাল ফেস্টিভ্যালে তিনি ‘কন্নড় থিল্লানা’ পরিবেশন করেন। এই প্রসঙ্গে পরমা বলেন, ‘মার্কিন মুলুকে বিভিন্ন কমিউনিটির মধ্যে আমার নৃত্য খুবই প্রশংসিত হয়েছে। বৃহৎ পরিসরে, পুরো মঞ্চ জুড়ে ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যের একক পরিবেশনা কীভাবে সম্ভব, তা দেখে দর্শকরা খুবই আশ্চর্য হয়েছেন।’
যশোদা ও কৃষ্ণ— মা ও ছেলের সম্পর্ক নিয়ে তাঁর উপস্থাপনা অবাক করেছে পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি মহলকে। এই নৃত্য তিনি পরিবেশন করেন ‘কব ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল’-এ। একের পর এক আন্তর্জাতিক মঞ্চে তিনি পরিবেশন করেছেন ধ্রুপদী নৃত্য। পেয়েছেন প্রচুর প্রশংসা। পরমার ছবি প্রকাশিত হয়েছে খ্যাতনামা মার্কিন দৈনিক ও পত্রিকায়। ইন্ডিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান কালচারাল কাউন্সিল এবং ইউএস আর্ট কাউন্সিলে পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও সম্মান।
নৃত্য পরিবেশন করার জন্য পরমা আমন্ত্রণ পেয়েছেন ‘ইউনেস্কো’-র আন্তর্জাতিক কাউন্সিল অব ডান্স থেকেও । বিদেশের মাটিতে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির এই ধারা বজায় রাখতে তিনি স্কুল চালু করতে চান। আসন্ন দুর্গাপুজোয় ২০ জন নৃত্যশিল্পীকে নিয়ে বিদেশের মাটিতে পরমা মঞ্চস্থ করতে চলেছেন নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’।