পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
অল্প বয়স থেকেই রান্নাবান্নায় ভারি মনযোগী মিথিলা রায়। তাই কাজের সুযোগ খোঁজার সময় হোম ডেলিভারি খোলার কথাই ভেবেছিলেন তিনি। পাড়ায় কয়েকটা বাড়িতে দু’বেলার রান্না পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে যে কাজটা শুরু হয়েছিল সেটাই বড়সড় হেঁশেলে এসে দাঁড়িয়েছে। মিথিলার রান্নার কদর এখন সর্বত্র। তবে গতানুগতিক পথে হেঁটে রেস্তরাঁ তিনি খোলেননি। ক্লাউড কিচেন খুলে অনলাইন অর্ডার নিয়ে তা ডেলিভারি করে মিথিলা আজ রীতিমতো রোজগেরে।
মিথিলার মতো আপনারাও কি রান্নায় পারদর্শী? অথচ সময় থাকতে হোটেল ম্যানেজমেন্টের মতো পরীক্ষা দেওয়া হয়নি? তার মানে কিন্তু এই নয় যে রান্নাকে কেন্দ্র করে রোজগারের উপায় বন্ধ হয়ে গেল। ক্লাউড কিচেনের মাধ্যমে আপনার গুণকে এক ভিন্ন মাত্রা দিতে পারেন আপনিও। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন মিথিলা রায়।
শিক্ষার প্রথম পাঠ
প্রথমেই বুঝতে হবে ক্লাউড কিচেন জিনিসটা কী? এটি পুরোদস্তুর রেস্তরাঁর কিচেন, যেখানে শুধুমাত্র অনলাইন খাবার অর্ডার করা যায়। রেস্তরাঁর মতো বসে খাওয়া এখানে সম্ভব নয়। তাছাড়া বাদবাকি সব ক্ষেত্রেই ক্লাউড কিচেন আর রেস্তরাঁর কিচেনের একই রকম পরিচালনা।
এক্ষেত্রে কয়েকটা জিনিস প্রথমেই ঠিক করে নিতে হয়। নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে এবং থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটের সঙ্গেও যুক্ত হতে হবে। ওয়েবসাইট থেকে সহজে গ্রাহক খাবার অর্ডার দিতে পারবেন এমন ব্যবস্থা করুন। পেশাদারি কাউকে দিয়ে তৈরি করানো ভালো।
নানা ধরনের খাবারে সমৃদ্ধ একটা মেনু ঠিক করতে হবে। এই মেনু মাঝে মাঝেই বদল করতে হবে। এক্ষেত্রে অর্ডারটা খুব ভালো করে দেখুন। কোন খাবার জনপ্রিয় হচ্ছে তা থেকেই বুঝবেন। মেনু বদলের সময় জনপ্রিয় আইটেমগুলো যেন বাদ না চলে যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
ভালো কোনও শেফ দিয়ে রান্নার দায়িত্ব পরিচালনা করলে, প্ল্যানিংয়ে তাঁকে রাখলে বা উপদেষ্টা হিসেবে তাঁকে রেখে তাঁর মতামত গুরুত্ব দিয়ে শুনলে ক্লাউড কিচেনের অপারেশন ভালোভাবে করা যাবে।
মনে রাখতে হবে শখে রান্না করা আর ক্লাউড কিচেন খোলা এক জিনিস নয়। রান্না জানলেও প্রশিক্ষণ নিয়ে তবেই এই ব্যবসায় নামা ভালো।
লাইসেন্স জোগাড়
ক্লাউড কিচেন খোলার আগে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ লাইসেন্স করানো প্রয়োজন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এফএসএসএআই (ফিসাই) লাইসেন্স, জিএসটি রেজিস্ট্রেশন, হেলথ ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার ও ওয়াটার লাইসেন্স ইত্যাদি। ফুড কর্পোরেশনের সবুজ সঙ্কেত পেলে তবেই এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। এর জন্য দক্ষ পেশাদার ব্যক্তির সাহায্য নিন। আইনজ্ঞর সঙ্গে কথা বলুন। কোথাও কোনও গলদ রয়েছে কি না সেগুলো তিনি বুঝিয়ে দিতে পারবেন। এই লাইসেন্সগুলো পেতে অনেক সময় লাগে ফলে ক্লাউড কিচেনের মেনু এবং জায়গা নির্ধারণ করা হলে প্রথমেই লাইসেন্স জোগাড় করার কাজে লেগে পড়তে হবে। সময়সীমার মধ্যে লাইসেন্সগুলো সঠিকভাবে রিনিউ করানোর ব্যবস্থাও করতে হবে। এর জন্য আলাদা একটা বিভাগ রাখলে কাজে সুবিধে হবে।
