পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
পীযূষ কান্তি সরকার, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, হাওড়া
গত দশ বছরে প্রায় পনেরোটি সর্বভারতীয় পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিশাল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা সর্বত্রই সরকার নিজ দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার ত্যাগ করে বেসরকারিকরণের দিকে ঝুঁকছে। এই বছরের নিট পরীক্ষা তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। ২০১৪ এবং ২০১৭-য় সেনানিয়োগের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়। ২০১৬ ও ২০১৭ সালেও নিট পরীক্ষার প্রশ্ন-ফাঁস নিয়ে হইচই শুরু হয়। তবে এবছর বেনিয়ম ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। সরকারি প্রশ্রয়ে উচ্চবিত্তদের জন্য অর্থ-উৎকোচের বিনিময়ে মেধা-সংরক্ষণ চালু করার প্রবণতাই এর জন্য দায়ী।
সোহিনী রায়চৌধুরী, শিক্ষিকা
২০২৩,আগস্ট মাস। সেন্ট্রাল টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট। সেন্টার সিবিএসই বোর্ডের স্কুল। পরীক্ষার হল-এ ঘড়ি নেই। এদিকে পরীক্ষার্থীদেরও ঘড়ি পরা বারণ। কিন্তু দেখা গেল, একটি মেয়ের হাতে ঘড়ি। ইনভিজিলেটর তাকে নীচের ঘরে ঘড়িটা রেখে আসতে বলেন। মেয়েটি হাতঘড়ি সমেতই ফিরে এল। নীচের ম্যাডামরা নাকি বলেছেন, ‘ওতে অসুবিধা নেই।’ কেন একজনের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হল না? মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করাও হয়নি। এদিকে টাকাপয়সাও কাছে রাখা যাবে না। জলের বোতলের লেবেল ছিঁড়ে ফেলতে হবে। বাইরে নিয়মের এত কড়াকড়ি, অথচ ভিতরে এত শিথিলতা? কোথাও পরীক্ষার উপযোগী ব্যবস্থাপনার অভাব, কোথাও আবার নিয়ম পালনে ঔদাসীন্য। এসব থেকেই বোঝা যায়, এই ধরনের পরীক্ষার মান কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে।
রূপক পাল, স্নাতকোত্তর ছাত্র, কোন্নগর
এখন পরীক্ষার নামে নতুন মাথামুন্ডুবিহীন শিক্ষানীতি, কোচিং সেন্টার, সিন্ডিকেট-দালাল, প্রশ্ন ফাঁস, কালো টাকার ‘অ্যাসিড বৃষ্টি’, ফর্ম ফি-র নামে তোলাবাজি শুরু হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। কারও কারও থেকে বিভিন্ন উপায়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আত্মসাৎ করে তাদের স্বপ্নের প্যানেলকে দুর্নীতির দোহাইয়ে ক্যানসেল করার খেলা চলছে। বাস্তবে গোটা দেশেই রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখন দুর্নীতি। ভয় হয়, ভবিষ্যতে ‘ডিজিটাল ভারত’ ভালো ডাক্তার, শিক্ষক, গবেষক পাবে তো?
