পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
দেবস্মিতা ঘোষ, কলেজ ছাত্রী
সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মগুলিতে প্রায়ই কোনও বিশেষ একটি বিষয় নিয়ে ট্রোলিং ব্যাপারটা সম্প্রতি একটু বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটা যদিও সেলিব্রিটিদের ক্ষেত্রে বেশি মাত্রায় দেখা যায়, তবুও এর কোপ আমাদের মতো সাধারণ মানুষের উপরও এসে পড়ে। আমি ট্রোলিং-এর সম্পূর্ণ বিরোধী। এর মধ্যে অনেক সময় হাসি, মজা অর্থাৎ কমেডি-র কনটেন্টও থাকে। কিন্তু এই ট্রোলিংকারীরা বেশিরভাগ সময়ই কোনও ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে নিজের মনগড়া কোনও কথা লেখে যা হয়তো একেবারেই মিথ্যে। কখনও কখনও এই ট্রোলিং কনটেন্ট এতটাই ঘৃণার হয় যার প্রভাব মারাত্মক। আবার কখনও কোনও মহিলার অসহায়তার সুযোগ নিয়ে কোনও গোপন ছবি বা ভিডিও ট্রোলিংকারীরা খারাপ কাজে ব্যবহার করে। আমি মনে করি, যত শীঘ্র সম্ভব সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ট্রোলিং ব্যাপারটাকে আইনত নিষিদ্ধ করা উচিত।
মিলিতা সমাদ্দার, ছাত্রী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
সমাজমাধ্যমে ভরপুর বিনোদনে ঠাসা বিভিন্ন বিষয় থাকে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ তাঁদের রুচি অনুসারে হাজারো বিষয় পোস্ট করেন। এই প্ল্যাটফর্মে প্রত্যেকের মত প্রকাশের অগাধ স্বাধীনতাও থাকে। সেই মত কখনও ইতিবাচক হয়, আবার কখনও হয় নেতিবাচক। তবে এমন বহু ব্যবহারকারী আছে, যারা সমস্ত শালীনতার সীমা অতিক্রম করে কদর্য মন্তব্য ছুড়ে দেয়। তাতে কারও মন বিষণ্ণ হলেও তাদের কিছু যায় আসে না। অনলাইন ট্রোলিং করে কারও মনে দুঃখ দিয়ে ঠিক কী আনন্দ পাওয়া যায়, তা আমার জানা নেই! তাই অনলাইন ট্রোলিং অবিলম্বে বন্ধ করা হোক।
স্নেহা সিংহ রায়, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, বর্ধমান রাজ কলেজ
ট্রোলিং এক রকমের সমালোচনা। কারও ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া, সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলা। সঠিকমাত্রায় কারও সমালোচনা করা সামাজিক দায়িত্ব সকলেরই। কথায় আছে, প্রশংসার ক্ষেত্রে উদার এবং সমালোচনার আগে সচেতন হওয়া একজন জ্ঞানীর পরিচয়। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে প্রত্যেকের জীবন সবার কাছেই খোলা একটি বইয়ের মতো। প্রত্যেক মুহূর্তে ভালো-খারাপ সবই সেখানে শেয়ার করা হয়। ফলে কোনও বিতর্কিত জিনিস হলেই তা নিয়ে ট্রোলিং হয় প্রচুর। তবে সচেতন সমালোচকের সংখ্যা সেখানে হাতেগোনা। কারও সম্পর্কে বা কোনও বিষয়ে সবটা না জেনে উল্টোপাল্টা কিছু বলে দেওয়াটাই যেন এখন ট্রেন্ড। ফলস্বরূপ সমালোচিত ব্যক্তি অপমানিত যেমন হন, নিজেকে ভাবতে থাকেন সমাজচ্যুত, অনেকে আত্মহত্যার কথাও ভাবেন।
সহেলী পালিত, স্নাতকোত্তর ছাত্রী
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া একটি শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করে থাকি, কিন্তু এই সমালোচনা যখন কোনও ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান বা আক্রমণ করার জন্য করে, সেটি ট্রোলিং-এ পরিণত হয়। এছাড়াও আজকালকার দিনে ট্রোলিং-এর শিকার হচ্ছে বহু মহিলা। তাদের দেহগঠন বা রূপ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। যেটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করছে। এটা তো মুক্তচিন্তার আদানপ্রদান নয়।
বিপক্ষে
কুশল রায়, শিক্ষক