ব্যবস্থাপনার খুঁটিনাটি
ক্লাউড কিচেনটা কোথায় খোলা হবে সেটা খতিয়ে দেখে ঠিক করতে হবে। কীভাবে করবেন? প্রথমে নিজের বাজেটটা ঠিক করুন। সেই মতো জায়গা খুঁজতে হবে। এক্ষেত্রে শহরের মধ্যে হতে হবে তা নয়। আবার খুব দূরে হলে খাবার দেওয়া নেওয়ায় সমস্যা হবে। ফলে সবদিক বিচার করে মোটামুটি কম বাজেটে কিচেনের অবস্থান ঠিক করুন।
আপনার মেনু অনুযায়ী সেই জায়গাটা সঠিক কি না সেটাও দেখতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি অল্পবয়সিদের কথা মাথায় রেখে মেনু করেন তাহলে একটা বয়স্ক মধ্যবিত্ত পাড়ায় নিজের কিচেন খুললে চলবে না।
আবার আপনার মেনুতে আমিষের ভাগ বেশি থাকলে অবাঙালি পাড়ায় কিচেন খুললে বিক্রি হবে না।
মেনু মোটামুটি নিরামিষ নির্ভর হলে বাঙালি মধ্যবিত্তরা তা অর্ডার করবে না। ফলে এই জিনিসগুলো ভেবে, একটা সমীক্ষা করে তবেই ক্লাউড কিচেনের স্থান বাছুন। মনে রাখবেন এলাকাভিত্তিক বিক্রিই বেশি হয়।
এরপরের পর্যায় হল জায়গার গুণগত মান। ক্লাউড কিচেন বলে তা ছোট, ঘিঞ্জি হলে কিন্তু খাবারের মান ঠিক রাখতে পারবেন না। ফলে একটু বড় জায়গা বাছুন। সেখানে জলের সরবরাহ ঠিক হয় কি না, সেটা দেখুন। আলাদা আলাদা করে বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি বসানোর জায়গা আছে কিনা দেখুন। জিনিসপত্র কাটা, ধোয়া, বাটার পর্যাপ্ত জায়গা রাখুন। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কাজ করা যাবে কিনা, একাধিক লোক একইসঙ্গে কিচেনে কাজ করতে পারবে কি না এই দিকগুলো খুব খুঁটিয়ে দেখে তবেই কিচেন নির্বাচন করুন।
খরচের খেয়াল
ক্লাউড কিচেন খুলতে চান, বাজেট সীমিত। সেক্ষেত্রে কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখুন। বৈদ্যুতিন যন্ত্রগুলো যেন নতুন হয়। তার পিছনে এককালীন খরচ করলে অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকবে। পুরনো মেশিনে ইলেকট্রিক বিল বেশি আসে, তার দেখভালের পিছনে খরচ বাড়তি হয়, ফলে নতুন ভালো মেশিন কিনুন।
একইসঙ্গে কিচেনের তাক, টেবিল, ক্যাবিনেট ইত্যাদিতে খরচটা কমিয়ে দিন। এগুলো সেকেন্ড হ্যান্ড কিনলেও ক্ষতি নেই। তবে জিনিস পুরনো হলেও তা যেন পরিষ্কার থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
এছাড়া ক্লাউড কিচেনে খুবই জরুরি হল অর্ডার নেওয়ার ব্যবস্থা। তার জন্য হাই স্পিড ইন্টারনেট ব্যবহার করুন। কর্মরত সকলের কাছে মোবাইল রাখুন এবং সেই নম্বরগুলো ওয়াবসাইটে, থার্ড পার্টিকে জানিয়ে দিন। এছাড়াও একজন লোক নির্দিষ্ট করুন যে শুধুই অর্ডার নেওয়ার কাজটাই করবে। তাকে ইন্টারনেটে দক্ষ হতে হবে, নম্র হতে হবে।
কর্মচারী রাখুন বাছবিচার করে। বিভিন্ন বিভাগে কাজ ভাগ করে ফেলুন। রান্না ও মেনু নির্ধারণের ক্ষেত্রে দক্ষ শেফের পরামর্শ নিন। বিজনেস ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত কাজের জন্য লোক রাখুন। জায়গাটার পরিচ্ছনতা বজায় রাখার দায়িত্ব দিন একদলকে। যাঁরা রান্না করবেন তাঁদের পরিচ্ছন্নতার দিকেও খেয়াল রাখুন। রান্নার মালপত্র কোথা থেকে কেনা হচ্ছে, কীভাবে তা কিচেন পর্যন্ত পৌঁছবে ইত্যাদির দিকে সতর্ক দৃষ্টি দিন। এইগুলো করতে পারলে ক্লাউড কিচেন চালানো কঠিন নয়। তবে নিজের প্যাশনটা এক্ষেত্রে বড় ব্যাপার। খেতে এবং খাওয়াতে ভালোবাসলে, খাবারের প্রতি প্রচণ্ড টান থাকলে এই ব্যবসায় সফল হওয়া সহজ হবে।