সমীরণ রায়, স্নাতকোত্তর ছাত্র
নিট-এ দুর্নীতি, ইউজিসি নেট পরীক্ষা বাতিল— এগুলোই বর্তমানে সবথেকে বড় খবর। যেসব সংস্থা পরীক্ষা নেয় তাদের বিরুদ্ধেও ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ। সঠিক সময়ে পরীক্ষা না নেওয়া, ঠিকঠাক রিপোর্ট পেশ না করা, সঠিক সময়ে রেজাল্ট আউট না করা ইত্যাদি। ভালো প্রস্তুতি নিয়ে সৎপথে সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করা তাহলে কি অপরাধ? উচ্চশিক্ষা নিয়ে ছেলেখেলা করা হচ্ছে। সর্বভারতীয় পরীক্ষা সম্পূর্ণরূপে নিম্নমানের হয়ে পড়ছে এবং বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে বলেই আমার মনে হয়।
বিপক্ষে
অরিজিৎ লস্কর, দ্বাদশ শ্রেণি, আগরপাড়া
সাম্প্রতিক সময়ের দিকে চোখ রাখলে নিট-এর প্রশ্ন ফাঁস ও ইউজিসি নেট বাতিলের নিরিখে মনে হওয়াটা স্বাভাবিক যে সর্বভারতীয় পরীক্ষার মান কমছে। কিন্তু তবুও সর্বভারতীয় জয়েন্ট প্রবেশিকা (জেইই মেইন ও অ্যাডভান্সড) কিংবা বিভিন্ন সর্বভারতীয় সরকারি চাকরির পরীক্ষা— বিশেষত ইউপিএসসি, এনডিএ এসবে কখনও এমন নজির দেখা যায়নি। তাই মাত্র দু’-একটি পরীক্ষা দিয়ে সামগ্রিক সর্বভারতীয় পরীক্ষা ব্যবস্থার মান ক্রমশ কমে যাওয়ার বক্তব্যটিকে সমর্থন করতে পারলাম না।
তারাপদ পাল, প্রাক্তন শিক্ষাকর্মী
সর্বভারতীয় পরীক্ষা হল দেশের সমস্ত ছাত্রছাত্রীর মধ্যে সেরাদের বেছে নেওয়ার মাধ্যম। বিষয়ের উপর জ্ঞানের গভীরতা যাদের যত বেশি, তারাই এগিয়ে থাকে এই সমস্ত পরীক্ষায়। সময় যত এগিয়েছে সর্বভারতীয় পরীক্ষাগুলি হয়েছে কঠিনতর। প্রশ্নের ধরনেও এসেছে প্রচুর পরিবর্তন। কোনও কোনও পরীক্ষায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রশ্নের মান সর্বভারতীয় স্তরের কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিলেও সামগ্রিকভাবে প্রশ্নপত্রের মান আরও উন্নততর-ই হচ্ছে। যা এই সর্বভারতীয় মাধ্যমগুলিকে আরও নিখুঁত করে তুলছে।
মোম ভট্টাচার্য, প্রধান শিক্ষিকা
এমন কোনও মাধ্যম নেই যা ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে। তাই বলে একটা ভ্রান্ত ঘটনাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থাপন করে গোটা মাধ্যমটাকেই ভ্রান্ত বলে চিহ্নিত করা ঠিক নয়। সর্বভারতীয় পরীক্ষার ক্ষেত্রেও অবশ্যই ত্রুটি হয়েছে। কিন্তু তাই বলে তার মান কমে যাচ্ছে বলা ঠিক নয়। যদি মান এতই কমে যেত তাহলে পরীক্ষাগুলো গুরুত্বহীন হয়ে যেত। শিক্ষক ও ছাত্র উভয়েই নিজের উজাড় করে দেয় এই ক্ষেত্রে। ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয় যে মাধ্যমের ভিত্তিতে, তাকে এককথায় ভ্রান্ত বলা কখনও যুক্তিযুক্ত নয়। পরীক্ষার গুরুত্ব যেমন ছিল তেমনই আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। পরিকাঠামোর দিকে আরও কড়া নজর দিতে হবে।
অনন্যা দে, স্নাতক স্তরের ছাত্রী
সর্বভারতীয় কিছু পরীক্ষার ক্ষেত্রে নানা ত্রুটি বিচ্যুতির ঘটনা সংবাদমাধ্যম মারফত রোজই উঠে আসছে। সেইসব খবর পড়ে পরীক্ষা ও তার মানের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করছি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য। সম্প্রতি ফ্যাশন ডিজাইনিং সক্রান্ত দুটো সর্বভারতীয় পরীক্ষা দিয়েছি (এনআইডি ও এনআইএফটি)। পরিকাঠামোর কোনও ত্রুটি তো ধরাই পড়ল না, বরং বেশ মুগ্ধ হলাম পরীক্ষার সুন্দর পরিচালনা দেখে। আমার ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত কোনও ভ্রান্তি হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে যদি তা হয়েও থাকে, তবু পরীক্ষাটাকেই গুরুত্বহীন বা তার মান কম বলে দাগিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।