ট্রোলিং এর ফাঁদে পড়ার ভয়ে নিজেকে সামলে চলার অভ্যেস যদি গড়ে ওঠে মন্দ কি? সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু পোস্ট করার আগে একটু ভাবনাচিন্তা করে নেওয়া দরকার। হাস্যকর পোস্টেই ট্রোলড বেশি হতে হয়। এছাড়া ট্রোল করা মনুষ্যসমাজে নতুন নয়। খেলায় দুয়ো, হেরো, ঘুড়ির লড়াইয়ে ভোকাট্টা— এই সব স্লোগান নেটযুগের অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান। বিখ্যাত মানুষের কার্টুন আঁকাও তো এক ধরনের ট্রোলিং। সে যুগের কবিগানের লড়াইও তো এ যুগের ভাষায় ট্রোলিং। তাই শালীনতা বজায় রেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় কাউকে ট্রোল বা ঠাট্টা করাটাকে নিষিদ্ধ বলে দেগে দেওয়া যায় না বলেই মনে হয়।
অর্কতনু মুখোপাধ্যায়, স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ
ভালো-খারাপ বা দোষ-গুণ নিয়েই সমাজ গড়ে উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিং-ও তার ব্যতিক্রম নয়। অনেক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে কোনও ব্যক্তিবিশেষ বা জাতিবর্গকে হীন সাব্যস্ত করার জন্য নানাপ্রকার কুরুচিকর মন্তব্য করে থাকেন। সোশ্যাল মিডিয়াকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করে তাতে যা ইচ্ছে তাই লটকে দেন। এমন কিছু অর্বাচীনের কৃতকর্মের সমালোচনার জন্যই ট্রোলিং-এর অস্তিত্ব একান্ত প্রয়োজন, সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত নয়। কিন্তু, সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ যদি নিছক বিনোদনের বা আত্মতুষ্টির উদ্দেশ্যে ট্রোলিং-এর মাধ্যমে কোনও নিরীহ মানুষের চরিত্রে বা ভাবধারণায় নির্মম আঘাত হানে, তাহলে সেই ট্রোলার কঠোর শাস্তিযোগ্য। সেক্ষেত্রে ট্রোলারের অধিক সচেতনতা কাম্য।
বিনয় হালদার, থিয়েটার কর্মী
বিতর্ক আবহমানকাল থেকে আমাদের দৈনন্দিন সঙ্গী। সে কোনও বিখ্যাত ব্যক্তিই হোক বা সাধারণ মানুষ, ভালো হোক বা মন্দ, প্রশংসার সঙ্গে বিতর্কের সহাবস্থান। সেই হিসেবের খাতা থেকে নাম বাদ পড়ে না রবীন্দ্রনাথেরও! এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বহু মানুষকে ট্রোলিং-এর জন্য হেনস্থা হতে হয় আমরা জানি। কিন্তু এমনও কিছু কাজ মানুষ করছে যেগুলোর প্রতিবাদ করার যোগ্য। সে প্রতিবাদকে যদি ট্রোলিং-এর রূপ দিই, তবে এই অস্থির সময়ে ট্রোল অতি গুরুত্বপূর্ণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় রিলস, ভ্লগের রমরমায় মানুষ হারিয়ে ফেলছে নিজেদের রুচি। নিত্য কর্ম দেখাতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হয়ে উঠছে ক্যামেরার উপযোগী মেকি, মিথ্যুক। এসবের যদি প্রতিবাদ না করা হয় সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে, এর অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি ক্রমশ বেড়ে উঠবে। জানি অতি ক্ষুদ্র, তবুও ট্রোলিং-এর মাধ্যমে সীমার একটা প্রাচীর থাকা দরকার। একদিন তো মানুষ বুঝবে, সীমা অতিক্রম করা ঠিক হয়নি ।
হরিসাধন পাল, ব্যবসায়ী
ট্রোলিং নিষিদ্ধ করা মানে ব্যক্তিস্বাধীনতায় বাধা দেওয়া। সমাজের মানুষের বিভিন্ন মতামত থাকে এবং সবার মতামতের জায়গা থাকা উচিত। ট্রোলিং অনেক সময় সমালোচনার একটি রূপ, যা কখনও কখনও প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। এটি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা এবং সচেতনতা তৈরি করে। তবে ট্রোলিং যখন কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর হয়রানি বা অপমানজনক হয়ে ওঠে, তখন তা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। তা বলে ট্রোলিংকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা নয়, বরং এর নেগেটিভ দিকগুলোকেই নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।